সাম্প্রতিক আইনের পর নতুন এ নীতিমালার ঘোষণাকে কোম্পানিগুলোর ওপর ‘বাড়তি বোঝা’ বলে সমালোচনা করেছে ব্যবসায়িক দল ‘ডিজিটালইউরোপ’।
Published : 10 Dec 2023, 02:22 PM
বায়োমেট্রিক নজরদারির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা প্রযুক্তি ব্যবহার ও চ্যাটজিপিটি’র মতো এআইভিত্তিক সেবার পাশাপাশি এআই সম্পর্কিত নানা বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে নতুন এক অস্থায়ী চুক্তি করেছে ইউরোপ।
এ রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম পরাশক্তি হিসেবে এআই প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণকারী আইন প্রণয়নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেল ইইউ।
গেল শুক্রবার ইইউ’র বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্যে এ চুক্তি নিয়ে ১৫ ঘণ্টা আলোচনা চলে। আর এর আগের দিন বিষয়টি নিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টা বিতর্ক হয়েছিল দুই পক্ষের মধ্যে।
আসন্ন দিনগুলোয় এ চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করতে পারে দুই পক্ষ, যা পরবর্তীতে চূড়ান্ত আইনেও পরিণত হতে পারে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
“বৈশ্বিক মান নির্ধারণকারী অবকাঠামো হিসেবে নিজের ভূমিকা বুঝতে পেরে এমন অগ্রগামী অবস্থান নিয়েছে ইউরোপ। হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি, এটি একটি ঐতিহাসিক দিন,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন ইউরোপীয় কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন।
চুক্তির শর্ত অনুসারে, চ্যাটজিপিটি ও ‘জেনারেল পারপাস এআই সিস্টেম (জিপিএআই)’ এর মতো বিভিন্ন ফাউন্ডেশন মডেল বাজারে আনার আগে স্বচ্ছতা সংশ্লিষ্ট বাধ্যবাধকতা মানতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত নথি তৈরি, ইইউ’র কপিরাইট আইন মেনে চলা ও এআই প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত কনটেন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত সারাংশ প্রকাশ করা।
এ ছাড়া, পদ্ধতিগত ঝুঁকি থাকা বিভিন্ন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ফাউন্ডেশন মডেল মূল্যায়ন করার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে এ চুক্তিতে। পাশাপাশি, সেইসব ঝুঁকি মোকাবেলা, এর প্রতিকূলতা পরীক্ষা করা এমনকি গুরুতর কোনো ঘটনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশনের কাছে প্রতিবেদন প্রকাশের শর্তও রয়েছে এতে। রয়টার্স বলছে, এর মাধ্যমে ওই মডেলের সাইবার নিরাপত্তা ও দক্ষতার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করা হবে।
পদ্ধতিগত ঝুঁকি থাকা জিপিএআইয়ের নতুন নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে ইইউ’র ‘কোড অফ প্র্যাক্টিস’।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের সরকার কেবল অপরাধের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রে, সত্যিকারের বর্তমান বা পূর্ববর্তী হুমকিতে, সন্ত্রাসী হামলা রোধে, ও গুরুতর অপরাধে সন্দেহভাজন ব্যক্তি অনুসন্ধানের বেলায় জনসমক্ষে ‘রিয়েল-টাইম’ বায়োমেট্রিক নজরদারি চালাতে পারে।
এদিকে, মেধাভিত্তিক আচরণের সুযোগ কাজে লাগানো, ইন্টারনেট বা সিসিটিভি ফুটেজ থেকে চেহারার ছবি কেটে নেওয়া, মানুষের রাজনৈতিক, ধর্মীয়, দর্শন বিশ্বাস, যৌনাচার ও বর্ণ অনুমান করতে পারে এমন সামাজিক ও বায়োমেট্রিক শ্রেণিকরণ ব্যবস্থা রাখার মতো বিষয়গুলোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এ চুক্তিতে।
এ ছাড়া, ভোক্তাদের অভিযোগ জানানোর ও অভিযোগের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়ার অধিকারও দেওয়া হয়েছে এ চুক্তিতে। পাশাপাশি, যে কোনো নিয়ম লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত কোম্পানির জরিমানা হতে পারে ৮১ লাখ ডলার বা ইউরোপে কোম্পানির আয়ের দেড় শতাংশ থেকে প্রায় ৩৫ লাখ ডলার অথবা কোম্পানির বৈশ্বিক আয়ের সাত শতাংশ।
সাম্প্রতিক আইনের পর নতুন এ নীতিমালার ঘোষণাকে কোম্পানিগুলোর ওপর ‘বাড়তি বোঝা’ বলে সমালোচনা করেছে ব্যবসায়িক দল ‘ডিজিটালইউরোপ’।
“আমাদের কাছে চুক্তি আছে, তবে কিসের বিনিময়ে? আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝুঁকি-ভিত্তিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উপায়কে সমর্থন দিয়েছি, প্রযুক্তিকে নয়। তবে, শেষ মূহুর্তে এসে ফাউন্ডেশন মডেল নিয়ন্ত্রণের এ প্রচেষ্টা বিষয়টিকে একেবারে ঘুরিয়ে দিয়েছে।” --বলেন ডিজিটালইউরোপের মহাপরিচালক সিসিলিয়া বোনফেল্ড-ডাল।
এ বিষয়ে একই ধরনের সমালোচনা করেছে প্রাইভেসি অধিকার বিষয়ক সংগঠন ‘ইউরোপিয়ান ডিজিটাল রাইটস’ও।
“এমন আইন নিয়ে খুশি হতে পারছি না, যেখানে প্রথমবারের মত ইউরোপজুড়ে জনসাধারণের চেহারা শনাক্তকরণ ব্যবস্থাকে বৈধতা দেওয়া হবে” -- বলেন সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এলা জাকুবোস্কা।
“পার্লামেন্ট ক্ষয়ক্ষতি কমানোর যথেষ্ট চেষ্টা করলেও বায়োমেট্রিক নজরদারি ও প্রোফাইলিংয়ের সামগ্রিক প্যাকেজটি আরও ভাল হতে পারতো।”
দুই পক্ষের অনুমোদন পেলে আইনটি কার্যকর হতে পারে আগামী বছরের শুরুতে। আর এ আইনের প্রয়োগ শুরু হতে পারে এর দুই বছর পর থেকে।
এদিকে, মানুষের মতো কথোপকথন চালানো, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা ও বাধাহীনভাবে নানাবিধ কম্পিউটার কোড লেখার সক্ষমতা থাকা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিকাশে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে বিশ্বের অনেক দেশই।
ইউরোপের উচ্চাভিলাষী আইনটির ঘোষণা এমন সময় এল, যখন মাইক্রোসফট সমর্থিত ওপেনএআইয়ের মতো কোম্পানিগুলো এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন নতুন উপায় পরীক্ষা করছে। এ ছাড়া, চ্যাটজিপিটি’র সঙ্গে প্রতিযোগিতার লক্ষ্যে ‘জেমিনাই’ নামে বাজারে নতুন এআই ব্যবস্থা চালু করেছে আরেক টেক জায়ান্ট গুগল।
রয়টার্স বলছে, ইইউ’র আইনটি অন্যান্য অঞ্চলের সরকারের জন্যে নীলনকশা হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে প্রণয়ন করা হালকা ধাঁচের এআই নীতিমালা বা চীনের বিভিন্ন অন্তর্বর্তীকালীন নিয়মের বিকল্প হতে পারে এটি।