যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিহাসে অলিখিত এক মৌলিক নিয়ম হচ্ছে, যখনই নতুন কোনো যোগাযোগ প্রযুক্তির উত্থান ঘটে, তখনই মানুষ সেগুলোর প্রথম ব্যবহারে জুড়ে দেন বেড়ালের ছবি।
Published : 27 Sep 2024, 04:05 PM
সোশাল মিডিয়ার যুগে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বড় এক ধরনের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে, এটি এবারই প্রথম ঘটল, বিষয়টি এমন নয়। এমনকি সামাজিক পরিবর্তনের কেন্দ্রে বেড়ালের ভূমিকা থাকার প্রথম ঘটনাও নয় এটি।
যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিহাসে অলিখিত এক মৌলিক নিয়ম হচ্ছে, যখনই নতুন কোনো যোগাযোগ প্রযুক্তির উত্থান ঘটে, তখনই মানুষ সেগুলোর প্রথম ব্যবহারে জুড়ে দেন বেড়ালের ছবি।
আর এইসব ছবিতে শুধু মানুষ ও তার পোষা প্রাণীর বিশেষ সম্পর্কই দেখা যায় না, বরং মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা কী রকমভাবে বদলেছে, সে বিষয়টিও ফুটে ওঠে।
আধুনিক উপায়ে বেড়ালের মিম তৈরির প্রথম ঘটনাটি সম্ভবত ৯০’র দশকের, যখন অফিসের বিরক্ত কর্মীরা বন্ধুদেরকে মজার মজার বেড়ালের ছবি মিম হিসেবে পাঠানোর সুযোগ পেতেন। তবে, মিম শব্দটির প্রচলন হয়নি তখনও।
ওয়েবের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ালও ‘লাফ দিয়ে’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসে, যেখানে ‘কিবোর্ড ক্যাট’-এর মতো ভাইরাল ভিডিও এবং ‘গ্রাম্পি ক্যাট’-এর মতো মিম বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে।
এইসব কনটেন্টের চাহিদা এতই বেশি ছিল যে, ‘আইক্যানহ্যাজচিজবার্গার’-এর মতো ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে সেরা ‘ই-ক্যাট’ ট্রেন্ডগুলো দেখানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে পোষা বেড়ালের বিভিন্ন জনপ্রিয় ভিডিও ও মিম।
তবে বেড়ালের ‘চিজবার্গার খেতে চাওয়ার’ ট্রেন্ডের অনেক আগে আরেকটি ট্রেন্ড ছিল, সেটি হল ‘এডওয়ার্ডিয়ান’ পোস্টকার্ড। আর যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করা লোকজনের দেওয়া তথ্য বলছে, বিশ শতকের শুরুর দিকে প্রচলিত বেড়ালের বিভিন্ন পোস্টকার্ড বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে হালের সোশাল মিডিয়া।
“কিছু কিছু বিষয় আছে, একাধিক প্রজন্মজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় চলতে থাকে। বেড়ালের চিত্রায়ন তেমনই একটি বিষয়, যেন জানান দেয় আমি আছি!” বলেন ‘বস্টন মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টস’-এর জ্যেষ্ঠ কিউরেটর ও জাদুঘরের ‘পোস্টকার্ড এইজ’ প্রদর্শনীর সহকারী কিউরেটর বেন উইস।
তিনি আরও যোগ করেন, উনিশ ও বিশ শতকের শুরুতে ‘পোস্টকার্ড সাম্প্রতিক কালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মতোই কাজ করত’। এ ছাড়া, চিঠির তুলনায় পোস্টকার্ড সাশ্রয়ী, দ্রুততর ও সুবিধাজনক হওয়ায় এটি ব্যবহার করে বিভিন্ন গান শেয়ার করা, কোথায় ও কখন দেখা করতে হবে তার পরিকল্পনা করা, কৌতুক বলা ও বরাবরের মতোই বেড়ালের ছবি পোস্ট করতেন লোকজন।
১৯২৪ সালের স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিঠি পাঠানো বা ২০২৪ সালের আঙুল চাপ দিয়েই কিছু পোস্ট করা, ঘটনা যেটাই হোক না কেন, শিল্পী ও দর্শকদের কাছে বেড়ালের গ্রহনযোগ্যতা একই।
প্রথম পোস্টকার্ড মুদ্রিত হয়েছিল ১৮৬৯ সালে, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরিতে। মেইল বা চিঠির যুগে নতুন এই উদ্ভাবনের বেলায় এটি একটি রোমাঞ্চকর সময় হিসেবে বিবেচিত। কারণ ১৮৭৪ সালে ২১টি দেশ মিলে ‘ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করে, যার ফলে আন্তর্জাতিকভাবে মেইল পাঠানো ও সরবরাহ করার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোয় আরও দেশ এতে যোগ দেয়। আর সেই ঢেউয়ে চড়েছে পোস্টকার্ডও।
মিমের মতো পোস্টকার্ডে শুধু ছবিই নয়, বরং কয়েক লাইন লেখাও যেত। কেবল লেখা চিঠি বা পোস্টকার্ডের জন্য যে বিশাল নেটওয়ার্ক আর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ছিল, সেটি সেখানেই থেমে থাকেনি। একটা সময় পর্যন্ত ক্রমাগত বেড়েছে এর আওতা। সেই আমলে এটি পৃথিবীর বদলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির অগ্রগতিকেও চিহ্নিত করে। এর মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশে সাধারণ নাগরিকদের নিজস্ব ঠিকানায় বা মেইলবক্সে চিঠি পাঠানোর রেওয়াজ শুরু হয়।
“পোস্টকার্ড অনেকটা বর্তমান যুগের মিমের মতো। আর এখনকার মতোই, বিশ শতকের শুরুতে ভিজুয়াল সংস্কৃতির সবটা জুড়ে ছিল প্রাণীরা, বিশেষ করে বেড়াল,” বলেন জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিয়ান হাইডি হার।
তিনি আরও বলেন, বেড়াল সাধারণত কোনো বাড়ির পোষা প্রাণী বলেই বিবেচিত, যা মালিকের ‘সুন্দর, জীববান্ধব ও ধৈর্যশীল’ ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে। তবে, এটিও সত্য যে, বেড়াল শিকারি স্বভাবের। আর যাদের কাছে বেড়াল আছে, তারা সবাই বলবেন, এরা নখ ব্যবহার করে থাবা দিতে পছন্দ করে।
বিশ শতকের ভোটাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন স্মারক সংগ্রাহক ও বিল ক্লিনটনের শাসনামলে হোয়াইট হাউসের জনসংযোগ পরিচালক হিসেবে কাজ করা অ্যান লুইজ বলছেন, বেড়াল ব্যবহার করে নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন রাজনৈতিক বার্তা তাকে ‘বিমোহিত করেছে’।
“রাজনীতি আসলে যোগাযোগেরই জায়গা,” বলেন লুইস।
“মানুষকে বলা, তারা কেন আপনাকে ভোট দেবে।”
“পোস্টকার্ড সেই যুগের ইমেইল ছিল – তাও সাশ্রয়ী ও ব্যক্তিগত,” বলেন লুইস।