পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক উড়ুক্কু যানের ভিডিও প্রকাশ পেয়েছিল পেন্টাগন থেকেই।
Published : 18 Dec 2022, 03:29 PM
পৃথিবীতে ভিনগ্রহবাসীদের উপস্থিতি বা কোনো ‘আনআইডেন্টিফায়েড ফ্লাইং অবজেক্ট (ইউএফও)’ বিধ্বস্ত হওয়ার কোনো প্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে পেন্টাগন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আকাশে ভিনগ্রহবাসীদের উড়ুক্ক যান নজরে আসার খবর তদন্ত করে দেখতে তৎপরতা বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরটি।
মার্কিন নৌবাহিনীর একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফাইটার প্লেন থেকে পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক উড়ুক্কু যানের ভিডিও ধারণ করেছেন; এর আগে এমন কয়েকটি ভিডিও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে পেন্টাগন থেকেই।
ভিডিওর বস্তুগুলোকে ‘আনআইডেন্টিফায়েড এরিয়াল ফেনোমেনা (ইউএপি)’ নামে চিহ্নিত করলেও এর সঙ্গে ভিনগ্রহবাসীদের যোগসাজশের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পেন্টাগন।
নিজস্ব সামরিক বাহিনীর সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে পৃথিবীর আকাশে অপরিচিত উড়ুক্কু যান দেখার খবর আসায়, ঘটনাগুলোর তদন্তে জোর দিচ্ছে মন্ত্রণলয়টি।
শুক্রবারে এ প্রসঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আন্ডার সেক্রেটারি রোনাল্ড মোল্ট্রি বলেছেন, “আমরা এখন পর্যন্ত তদন্তে এমন কিছু পাইনি যা পৃথিবীতে ভিনগ্রহবাসীদের উপস্থিতি, ভিনগ্রহবাসীদের যান বিধ্বস্ত হওয়া বা এমন কোনো কিছুর ইঙ্গিত দেয়।”
তবে, ভিনগ্রহবাসীদের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি পেন্টাগনের ‘অল-ডোমেইন অ্যানোমালি রেজুলিউশন অফিস (অ্যারো)’র পরিচালক শন কার্কপ্যাট্রিক।
এর সম্ভব্যতা যাচাইয়ে বৈজ্ঞানিক কৌশল অনুসরণ করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি এটাই বলবো যে, আমরা পর্যালোচনা এমনভাবে সাজাচ্ছি যেন পুরো প্রক্রিয়া ত্রুটিবিহীন এবং কঠোর হয়। আমরা এর সব কিছুই তদন্ত করে দেখবো।”
রয়টার্স জানিয়েছে, জুলাই মাসে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার পর শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনটি ছিল সরকারি দপ্তরটির জন্য প্রথম।
“আর একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আমাকে বৈজ্ঞানিক নিয়ম-নীতি মেনেই কাজ করতে হবে; আমি ডেটা আর বিজ্ঞানকে অনুসরণ করবো সেটা যেখানেই যাক না কেন।”
সহজ কোনো ব্যাখ্যা নেই – মার্কিন সামরিক ঘাটির আশপাশে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা তদন্তে অ্যারো প্রতিষ্ঠা করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রয়টার্স লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি চিহ্নিত করাই অ্যারোর প্রধান লক্ষ্য।
২০০৪ সালের পর থেকে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ১৪৪টি ইউএপি দেখেছেন বলে গত বছরে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
এর মধ্যে একটি বাদে আর কোনো ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরা।
যথেষ্ট তথ্য-উপাত্তের অভাবে বাকি ১৪৩টি ঘটনার সঙ্গে কোনো ভিনগ্রহবাসী প্রাণীর সংশ্লিষ্টতা ছিল, নাকি চীন বা রাশিয়ার মতো বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীর হাত ছিল, নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা অসামরিক প্রকল্প জড়িত ছিল – সে বিষয়ে নিশ্চিত করে পারেননি মার্কিন কর্মকর্তারা।
২০২১ সালে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় কয়েকটি ইউএপি ভিডিও প্রকাশ করেছিল পেন্টাগন। ভিডিওতে যে যানগুলো দেখা গেছে, তার কোনোটি বিদ্যমান এভিয়েশন প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; যানগুলোর প্লেনের ইঞ্জিনের মতো কোনো প্রোপালশন সিস্টেম বা কোনো ডানাও ছিল না।
সংবাদসম্মেলনে কার্কপ্যাট্রিক এমন আরও কয়েকশ ঘটনা নথিভূক্ত করার কথা বলেছেন। মে মাসেই মার্কিন নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, এ সংখ্যা এরইমধ্যে চারশ ছাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সকল ইউএফও বিষয়ক নথিপত্র বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরির জন্য পেন্টাগনকে অনুমোদন দিয়ে নতুন এক প্রস্তাব পাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেস।
এ প্রসঙ্গে কার্ক প্যাট্রিক বলেন, “এটা বেশ বড় গবেষণা প্রকল্প হতে যাচ্ছে।”
এর আগে ‘প্রোজেক্ট ব্লু বুক’-এর অংশ হিসেবে গোপনে আকাশে অপরিচিতি উড়ুক্কু যান দেখার ঘটনাগুলো তদন্ত করেছিল মার্কিন বিমানবাহিনী। ১৯৬৯ সালে বন্ধ হয়ে যাওয় আগ পর্যন্ত এমন ১২ হাজার ৬১৮টি ঘটনা নথিভূক্ত করেছিল প্রকল্পটি। এর মধ্যে ৭০১টি ঘটনায় কোনো ব্যাখ্যা এখনও নেই বিশেষজ্ঞদের কাছে।