বাতাসের গতির চেয়েও প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে ঝড়ের আকার। ফলে, ক্যাটেগরি ১ হারিকেনে বাতাসের গতি ১৫৩ কিলোমিটারের নিচে থাকলেও তাতে মারাত্মক ক্ষতির ঝুঁকি থাকে।
Published : 22 Aug 2024, 04:50 PM
ক্যাটেগরি ১ হারিকেন সংশ্লিষ্ট ভুয়া নিরাপত্তা সতর্কতবার্তা নিয়ে স্বস্তিতে থাকার কিছু নেই। কারণ এর থেকে সৃষ্ট ঝড় ও বন্যার মানে হচ্ছে, এগুলো খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
সম্প্রতি আটলান্টিক মহাসাগরে সক্রিয় ‘হারিকেন আর্নেস্তো’কে ক্যাটেগরি ১-এ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে পুয়ের্তো রিকো’র ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে আকস্মিক বন্যা দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের নিম্ন তালিকার হারিকেনও ক্যাটেগরি ৫ ঝড়ের মতো ক্ষতিকর হতে পারে।
‘সাফির-সিম্পসন’ স্কেলের হিসাবে, বিভিন্ন হারিকেনকে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত তালিকাভুক্ত করা যায়, যেখানে পাঁচ শ্রেণির হারিকেনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি।
৭০’র দশকে একজন বায়ু প্রকৌশলী ও একজন আবহাওয়াবিদের হাত ধরে এই স্কেলটির বিকাশ ঘটে। হারিকেনের তালিকা তৈরি হয় সাধারণত এদের বাতাসের গতি বিবেচনায় নিয়ে। তবে, এদের ঝড়ের ব্যপ্তি ও বৃষ্টিপাতের মতো অন্যান্য প্রভাব স্কেলে উঠে আসে না। আর সব ধরনের হারিকেনেই এমন ঝুঁকি থাকে।
“বিভিন্ন হারিকেন ক্যাটেগরিতে বেশি মনযোগ দিলে তা বিভ্রান্তিকর হতে পারে,” বলেন মার্কিন সংস্থা ‘ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (ফিমা)’র সাবেক পরিচালক ও বর্তমানে দুর্যোগ নিরাময় পরামর্শক হিসেবে কাজ করা ক্রেইগ ফুগেট।
“এদিকে, ক্যাটেগরি ৫ হারিকেনের বাতাস সন্দেহাতীতভাবে ধ্বংসাত্মক হলেও সত্যিকারের বিপদ দেখা যায় ঝড়ের অন্যান্য আচরণে,” বলেন তিনি।
“নিম্ন তালিকায় থাকার কারণে মানুষের ক্যাটেগরি ১ হারিকেনের হুমকি এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বড় বিপদ, যেখানে কেবল বাতাসের গতির দিকে মনযোগ থাকলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার ভয় থাকে।”
আর্নেস্তো’র মতো বিভিন্ন ক্যাটেগরি ১ হারিকেন থেকে মারাত্মক ঢেউ, বিপর্যয়কর বন্যা ও টর্নেডো তৈরি হতে পারে। এতে করে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া ও পানি দূষণের মতো অবকাঠামোগত ক্ষতি হতে পারে, যার ভয়াবহ স্থায়ী প্রভাব থাকতে পারে।
সত্যি বললে, জীবনের সবচেয়ে বড় হুমকির কারণ এ ঝড়ের ঢেউই, যেখানে মহাসাগরের পানি হারিকেনের বাতাসের বলে তীরের দিকে চলে আসে। এতে করে সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির স্তর অন্তত ৩০ ফিট পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪৯ শতাংশ হারিকেন সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর কারণ এই ঢেউ। এ ছাড়া, ভারী বৃষ্টিপাত থেকে সৃষ্ট বন্যার কারণে ২৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটলেও বাতাসের ক্ষেত্রে তা কেবল আট শতাংশ।
“বেশিরভাগ ক্ষতি পানি থেকে আসে, বাতাস থেকে নয়,” বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার ‘লরেন্স বার্কেলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী মাইকেল ওয়েনার, চরম আবহাওয়া পরিস্থিতির আচরণগত পরিবর্তন বিষয়ে যিনি বিশেষজ্ঞ।
“সমস্যা হল, সাফির সিম্পসন স্কেলটি স্রেফ ঝড়ের যে কোনো সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতির পরিমাপক।”
বিভিন্ন হারিকেনকে এদের বাতাসের গতির ভিত্তিতে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ঝুঁকিও থাকে। ক্যাটেগরি ৩ ও এর ওপরের স্তরের ঝড়কে ‘বড়’ হারিকেন হিসেবে বিবেচনা করে ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’। এর মানে, মানুষ হয়ত এর নিচের স্তরগুলোকে তেমন ভীতিকর মনে করে না।
ওয়েনার বলছেন, বাতাসের গতির চেয়েও প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে ঝড়ের আকার। এমনকি ক্যাটেগরি ১ হারিকেনে বাতাসের গতি প্রতি ঘণ্টায় ১৫৩ কিলোমিটারের নিচে থাকলেও তাতে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।