টুইটার থেকে ‘মাসটোডন’মুখী কাফেলা, কিন্তু সেটা আবার কী?

সামাজিক নেটওয়ার্কটি বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে এখন ছয় লাখ ৫৫ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী আছে। এর মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজারই এসেছেন গেল এক সপ্তাহে।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2022, 11:09 AM
Updated : 7 Nov 2022, 11:09 AM

ইলন মাস্ক টুইটার অধিগ্রহনের পরপর অনেকেই অনলাইলে খুঁজছেন টুইটারের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম। এতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেটির নাম বেশিরভাগের কাছে ছিল প্রায় অজানা। প্রশ্ন হচ্ছে, ‘মাসটোডন’ নামের ওই প্ল্যাটফর্ম কেমন? কী করা যায় আর যায় না সেখানে?

সামাজিক নেটওয়ার্কটি বলছে, তাদের প্ল্যাটফর্মে এখন ছয় লাখ ৫৫ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী আছে। এর মধ্যে দুই লাখ ৩০ হাজারই এসেছেন গেল এক সপ্তাহে।

বাইরে থেকে মাসটোডন দেখতে অনেকটা টুইটারের মতো, যেখানে পোস্ট লেখার (‘টুটস’ নামে পরিচিত) পাশাপাশি এতে রিপ্লাই, লাইক ও রি-পোস্ট দিতে পারেন অ্যাকাউন্ট থাকা ব্যবহারকারী। এ ছাড়া, একে অপরকে ফলো করার সুবিধাও আছে এতে।

টুইটারের সঙ্গে মিল বলতে এইটুকুই। আদতে, অনেকটাই ভিন্ন উপায়ে কাজ করে এটি।

এই মিল আর অমিলেরসহ বেশ কয়েকটি কারণে অনেকেই আকৃষ্ট হচ্ছেন এই সেবায়। তবে, এতে সাইন আপের সময় কিছুটা বিভ্রান্তিতেও পড়ছেন কেউ কেউ। আর সে বিষয়টিই উঠে এসেছে বিবিসির এক নিবন্ধে।

প্ল্যাটফর্মটি ছয় বছর পুরোনো হলেও এর এখন দম ফেলারও সময় নেই। প্ল্যাটফর্মে আসা নতুন কাফেলার চাপও কুলিয়ে উঠতে পারছে না এটি।

দেখে নেওয়া যাক এর বিভিন্ন বিষয়আসয়-

আলাদা আলাদা সার্ভার কেন?

সাইন আপের সময় প্রথমেই একটি সার্ভার বাছাই করতে হয় এখানে। সার্ভারের এক বিশাল ভাণ্ডারও আছে এতে। এর মধ্যে অনেকগুলোই বিভিন্ন দেশ, শহর ভিত্তিক বা বিভিন্ন ‘থিমের’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এর উদাহরণ হতে পারে, ‘ইউকে’, ‘সোশাল’, ‘টেকনোলজি’, ‘গেইমিং’ ইত্যাদি।

ব্যবহারকারী কোন থিম ব্যবহার করবেন, সেটি কোনো বড় বিষয় নয়। কারণ, অন্যান্য ব্যবহারকারীকে এমনিতেও ফলো করতে পারবেন তিনি। তবে, এটি ব্যবহারকারীকে শুরুতে এমন এক কমিউনিটির অংশ বানায়, যেখানে তার পছন্দের বিষয়াদি নিয়ে পোস্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

একটি সার্ভারের পরিচালক বলছেন-
“শুক্রবার রাতে সার্ভার ঠিকঠাক রেখে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি এক হাজার লোক হাজির, যাদেরকে আমি চিনতাম না।”

এর মধ্যে কয়েকটি জনপ্রিয় থিম হলো সোশাল ও ইউকে, যেগুলো চাহিদার সঙ্গে কুলাতে না পেরে এখন ধীরগতিতে চলছে।

নিজস্ব কোম্পানি ‘সুপিরিয়র নেটওয়ার্কস’-এর মাধ্যমে ‘মাসটোডনঅ্যাপ ডটইউকে’ সার্ভারটি চালানো রায়ান ওয়াইল্ড বলেছেন, ২৪ ঘন্টায় তার সার্ভারে ছয় হাজার নতুন যোগদানকারী এসেছেন। এর ফলে, সার্ভারে নিবন্ধন থামিয়ে দিতে হয়েছে তাকে।

“আমি দেখতে চেয়েছিলাম, এখানে হঠাৎ এতো শোরগোল কী নিয়ে?” --বলেন তিনি।

“শুক্রবার রাতে সার্ভার ঠিকঠাক রেখে ঘুমানোর পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি এক হাজার লোক হাজির, যাদেরকে আমি চিনতাম না।”

অন্যদের কীভাবে খুঁজে পাবেন?

ব্যবহারকারীর বাছাই করা সার্ভার তার ‘ইউজার নেইমের’ অংশ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে, কেউ ‘zsk’ নামের টুইটার ব্যবহার করে ‘ইউকে’ সার্ভারটি বাছাই করলে তার ‘ইউজার নেইম’ হবে, ‘name@zsk@mastodonapp.uk’।

ব্যবহারকারীর পরিচিত কেউ যদি একই সার্ভারে থাকেন, তবে ওই ব্যক্তির নাম সার্চ করলেই তার অ্যাকাউন্ট চলে আসবে। তবে, ভিন্ন সার্ভারের বেলায় তার পূর্ণ ঠিকানা দিতে হয়।

টুইটারের মতো ব্যবহারকারীর পছন্দ হতে পারে এমন ফলোয়ারের পরামর্শ দেখায় না মাসটোডন। এ ছাড়া, ‘হ্যাশট্যাগের’ মাধ্যমেও সার্চ করতে পারবেন তিনি।

এতো সার্ভার থাকার কারণ কী?

এই বিষয়টি কিছুটা জটিল। তবে সহজ করে বললে, মাসটোডন একটি একক প্ল্যাটফর্ম নয়। এর মালিকানা কোনো একক ব্যক্তি বা কোম্পানির অধীনে নেই। এইসব ভিন্ন সার্ভার একসঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে একটি জোটবদ্ধ নেটওয়ার্ক তৈরি করে এটি। তবে, এগুলোর মালিকানা থাকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার কাছে।

এই কাঠামোর কারণে এটি ‘বিকেন্দ্রিকৃত’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। এই কারণেই ভক্তরা প্ল্যাটফর্মটি পছন্দ করেন। কোনো একক সত্ত্বার নিয়ন্ত্রণে না থাকার পাশপাশি এগুলো কেনা বা বিক্রিও করা যায় না।

ভিন্নতা কোথায়?
এই কাঠামোর কারণে এটি ‘বিকেন্দ্রিকৃত’ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত। এই কারণেই ভক্তরা প্ল্যাটফর্মটি পছন্দ করেন। কোনো একক সত্ত্বার নিয়ন্ত্রণে না থাকার পাশপাশি এগুলো কেনা বা বিক্রিও করা যায় না।

তবে, এর একটি নেতিবাচক দিক হলো, ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ থাকে সার্ভারটির মালিক বা সংস্থার হাতে। তারা চাইলেই এটি বন্ধ করে দিতে পারেন, এর ফলে অ্যাকাউন্ট হারাবেন ব্যবহারকারী।

কেউ যদি নিজস্ব সার্ভার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন, তবে ব্যবহাকারীকে তিন মাস আগে সেটি জানাতে বলেছে মাসটোডন।

বর্তমানে ‘ব্লুস্কাই’ নামে একটি নতুন নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছেন টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। মজার বিষয় হলো, একে বিকেন্দ্রিভূত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আনার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি।

কীভাবে মাসটোডন নিয়ন্ত্রিত হয়?

বিবিসি বলছে, এটিই প্ল্যাটফর্মটির মূল সমস্যা। এই মূহুর্তে প্রত্যেক সার্ভারেই আছে নিজস্ব মডারেশন নীতিমালা। আবার, কয়েকটিতে এমন কিছুই নেই।

কিছু সার্ভার আবার এমন কাউকে যুক্ত করতে চায় না, যেখানে ‘বট’ অ্যাকাউন্ট বা ঘৃণামূলক কনটেন্টের আধিক্য থাকে।

এর মানে, যেসব সার্ভার এই ধরনের ব্যবহারকারীকে ব্লক করবে, সেগুলোতে আর তাদের দেখা মিলবে না।

সার্ভারের মালিকের কাছে পোস্ট সম্পর্কেও অভিযোগ দেওয়া যাবে। ওই পোস্ট কনটেন্ট অবৈধ বা ঘৃণামূলক হলে সার্ভারের মালিক এটি মুছে ফেলতে পারেন। তবে, তার মানে এই নয় যে সকল জায়গা থেকে মুছে যাবে এটি।

প্রতিবেদন বলছে, প্ল্যাটফর্মটির অগ্রগতির ক্ষেত্রে বড় বাধা হতে পারে এটি।

এরইমধ্যে প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ঘৃণামূলক কনটেন্ট নিয়ে অভিযোগের পাশাপাশি কয়েকটি ‘হোমোফোবিক’ আচরণের উদাহরণও থাকার কথা উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে।

এতে কোনো বিজ্ঞাপন আছে?

না। এতে কোনো বিজ্ঞাপন না থাকলেও, কেউ যদি নিজস্ব কোম্পানি বা পণ্যের প্রচার চালাতে পোস্ট লিখেন, তাকে কেউ বাধা দেবে না।

ব্যবহারকারী কীভাবে পোস্ট দেখবেন, সেই ক্ষেত্রে টুইটারের মতো অতোটা ‘গোছানো’ অভিজ্ঞতা দেয় না মাসটোডন। ব্যবহারকারী সাধারণত সেটিই দেখতে পান, যা তার অনুসরণকারীরা বলছে।

এটি কি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়?

এই বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহারকারী কোন সার্ভারে আছেন, সেটির ওপর। কিছু সার্ভার আর্থিক সহায়তা চাইলেও, বড় পরিসরে একে বিনামূল্যেরই ধরা যায়।