স্মার্টওয়াচ, ব্যান্ডে ক্রেতা টানছে স্বল্প পরিচিত, অভিনব, ছোট ব্র্যান্ডও

বাজার মাতানো নামী ব্র্যান্ড নিয়ে আলোচনা-প্রচারণা অনেক সময় হারিয়ে গেলেও ব্যবহারকারীরা ঠিকই খুঁজে নিচ্ছেন তাদের পছন্দ ও প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম প্রযুক্তি পণ্য।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2022, 03:10 PM
Updated : 4 Dec 2022, 03:10 PM

ফিটনেস ডিভাইসের বিশ্ব বাজারে কার্যত একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে অ্যাপল, স্যামসাং এবং গুগলের মতো শীর্ষ টেক জায়ান্টরা; কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ সব পণ্যে ব্যবহারকারীদের আগ্রহ বেড়েছে বিকল্প ব্র্যান্ড নিয়েও।

ধীর গতিতে হলেও ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে ‘অরা’ ফিটনেস ট্র্যাকিং রিং, ‘হুপ ব্যান্ড’ এবং ‘বোন কনডাকশন হেডফোন’-এর মতো মূলধারার বাইরের উদ্ভাবনী প্রযুক্তি পণ্য।

অ্যাপল যখন ২০১৫ সালে তাদের প্রথম স্মার্টওয়াচ উন্মোচন করছিল, ওয়েলনেস-ট্র্যাকিং ডিভাইস ‘অরা’র নির্মাতারা তখন কিকস্টার্টার ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। সাত বছরের ব্যবধানে বাজারের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোনের দাবিদার এখন অ্যাপল; কিন্তু থেমে যায়নি ‘অরা’ও। 

মূলধারার ফিটনেস ডিভাইসের সঙ্গে তুলনা করলে এক্ষেত্রে অরা একেবারেই ভিন্ন ধরনের পণ্য। সিএনএন বলছে, মহামারী চলাকালীন ক্রেতাদের মধ্যে ডিভাইসটি নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে।

দাম ৩৯৯ ডলার হলেও মহামারীর বছরগুলোতে অরার বিক্রি বেড়েছে লক্ষ্যণীয় হারে; পশ্চিমা দেশগুলো মহামারীর প্রকোপ কাটিয়ে উঠলেও ডিভাইসটি নিয়ে ক্রেতাদের আগ্রহ কমেনি বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন অরার প্রধান নির্বাহী টম হেইল।

ব্যবহারকারীদের ঘুমের দৈর্ঘ্য ও মানের তথ্য দিতে পারে অরা; এর জন্য রাতে স্মার্টওয়াচ পড়ে ঘুমানোর কোনো প্রয়োজন নেই ব্যবহারকারীর। দেহের তাপমাত্রায় ছোটখাটো পরিবর্তনও ধরতে পারে এই ধাতব আংটি।

এ বছরের শুরুতেই আড়াইশ কোটি ডলারে মূল্যায়নের খবর দিয়েছিল কোম্পানিটি; গুচি, স্ট্রাভাসহ প্রথমসারির ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গেও কাজ করছে এটি।

কেবল অরা নয়, স্ক্রিনবিহীন ফিটনেস ট্র্যাকার আর কানে ঢোকাতে হয় না এমন হেডফোনের মতো বিকল্প পণ্যের প্রতি ক্রমশ আগ্রহ বাড়ছে প্রযুক্তিভক্তদের। 

মহামারীর কারণে সাধারণ মানুষের মনে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সৃষ্ট শঙ্কার কারণে ফিটনেস প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকেছিলেন অনেকে। ভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারেও আগ্রহ আছে অনেকের। ঠিক ‘ফ্যাশনেবল’ হিসেবে বিবেচিত না হলেও, সঠিক ডেটা দেয়, ব্যবহার আরামদায়ক এবং কার্যক্ষমতার বিচারে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার উপযোগিতা বেশি– এমন ডিভাইসের দিকে ঝুঁকেছেন ক্রেতারা। 

ফিটনেস ডিভাইস বাজারে বহুল পরিচিতি নামগুলোর বিকল্প কোম্পানিগুলোর উত্থান ব্যাখ্যা করে আইডিসি রিসার্চের গবেষণা পরিচালক রামোন লামাস বলেন, “মজার বিষয় হচ্ছে এই ডিভাইসগুলো বাজারে আছে অনেক দিন ধরে, কিন্তু নাম কামিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। আর মুখের কথায় কারও সুনাম ছড়াতেও তো সময় লাগে।”

আর দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি আরেকটি স্ক্রিন যোগ করার আগ্রহ নেই এমন ব্যবহারীদের মধ্যে আলাদা কদর আছে ডিভাইসগুলোর। এমনই এক ডিভাইস ‘হুপ’ ব্যান্ড। বাজারে এই ফিটনেস ব্যান্ডের অভিষেক হয়েছিল ২০১৫ সালে; শরীরচর্চার ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে দেহের কতো সময় লাগে, বিশ্রামের সময় এবং প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলোর ওপর বেশি জোর দেয় এটি।

কোম্পানির ইতিহাসে এ বছরের সাইবার মানডে উপলক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী উইল আহমেদ।

অরার মতো হুপও সাবস্ক্রিশনভিত্তিক সেবা। এর সম্ভাব্য ক্রেতার বাজার তুলনামূলক ছোট মনে হলেও ব্যবহার উপযোগিতার কারণে ডিভাইসটি নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে ক্রেতাদের মধ্যে। তবে এর দামটাও কম নয়; দুই বছরের সাবস্ক্রিপশনসহ ডিভাইসটির দাম ৪৮০ ডলার।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে লামাস বলেছেন, “চ্যালেঞ্জের বিষয় হচ্ছে, নেতৃস্থানীয়দের (অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো কোম্পানি) পেছনে থেকেই বাজারে ছোট হলেও নিজস্ব অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে কোম্পানিগুলো। এ কারণে ডিভাইসগুলোর নিজেদের আলাদা করে উপস্থাপন করা গুরুত্বপূর্ণ এবং হুপের মতো কোম্পানিগুলো অ্যথলেটদের বিশ্রাম ও সেরে ওঠার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সফল হয়েছে। আজকের দিনের অ্যাথলেটদের অনেকের কাছে এ বিষয়গুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” 

ক্রেতাদের আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে হুপে নতুন ফিচারও যোগ করার কথা জানিয়েছেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আহমেদ।  অগাস্ট মাসে ২০ কোটি ডলারের নতুন বিনিযোগ তহবিল পেয়েছে কোম্পানিটি। হুপের বর্তমান বাজারমূল্য ৩৬০ কোটি ডলার।

হেডফোনের বাজারেও আসছে পরিবর্তন। ধীর গতিতে হলেও ‘বোন কনডাকশন হেডফোন’ প্রযুক্তি নিয়ে নির্মাতা ও ক্রেতা উভয় পক্ষেরই আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কনজিউমার ইলেকট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন’ -এর গবেষণা বিভাগের প্রধান স্টিভ কোনিগ। 

কানের ফুঁটোর ভেতরে বা উপরে না বসে কানের সামনে বসে বোন কনডাকশন হেডফোন; ব্যবহারকারীর চোয়াল এবং হাড়ের মধ্যে দিয়ে শব্দের কম্পাঙ্ক কানের পর্দায় পাঠায় এ প্রযুক্তি। হেডফোন যেন পড়ে না যায়, তা নিশ্চিত করতে সাধারণত মাথার পেছন দিয়ে নরম রাবার ব্যান্ডের মাধ্যমে বাঁধা থাকে দু’কানের দুই হেডফোন। 

এ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, কানের ফুঁটো খালি থাকায় আশপাশের আওয়াজ ঠিকই পৌঁছায় ব্যবহারকারীর কাছে। ফলে ঘরের বাইরে চলাচলের সময় যখন আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন – তেমন পরিস্থিতিতে কাজে আসে বোন কনডাকশন হেডফোন।

বোন কনডাকশন হেডফোন নির্মাদের মধ্যে মধ্যে অগ্রগামী হিসেবে পরিচিত ‘শকজ’, ১২৫ ডলার করে দাম এর। অরা এবং শকজ সমসাময়িক হলেও বর্তমানে একই ধরনে ভাবনার ‘ওপেন ইয়ারবাডস’ নিয়ে কাজ করছে সনি এবং বোসের মতো প্রথমসারির কোম্পানিগুলো। তবে ব্যবহারকারীদের আক্ষেপ, আওয়াজের মান বিবেচনায় পিছিয়ে আছে বোন কনডাকশন হেডফোন এবং ওপেন ইয়ারবাডস প্রযুক্তি।

তবে, সার্বিক হেডফোন প্রযুক্তি নিয়ে আশাবাদী কোনিগ; সিএনএনকে বলেছেন, “গত এক দশকে অডিও খাতে আকাশচুম্বী উদ্ভাবনী অগ্রগতী হয়েছে; নয়েজ ক্যানসেলেশন প্রযুক্তি, বিল্ট-ইন ওয়্যারলেস সক্ষমতাসহ নানা ফিচার যোগ হয়েছে।”

“এখন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য একাধিক হেডফোন ব্যবহার করেন ক্রেতারা। কেউ অফিসের জন্য হেডফোন রাখেন, কেউ প্লেনে চড়ার সময় আকারে বড় হেডফোন পছন্দ করেন। উপহার হিসেবে পণ্যগুলো ভালো; দামও তুলনামূলক কম।”

সবমিলিয়ে অনেকটা চুপিসারে হলেও প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে অবস্থান গড়ে নিচ্ছে ছোট নামের ফিটনেস আর অডিও ডিভাইস। অ্যাপল-স্যামসাংয়ের পণ্যের ভিড়ে নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা-প্রচারণা অনেক সময় হারিয়ে গেলেও ব্যবহারকারীরা ঠিকই খুঁজে নিচ্ছেন তাদের পছন্দ ও প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম প্রযুক্তি পণ্য।