রাশিয়ার নভোচারীদের নীল-হলুদ পোশাক মানে ইউক্রেইন নয়

ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে অর্থনীতি থেকে শুরু করে জৈব জ্বালানী খাত পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। তেমনই এক জটিলতায় ফেঁসেছেন রাশিয়ার নভোচারীরাও। সম্প্রতি ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)’-এ পৌঁছানো তিন রাশিয়ান নভোচারী ইউক্রেইনের সমর্থনে হলুদ রংয়ের স্পেস স্যুট পরেছিলেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 March 2022, 11:08 AM
Updated : 21 March 2022, 11:08 AM

শুক্রবারের আইএসএস-এ পৌঁছেছেন রাশিয়ার তিন নভোচারী ডেনিস মাতেভ, ওলেগ আর্তেময়েভ এবং সের্গেই কোর্সাকভ। তিন জনের পরনেই ছিল উজ্জ্বল হলুদ আর নীল রংয়ের স্পেস স্যুট। বলে রাখা ভালো, ইউক্রেইনের পতাকার রং-ও নীল আর হলুদ। রাশিয়ার আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর ইউক্রেইনকে সমর্থন জানাতে বিভিন্নভাবে রং দুটির ব্যবহার করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।

রাশিয়ার নভোচারীদের স্পেসস্যুটের রং নিয়ে বার্তাসংস্থা বিবিসি ধারণা করেছিল, সম্ভবত রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধে ইউক্রেইনের প্রতি সমর্থন জানাতেই ওই রংয়ের স্পেসস্যুট পরেছেন নভোচারীরা।

কিন্তু রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বলছে ভিন্ন কথা। নভোচারীরা ইউক্রেইনের সঙ্গে একাত্বতা জানাতে হলুদ রংয়ের স্পেসস্যুট পড়েছেন– এমন প্রতিবেদন এক কথাতেই নাকচ করে দিয়েছে রসকসমস। এক টেলিগ্রাম পোস্টে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, “কখনো কখনো হলুদ মানে শুধুই হলুদ।” 

“ইউনিফর্মের নকশা বর্তমান ঘটনা প্রবাহের অনেক আগেই নির্ধারিত হয়েছিল।”

রসকসমস জানিয়েছে, তিন নভোচারীই ‘বাউম্যান মস্কো স্টেট টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি’র সাবেক শিক্ষার্থী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীক চিহ্নতেও আছে নীল আর হলুদ। তিন নভোচারীকে একসঙ্গে ‘বাউম্যান ক্রু’ বলেও আখ্যা দিচ্ছেন অনেকে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির দাবি, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীককে মহাকাশে নিতেই হলুদ রং বেছে নিয়েছিলেন নভোচারীরা।

আলাদা একটি পোস্টে আর্তেময়েভের ২০১৪ সালের প্রথম মহাকাশ অভিযানের ছবিও দেখিয়েছে রসকসমস। সেবারও হলুদ স্পেসস্যুট পড়েছিলেন তিনি।

তিন নভোচারী ইউক্রেইনকে সমর্থন জানাতে নয়, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করতেই হলুদ রং বেছে নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন রসকসমস প্রধান দিমিত্র রোগোজিন। “আমরা বাউম্যান ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েটদের তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রং পরতে দেবো না, এমনটা কোনো পরিস্থিতিতেই হতে পারে না,”-- টুইট করেছেন তিনি।

আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর লাইভ সংবাদসম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তিন নভোচারী। তাদের বক্তব্য থেকেও স্পেসস্যুটের রংয়ের বিশেষ মানে আছে – এমন কোনো ইঙ্গিত মেলেনি বলে জানিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট ভার্জ। স্পেসস্যুটের রং নিয়ে প্রশ্ন আর্তেময়েভ কৌশলে এড়িয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে সাইটটি।

“এবার আমাদের পালা ছিল রং বেছে নেওয়ার। সত্যি বলতে, আমাদের কাছে অনেক হলুদ কাপড় জমে ছিল। তো সেগুলো কাজে লাগানো দরকার ছিল আমাদের, ” বলেন তিনি।

তিন নভোচারী আইএসএসে পৌঁছেছেন সয়্যুজ এমএস-২১ রকেটে চড়ে। কাজাখস্তানের বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল রকেটটির। আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর তাদের স্বাগত জানান জার্মান, রাশিয়ান এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহকর্মীরা। রাশিয়ার সঙ্গে ইউরোপ ও পশ্চিমা শক্তির বর্তমান টানাপোড়েনের কোনো ইঙ্গিত মেলেনি তাদের আলাপচারিতায়।

আইএসএসের বর্তমান ক্রুদের মধ্যে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী মার্ক ভান্দে হেই। ভান্দে হেইসহ আরও দুই নভোচারী পিওতন দ্রুব্রভ এবং আন্তন শ্কাপলেরভকে ৩০ মার্চ পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনবে একটি রাশিয়ান মহাকাশযান।

রাজনৈতিক বিভেদের জেরে রাশিয়া ভান্দে হেইকে ফেরত আনবে না, এমন শোনা গেলেও দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ভান্দে হেইকে ফেলে আসবে না তারা।