চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া ও অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ খেলছে বলে মন্তব্য করেছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্র।
শনিবার গ্লোবাল টাইমস এক নিবন্ধে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন আচরণ দুই দেশের স্বার্থে আঘাত হানার পাশাপাশি চীনা উদ্ভাবনের গতি বাড়িয়ে দেবে।
এর আগে চিপ বিশ্লেষক সাইট ‘সেমিঅ্যানালাইসিসের’ এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র চীনে উচ্চমানের চিপ বিক্রির নীতিমালা কঠোর করার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এনভিডিয়া নতুন এআই চিপ উন্মোচনের পরিকল্পনা করছে, যা চীনা বাজারের কথা বিবেচনায় রেখে তৈরি।
গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, এনভিডিয়া ও মার্কিন সরকারের মধ্যে গত কয়েক দফায় যা যা ঘটেছে, তা হল একটি শীর্ষ প্রযুক্তি কোম্পানির গল্প, যারা বৈধভাবে ব্যবসা করার পরও মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কঠোর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মুখে পড়ছে এবং তারপরও টিকে থাকা ও উন্নয়নের স্বার্থে সম্ভব সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
“একটি বাণিজ্যিক কোম্পানির জন্য এটা মোটেও মজার কোনো বিষয় নয়, বরং দুঃখজনক।”
যুক্তরাষ্ট্রের যুগান্তকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনের সামরিক বাহিনী যাতে শক্তি বাড়াতে না পারে, সেজন্যই এসব নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে ওয়াশিংটন। কিন্তু তাতে কেবল চীন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে গ্লোবাল টাইমসের নিবন্ধে।
“মার্কিন সরকার যা করেছে, তাতে স্বাভাবিক ও বৈধ ব্যবসার মধ্যেও ভীতি এবং উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”
এআই চিপ বাজারে রাজত্ব করা এনভিডিয়া গত মাসে বলেছে, নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের দুটি ‘হাই-এন্ড’ এআই চিপ ‘এ৮০০’ ও ‘এইচ৮০০’ বিক্রিতে ধাক্কা লাগবে, যা তারা গত বছর আরোপ করা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল।
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় বিভিন্ন কম্পিউটিং চিপে কতটুকু সক্ষমতা দেওয়া যাবে তার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি সুযোগ আছে, যেখানে লাইসেন্স নিয়ে চীনে চিপ রপ্তানির অনুমতি মিলতে পারে, যাকে বিশ্লেষকরা বলছেন ‘গ্রে জোন’।
সেমিঅ্যানালাইসিস বলেছে, ১৬ নভেম্বরের মধ্যে ‘এইচজিএক্স’, ‘এইচ২০’, ‘এল২০’, ‘পিসিএলই’ ও ‘এল২ পিসিএলই’ নামে নতুন চিপ বাজারে আনার ঘোষণা দিতে পারে এনভিডিয়া, যেগুলোতে থাকবে কোম্পানির বিভিন্ন নতুন ফিচার।
তবে এর কম্পিউটার সক্ষমতা কমে আসতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে সেমিঅ্যানালাইসিস। এ বিষয়ে রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি এনভিডিয়া।
গ্লোবাল টাইমস বলেছে, মার্কিন নীতিমালা মেনেই ব্যবসা করার ‘বিভিন্ন উপায়’ খুঁজে দেখছে কোম্পানিগুলো।
“বিষয়টি সহজ, ওয়াশিংটন যতদিন চীনের ‘গলা চেপে ধরার’ লক্ষ্যে কাজ করবে, ততদিন এই ‘ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান’ খেলা অব্যাহত থাকবে।”
পত্রিকাটি লিখেছে, “যুক্তরাষ্ট্র যেসব আইনি ‘ফাঁকফোকড়’ বন্ধ করার চেষ্টা করছে, তা কখনও সুরাহা হবে না। তারা অযথাই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে। আর নিজস্ব হাইটেক শিল্পের উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে বাধ্য হবে চীন।”