২০০৩ সালে অবসরে যাওয়া ব্রিটিশ-ফরাসি কোম্পানি কনকর্ডের সুপারসনিক জেটের পর এটিই প্রথম বেসামরিক জেট, যা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে।
Published : 31 Jan 2025, 02:06 PM
শব্দের চেয়েও দ্রুত উড়ে সম্ভাবনার দুয়ার খুলল যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এক যাত্রীবাহী জেটের প্রোটোটাইপ। সুপারসনিক জেট কনকর্ড অবসরে যাওয়ার পর এটিই প্রথম কোনো যাত্রীবাহী প্লেন।
মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ার মোহাভি মরুভূমির ওপর দিয়ে ‘এক্সবি ১’ নামের জেটের পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেছে বিশ্বের দ্রুতগতির উড়োজাহাজ তৈরির লক্ষ্যে কাজ করা মার্কিন স্টার্টআপ ‘বুম সুপারসনিক’।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ফিট উচ্চতায় জেটটি মাক ১.১ বা ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার তিনশ ৬০ কিমি গতিতে যাত্রা করেছে। বাতাসে শব্দের গতি ঘণ্টায় ১ হাজার দুইশ ৩৪ কিলোমিটার।
২০০৩ সালে অবসরে যাওয়া ব্রিটিশ-ফরাসি কোম্পানি কনকর্ডের সুপারসনিক জেটের পর এটিই প্রথম অসামরিক জেট, যা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান।
জেটটি মাটিতে নেমে আসার পর বুমের প্রধান পরীক্ষণ পাইলট ত্রিস্তান গেপেত্তো ব্র্যান্ডেনবার্গ বলেছেন, “জেটটি সত্যিকারের সুপারসনিক। নিজের সেরাটা দিয়ে উড়েছে এটি।”
এখন পর্যন্ত ১২টি সফল পরীক্ষামূলক ফ্লাইট শেষ করেছে এক্সবি ১ জেটটি। ‘ওভারচার’ নামের এ জেটটি সাড়ে তিন ঘণ্টায় ৬৪ থেকে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেবে বলে আশা করছে বুম সুপাসনিক। বর্তমানে এ মহাসাগর পাড়ি দিতে প্লেনের সময় লাগে সাড়ে ছয় ঘণ্টা।
পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও আমেরিকান এয়ারলাইন্স, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ও জাপান এয়ারলাইন্সের মতো কোম্পানি এরইমধ্যে ১৩০টি ওভারচারের জন্য প্রি-অর্ডার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর ক্যারোলাইনায় কোম্পানিটির একটি কারখানা রয়েছে, যেখানে বছরে ৬৬টি ওভারচার জেট তৈরির পরিকল্পনা করছে তারা।
১৯৪৭ সালে প্রথম মানুষ হিসেবে ‘বেল এক্স ১’ নামের জেটকে ‘মাক ওয়ান’ অর্থাৎ ঘণ্টায় এক হাজার দুইশ ৬৩ কিলোমিটার গতিতে মোহাভে মরুভূমির ওপর দিয়ে উড়িয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর কর্মী ও উড্ডয়নের নায়ক চাক ইয়েগার।
বুম সুপারসনিকের লক্ষ্য, তাদের বিভিন্ন জেটের সর্বোচ্চ গতি মাক ১.৭ পর্যন্ত হবে অর্থাৎ ঘণ্টায় এক হাজার আটশ কিলোমিটার গতিতে উড়বে, যা বর্তমানে সময়ের দ্রুতগতির যাত্রীবাহী প্লেনের দ্বিগুণ। তবে কনকর্ডের সুপারসনিক জেটের সবোর্চ্চ গতি মাক ২.০২ বা ঘণ্টায় দুই হাজার পাঁচশ ১৯ কিলোমিটার গতির চেয়ে নতুন এই জেটের গতি কম।
কোম্পানিটি বলছে, এসব ফ্লাইটে ‘১০০ শতাংশ পর্যন্ত পরিবেশান্ধব’ জ্বালানি ব্যবহার করবে তারা, যা গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরি করলেও তা প্রচলিত জেট জ্বালানির চেয়ে কম হবে।
সুপারসনিক কনকর্ড ২৭ বছর ওড়ার পর ২০০৩ সালে অবসরে যায়।
কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার তিন বছর আগে তাদের এয়ার ফ্রান্সের এক ফ্লাইট প্যারিসে উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় ১০৯ আরোহীর সবাই মারা যান। আর এটিই ছিল কনর্ডের ইতিহাসে ঘটা একমাত্র দুর্ঘটনা।
এদিকে, বুম সুপারসনিকের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ব্লেক শোল ২০২২ সালে গার্ডিয়ানকে বলেছিলেন, কনকর্ড যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে সফল হবে তার কোম্পানি। কারণ, কনকর্ডের চেয়ে হালকা ও আরও সক্ষম হবে তাদের বিভিন্ন জেট।
“১৯৬০-এর দশকে এক প্রযুক্তিগত বিস্ময় ছিল কনকর্ড। তবে অর্থনীতির ওপর মনোযোগ দেয়নি তারা। পাশাপাশি সুপারসনিক উড়ানের জন্যও খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছিল এটি।”