নিজস্ব অ্যাপ স্টোরের পক্ষ নিয়ে অ্যাপল সবসময় বলে আসছে, আইফোন ব্যবহারকারীদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দিতে পারে শুধু অ্যাপলই।
Published : 27 Jan 2024, 12:08 PM
আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সম্প্রতি আইওএস ১৭ অপারেটিং সিস্টেম চালু করেছে টেক জায়ান্ট অ্যাপল। আর ইইউ’র নিয়ন্ত্রকদের নতুন সব নিয়মের সঙ্গে তাল মেলাতে বড় কিছু পরিবর্তন এসেছে এ অপারেটিং সিস্টেমে।
এর অংশ হিসেবে প্রথমবারের মত আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে বিকল্প ব্রাউজার ইঞ্জিন চালানোর অনুমতি দিতে যাচ্ছে অ্যাপল। তবে এ সুবিধা আপাতত কেবল ইউরোপের ব্যবহারকারীরাই পাবেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে প্রযুক্তি সাইট ভার্জ।
নিজস্ব অ্যাপ স্টোর চালু করার পর থেকে অ্যাপল বেশ কিছু ব্রাউজারের অনুমতি দিলেও ব্রাউজার ইঞ্জিন হিসেবে কেবল ‘ওয়েবকিট’ই ব্যবহার করা যেত, যা কোম্পানির নিজস্ব ব্রাউজার ‘সাফারি’র সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে বাজারের একমাত্র ব্রাউজার ইঞ্জিন নয় এটি।
গুগলের ক্রোম ব্রাউজারটির চালিকা শক্তি হল ‘ক্রোমিয়াম’ নামের ব্রাউজার ইঞ্জিন, যা এ খাতের বাজারে বেশ প্রভাবশালী। এমনকি ‘এজ’, ‘ব্রেভ’, ‘আর্ক’, ‘অপেরা’সহ অন্যান্য অনেক ব্রাউজারই ক্রোমিয়ামের মাধ্যমে চলে। মোজিলার ‘ফায়ারফক্স’ ব্রাউজারটি চলে ‘গেকো’ নামের নিজস্ব ইঞ্জিনে।
আইওএস-এ এসব ব্রাউজার চালাতে ব্যবহার করতে হয় ‘ওয়েবকিট’ ইঞ্জিন। এর ফলে ব্রাউজারের নিজস্ব অনেক ফিচার ও এক্সটেনশন অপারেটিং সিস্টেমটিতে আর কাজ করে না।
তবে আইওএস ১৭.৪-এর মাধ্যমে এ পরিস্থিতি বদলতে যাচ্ছে, যেখানে কেউ ভিন্ন কোনো ব্রাউজার বা নিজস্ব অ্যাপের ইন-অ্যাপ ব্রাউজার বানাতে চাইলে ‘ওয়েবকিট’ বাদে অন্যান্য ব্রাউজার ইঞ্জিনও ব্যবহার করতে পারবেন।
এক ঘোষণায় অ্যাপল বলেছে, ব্রাউজার ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য অ্যাপ নির্মাতাদের অনুমতি নিতে হবে তাদের কাছ থেকে। কয়েকটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের পাশাপাশি কোম্পানির প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি বিষয়ক বিভিন্ন শর্তও পূরণ করতে হবে।
সাফারিতে নতুন ব্রাউজার স্ক্রিনও যোগ করেছে অ্যাপল, যেখান থেকে ব্যবহারকারী একটি ভিন্ন ডিফল্ট ব্রাউজার বেছে নেওয়ার সুবিধা পাবেন।
অ্যাপলের এসব পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ হল ইইউ’র নতুন ‘ডিজিটাল মার্কেটস অ্যাক্ট’ (ডিএমএ)। আইনটিতে স্পষ্ট বলা আছে, ওয়েব ব্রাউজার’সহ প্রি-ইন্সটল করা বিভিন্ন অ্যাপও আনইনস্টল করার সুযোগ থাকা উচিৎ ব্যবহারকারীর কাছে।
এ ধারার আরেকটি মানে দাঁড়ায়, মাইক্রোসফটকেও ব্যবহারকারীদের জন্য ‘বিং’ সার্চ ইঞ্জিন নিষ্ক্রিয় করার ও ‘এজ’ ব্রাউজার আনইনস্টল করার সুযোগ দিতে হবে।
নতুন ফিচারগুলো ঘোষণার সময় অ্যাপল বলেছে, তারা এ ধরনের পরিবর্তন নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নয়।
"এ পরিবর্তন ডিএমএ’র নতুন আইনের ফলাফল। আর এর মানে হল, ইইউর ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিকল্প ব্রাউজার পরখ করার আগেই ডিফল্ট ব্রাউজারের একটি তালিকা পেয়ে যাবেন। প্রথমবার সাফারিতে কোনো ওয়েবপেইজ খুলতে গেলেও নতুন স্ক্রিনটি বাধা দেবে ব্যবহারকারীদের।”
নিজস্ব অ্যাপ স্টোরের পক্ষ নিয়ে অ্যাপল সবসময় বলে আসছে, আইফোন ব্যবহারকারীদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ অভিজ্ঞতা দিতে পারে শুধু অ্যাপলই। তবে নিয়ন্ত্রকরা বিষয়টি সেভাবে দেখেন না। আর তাদের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্কিন এ টেক জায়ান্ট ক্ষুব্ধ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ভার্জ।
অ্যাপল আরও বলেছে, ইউরোপীয় ব্যবহারকারীরা ব্রাউজার ইঞ্জিন পরিবর্তন না করেই বিদেশ ভ্রমণে যেতে পারবেন। সুবিধাটি যেন কেবল ইউরোপীয় ব্যবহারকারীরাই পান, তা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোম্পানিটি।
বিশ্বের অন্যান্য জায়গার ব্যবহারকারীরা এখনও ‘ওয়েবকিট ক্রোম’ ও ওয়েবকিট ইঞ্জিনের অন্যান্য পণ্য ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
আগামী মার্চে ইউরোপে আইওএস ১৭.৪ চালুর পর থেকেই অ্যাপ স্টোরে নতুন ব্রাউজারগুলো পাওয়া যাবে।
এদিকে প্রায় এক বছর ধরে ক্রোমের জন্য একটি ‘নন-ওয়েবকিট’ সংস্করণ তৈরি করছে গুগল। ইইউর আইফোন ব্যবহারকারীরা শিগগিরই বড় এক ব্রাউজার যুদ্ধ দেখতে পাবেন বলে মনে করছে ভার্জ।