Published : 28 Jan 2024, 04:47 PM
ভিনগ্রহের প্রাণীদের পৃথিবীতে আক্রমণ চালানোর প্রেক্ষাপটে তৈরি সাই-ফাই সিনেমা ‘ইন্ডিপেনডেন্স ডে’তে যুক্তরাষ্ট্রের যে বীরত্বগাঁথা দেখানো হয়েছিল, তা সম্ভবত ভুলে যাওয়াই ভালো। কারণ বাস্তবে এখনও এলিয়েন বা মহাকাশের কোনো রহস্যময় হুমকি মোকাবেলার মতো সক্ষম হয়ে ওঠেনি দেশটি।
নতুন এ অনুসন্ধান উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ বা ‘ডিওডি’ প্রকাশিত এক গবেষণায়, যেখানে ‘আনআইডেন্টিফায়েড অ্যানোমেলাস ফেনোমেনা’ বা ‘ইউএপি’ সম্পর্কিত এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে। তবে এ ধরনের রহস্যময় ঘটনা মানুষের কাছে ‘ইউএফও’ নামেই বেশি পরিচিত।
ডিওডি’র ‘অফিস অফ ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিওডি ওআইজি)’র তথ্য অনুসারে, এমন ব্যখ্যাহীন ঘটনাগুলো ‘এলিয়েন স্পেসশিপ’ বা মানবসৃষ্ট স্পেসক্রাফট যাই হোক না কেন, এ মুহূর্তে আকাশে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলার সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই মার্কিন সরকারের কাছে।
ইন্সপেক্টর জেনারেল রবার্ট পি. স্টর্চ বলছেন, বর্তমানে ‘ইউএপি’ সামলানোর মতো কোনও সমন্বিত পদ্ধতি নেই। একে তুলনা করা যায়, একাধিক ব্যক্তির একজোট হয়ে ধাঁধা সমাধান চেষ্টার সঙ্গে, যেখানে সকলে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বণ করলেও একে অপরের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদান করেন না। আর এর তথ্যগুলোও একইসঙ্গে বিভ্রান্তিকর ও অপর্যাপ্ত।
এ সমন্বিত পদ্ধতির ঘাটতি নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ‘ডিওডি’র কর্মকর্তারা। কারণ ‘ইউএপি’ আসলে যেকোনও কিছুই হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা, বিদেশী নজরদারি ডিভাইস বা বুদ্ধিমান কোনো এলিয়েন।
ডিওডি ওআইজি ধারণা প্রকাশ করেছে, এমন অনিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যেও হুমকি হতে পারে।
এমন এক কাল্পনিক পরিস্থিতি, যেখানে যুদ্ধবিমানের আশপাশ দিয়ে অজানা কিছু উড়ছে। আর সেটা কী, তা না বুঝলে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে পাইলটদের নিরাপত্তা বা নিজস্ব আকাশসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে?, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গবেষণা ও প্রযুক্তি সাইট ‘স্টাডিফাইন্ড’।
“ডিওডি কীভাবে ‘ইউএপি’কে ব্যাখ্যা করছে, সে বিষয়ে জনসাধারণের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজেদের কাজ সম্পর্কে আমেরিকান নাগরিকদের কাছে যতটা সম্ভব স্বচ্ছ থাকতে একটি অব্যাখ্যামূলক সারাংশ প্রকাশ করছি।” — ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে লিখেছেন স্টর্চ।
“ইউএপি মোকাবেলায় ডিওডি’র সমন্বিত পদ্ধতির অভাব সামরিক বাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। ইন্সপেক্টর জেনারেলের কার্যালয় নিজস্ব অনুসন্ধানে খুঁজে পেয়েছে, ‘বড় পরিসরে ইউএপি’র মতো ঘটনা ব্যাখ্যা করার মতো সমন্বিত পদ্ধতি নেই ডিওডি’র কাছে।”
এ সমস্যা মোকাবেলার জন্য ১১টি পরামর্শ দিয়েছে ডিওডি ওআইজি।
এর মধ্যে একটি পরামর্শ হল— এমন এক নীতিমালা তৈরি, যা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বিভাগ ও তাদের বিভিন্ন পন্থাকে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টার মধ্যে নিয়ে আসবে। স্টাডিফাইন্ডস একে ব্যাখ্যা করছে, এমন একটি ‘প্লেবুক অনুসরণ করার সঙ্গে, যেখানে সকলেই একজোট হয়ে কাজ করছে।
এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অঙ্গসংস্থা ‘আন্ডার সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ফর ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি’, ‘ডিরেক্টর অফ দ্য অল-ডোমেইন অ্যানোম্যালি রেজুলিউশন অফিস’, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সেক্রেটারি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ’-এর প্রধানদের সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করার বিষয়টিও।
মার্কিন সরকারের কাছে ইউএফও (এখন ইউএপি বলা হয়) আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠছে। আর এর সঙ্গে সায়েন্স ফিকশনেরও কোনো সম্পর্ক নেই।
২০২৩ সালের অগাস্টে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সাম্প্রতিককালে মার্কিন সরকারের প্রকাশ করা বেশ কয়েকটি নথির মধ্যে কেবল একটি, যেগুলোতে গোটা বিশ্বের আকাশে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত সব ঘটনা নিয়ে আলোচনা রয়েছে।
সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি’র হত্যা ও উড়ুক্কু বস্তুর মধ্যে একটি উদ্ভট যোগসূত্র রয়েছে।
এ মূহুর্তে মার্কিন কর্মকর্তারা এমন প্রায় তিনশটি ইউএপি’র ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখছেন, যেগুলো সংঘটিত হয়েছে ২০১৯ সালের পর থেকে।
২০২৩ সালে প্রকাশিত এক জরিপে দেখা যায়, গোটা বিশ্বে যতগুলো ইউএফও দেখার ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ৯২ শতাংশই দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে।