মার্কিন কংগ্রেসে টিকটক সিইও: গুরুত্বপূর্ণ ৫ বিষয়

সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, মূল বিষয়টি হলো টিকটকের মালিক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স। এমনকি কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন চিউ নিজেও।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2023, 08:36 AM
Updated : 25 March 2023, 08:36 AM

উপর্যপুরি গণ-আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত -- মার্কিন কংগ্রেসে সাড়ে চার ঘন্টা দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকে এক বাক্যে প্রকাশ করলে হয়তো এমনটাই শোনাবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগের মুখোমুখি হয়েছিলেন টিকটক সিইও শউ জি চিউ।

বৃহস্পতিবারের শুনানি শেষে এক কংগ্রেস সদস্য মন্তব্য করেন, কিছু মানুষ এর চেয়েও দ্রুতগতিতে ম্যারাথনে দৌড়ান।

চীনা মালিকানাধীন অ্যাপটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রমাণ দেওয়ার এক উত্তাল সময় কাটানোর পর চিউ নিশ্চিতভাবেই একই ধরনের অনুভূতি পাচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি। কারণ, তার আগেও বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মার্কিন কংগ্রেসের সামনে দাঁড়িয়েছেন। আর তাদের অভিজ্ঞতাও সহজ ছিল না।

শুনানিতে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, উভয় দলই প্রশ্নের বেলায় কোন ছাড় দেয়নি। শুনানির পর টিকটকের এক মুখপাত্র বলেন, মার্কিন রাজনীতিবিদরা এতে আসলে নিজেদের জাহির করেছেন। কথাটি পুরোপুরি ভুলও নয়। তবে, মাঝে মাঝে এই হতাশাজনক আর ভারী শব্দে বোঝাই প্রশ্নমালা থেকে দর্শকরা একটি বা দুটি জিনিস শিখতে পেরেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।

টিকটকের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ ছিলেন মার্কিন জনপ্রতিনিধিরা

শুনানিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা টিকটকের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। আর সকল দিক থেকেই অবিশ্বাস ও সংশয়ের মাত্রা ছিল তীব্র।

“কংগ্রেসের সবচেয়ে দ্বিদলীয় কমিটিতে স্বাগতম।” --বলেন রিপাবলিকান দল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য বাডি কার্টার।

“রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একসঙ্গে আনায় আপনাকে ধন্যবাদ মিস্টার চিউ।” --বলেন রিপাবলিকান দলের আরেক কংগ্রেস সদস্য ড্যান ক্রেনশ।

এতোজন রাজনীতিবিদকে একসঙ্গে দেখার বিষয়টি সত্যিই বেশ চমকপ্রদ ছিল – প্রতিবেদনে বলেছে বিবিসি। অন্যান্য বিষয় নিয়ে কার্যত একমত না হলেও তারা এই বিষয়ে মনে প্রাণে একমত ছিলেন যে, টিকটক দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি।

শুনানির পর টিকটক অভিযোগ জানায়, প্ল্যাটফর্মের ডেটা সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থায় মনযোগ দেওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার যথেষ্ট সময় ছিল না।

“কমিটির সদস্যরার আজ আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেননি। তা হলো, দেশটিতে ৫০ লাখ ব্যবসার জীবিকা অথবা ১৫ কোটি মার্কিন নাগরিকদের পছন্দের একটি প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ করার মতো বিষয়গুলোতে প্রথম সংশোধনীর প্রভাব।”-- বলেন টিকটক মুখপাত্র।

মার্কিন ডেটার কিছু অংশে চীন থেকে এক্সেস আছে

শুনানিতে চিউ ক্রমাগত ‘প্রজেক্ট টেক্সাস’ নামে পরিচিত এক প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। এই প্রস্তাবনার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সকল ডেটা সংরক্ষিত হবে মার্কিন কোম্পানি ওরাকলের তত্ত্বাবধানে।

তবে, এই প্রকল্প পুরোপুরি কার্যকরযোগ্য নয়। কারণ, চিউ নিজেও নিশ্চিত করেন যে, চীনের বাইটড্যান্স প্রকৌশলদের কাছে মার্কিন ডেটার প্রবেশাধিকার রয়েছে।

“আমরা ‘গ্লোবাল ইন্টারঅপারেবিলিটি’র ওপর নির্ভর করি। চীনা প্রকৌশলদের ডেটায় প্রবেশাধিকার আছে।” --বলেন তিনি।

এই স্বীকারোক্তি নিয়ে রাজনীতিবিদরা ক্রমাগত প্রশ্ন তুলেছেন শুনানিতে। তাদের যুক্তি ছিল, যদি চীনের প্রকৌশলদের মাধ্যমে ডেটায় প্রবেশ করা যায়, তবে এটি বিশ্বাস করা কঠিন যে, দেশটির সরকার এতে প্রবেশ করতে পারে না।

শুক্রবার, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই দাবি তুলে বলে, কোনো কোম্পানিকে  তারা অন্যান্য দেশের ডেটা বা অভ্যন্তরীণ তথ্য সরবরাহ করতে বলেনি।

বাইটড্যান্সের মালিকানায় চিউ’ও আছেন

চিউ’র সবচেয়ে কম ফলদায়ক প্রচেষ্টা ছিল সম্ভবত তার বাইটড্যান্স থেকে টিকটককে দূরে রাখার বিষয়টি।

সংজ্ঞা যাই হোক না কেন, মূল বিষয়টি হলো টিকটকের মালিক চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স। এমনকি কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন চিউ নিজেও।

বাইটড্যান্সের মালিকানায় চিউ’র অংশ আছে কি না, এই বিষয়টি প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞেস করা হলে সেটির কোনো জবাব দিতে চাননি তিনি। নিয়ন্ত্রকদের চাপে পরবর্তীতে এই বিষয়টি স্বীকার করলেও, নিজের সম্পৃক্ততার বিষয়টি এড়ানোর চেষ্টা করেন তিনি।

চিউ’র সন্তানরাও টিকটক ব্যবহার করে না

শুনানির এক পর্যায়ে চিউ’কে ডেমোক্র্যাট দল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য নানেট ব্যারাগান জিজ্ঞেস করেন, তার নিজের সন্তানরা টিকটক ব্যবহার করেন কি না।

এর জবাবে চিউ বলেন, তারা এটি ব্যবহার করেন না কারণ তারা সিঙ্গাপুরে বসবাস করেন। আর ওই দেশে অ্যাপটির ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য তৈরি সংস্করণটি নেই।

তবে, যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটির শিশু ভিত্তিক সংস্করণ থাকার বিষয়টি পরিষ্কার করেন চিউ। তিনি আরও যোগ করেন, তার সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকলে তাদেরকে তিনি অ্যাপটি ব্যবহারের সুযোগ দিতেন।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কী হলো?

শুনানিতে পাল্টা আক্রমণ করার বেলায় কিছুটা সংযতই ছিলেন চিউ। কংগ্রেস সদস্যদের বিভিন্ন আক্রমনাত্মক প্রশ্নের জবাবে তেমন প্রতিরোধী মনোভাব দেখাননি তিনি। তবে, কয়েকটি বিশেষ মূহুর্তে কার্যকারিতার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণ করেন চিউ।

যখন তাকে টিকটকের ব্যবহারকারীর ডেটা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি বলেন, “আমি শ্রদ্ধার সঙ্গেই বলছি, মার্কিন কোম্পানিগুলোর ডেটা সংরক্ষণের ট্র্যাক রেকর্ডও তেমন ভালো না…কেবল ফেইসবুক ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার দিকেই তাকিয়ে দেখুন।”

এটি একটি ঠোটকাটা মন্তব্য হিসেবে বিবেচিত হলেও এতে প্রাসঙ্গিক যুক্তি ছিল।

২০১৮ সালে ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র বিরুদ্ধে যখন থার্ড পার্টি অ্যাপের মাধ্যমে ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ওঠে, তখন এর ফলে ব্যাপক হৈচৈ সৃষ্টি হয়।