অনেক সাশ্রয়ী ফোন এখন দারুণ ডিসপ্লে ও ঝামেলাহীন পারফরমেন্স দিয়ে থাকে যা বাজেট সচেতন গ্রাহকদের জন্য বা যারা ব্যাকআপ ডিভাইস খুঁজছেন তাদের জন্য ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর তুলনায় ভালো বিকল্প হতে পারে।
Published : 13 Nov 2024, 04:44 PM
সাম্প্রতিক সময়ে স্মার্টফোনের বাজার ব্যাপকভাবে বদলেছে। আর এখন পকেটের সব অর্থ খরচ না করেও বেশ ভালো বাজেট অ্যান্ড্রয়েড ফোন পাওয়া যায়। আর বাজেটবান্ধব এসব ডিভাইস নেওয়া মানেই ফিচার বা কার্যকারিতা ছেড়ে দিতে হবে বিষয়টি এখন আর এমন নেই।
অনেক সাশ্রয়ী ফোন এখন দারুণ ডিসপ্লে ও ঝামেলাহীন পারফরমেন্স দিয়ে থাকে যা বাজেট সচেতন গ্রাহকদের জন্য বা যারা ব্যাকআপ ডিভাইস খুঁজছেন তাদের জন্য ফ্ল্যাগশিপ ফোনগুলোর তুলনায় ভালো বিকল্প হতে পারে।
বাজেট ফোন কেনার আগে কোন কোন বিষয়ে নজর রাখবেন তা নিয়ে একটি নির্দেশনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অ্যান্ড্রয়েড পুলিস। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর বিস্তারিত।
ডিসপ্লে খতিয়ে দেখুন
ডিসপ্লে বিষয়টি ছোট করে দেখা যাবে না। ডিভাইসের সঙ্গে ব্যবহারকারীর সংযোগ হয় ডিসপ্লের মাধ্যমেই। ভালো ডিসপ্লে ব্যবহারকারীকে দিতে পারে বাড়তি অভিজ্ঞতা। ভিডিও দেখা, গেইম খেলা বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে, ভালো ডিসপ্লে অবশ্যই দরকার।
ভালো ডিসপ্লের জন্য, স্ক্রিনের রিফ্রেশ রেট কত সেটি দেখে নিন। ৯০ হার্টজ বা ১২০ হার্টজের রিফ্রেশ রেটি একটি ৬০ হার্টজ রিফ্রেশ রেটের স্ক্রিনের তুলনায় ভালো অভিজ্ঞতা দেবে।
এ ছাড়া, বাড়তি রেজুলিউশন, ১০৮০পি বা এর বেশি, যেমন ফুল এইচডি প্লাস ডিসপ্লেতে ভিডিও বেশি স্মুথ দেখায়, বিশেষ করে বড় স্ক্রিনওয়ালা ফোনের ক্ষেত্রে রেজুলিউশন বেশি প্রভাব ফেলে।
একইসঙ্গে, স্ক্রিনে কোন শ্রেণির প্যানেল ব্যবহার হয়েছে সেটিও দেখে নেওয়া দরকার। কমদামী ফোনে সাধারণত এলসিডি প্যানেল থাকে। তবে, অ্যামোলেড প্যানেল স্ক্রিনে আরও ভালো রং দেয় ও ব্যাটারি খরচ কমায়।
ব্যাটারি বিশেষ দরকারি
যে কোনো স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেই ব্যাটারি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, কারও যদি কাজের জন্য দীর্ঘ সময় চলাচলের মধ্যে থাকতে হয়, তার জন্য এটি অপরিহার্য। মিলিঅ্যাম্প আওয়ার দিয়ে মাপা হয় ব্যাটারির ক্ষমতা। আর একটি ব্যাটারি কতক্ষণ শক্তি দেবে তা বোঝার একটি ভালো উপায়ও মিলিঅ্যাম্প আওয়ার।
সাধারণত, বেশি মিলিঅ্যাম্প আওয়ারের অর্থ হল বড় ব্যাটারি, যা দীর্ঘ সময় ধরে ফোনকে শক্তি দেবে, যেমন ৫০০০ মিলিঅ্যাম্প আওয়ার বা ৬০০০ মিলিঅ্যাম্প আওয়ারকে বড় ক্ষমতার ব্যাটারি হিসেবে ধরা হয়। তবে, প্রকৃত ব্যাটারি কতক্ষণ টিকে থাকবে তা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে, যেমন স্ক্রিন, ফোনের পাওয়ার সেইভিং সেটিংস, অ্যাপ অ্যাকটিভিটি এবং নেটওয়ার্ক।
পাশাপাশি, বর্তমানে ফাস্ট চার্জিং ফিচার অনেক বাজেট ফোনেই রয়েছে। অনেকেই এ ফিচার নিজের ফোনে চাইতে পারেন, কারণ ফোনকে দ্রুত চার্জ হতে সাহায্য করে এ ফিচার, যা কাজে আসে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে।
প্রসেসর সম্পর্কে জানুন
ফোনের প্রসেসর হল ডিভাইসের মস্তিষ্ক। ডিভাইসের র্যামের সঙ্গে মিলে মাল্টিটাস্কিং ও ডিভাইসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে প্রসেসর। কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ও মিডিয়াটেক হচ্ছে এই সময়ে এ খাতের শীর্ষ দুই নাম। সাধারণত, স্ন্যাপড্রাগনের চিপ বেশি শক্তিশালী হিসেবে বিবেচনা করা হয় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে অ্যান্ড্রয়েড পুলিস। মিডিয়াটেক-এর প্রসেসরগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্সের ওপর জোর দেয়।
এদিকে, গুগল পিক্সেল ডিভাইসে ফ্ল্যাগশিপ স্তরের কর্মক্ষমতা দিতে নিজেদের মালিকানাধীন টেনসর প্রসেসর ব্যবহার করে। অনেক বাজেট ফোনে আবার এক্সিনস প্রসেসরও পেতে পারেন।
প্রতিটি চিপ নির্মাতার একাধিক প্রসেসর বাজারে রয়েছে, যা ভিন্ন ভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরনের কর্মক্ষমতা দিয়ে থাকে। ফোন নেওয়ার আগে এ বিষয়ে নিজে কিছুটা যাচাই বাছাই করে নিতে পারেন।
মেমরি এবং স্টোরেজ
র্যাম হল ফোনের শর্ট টার্ম মেমরি। যত বেশি র্যাম থাকবে, ফোন একসঙ্গে ততবেশি অ্যাপ চালাতে পারবে। যথেষ্ট পরিমাণ র্যাম থাকলে, সহজেই একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে, একাধিক ট্যাব খুলে ওয়েব ব্রাউজ করা যাবে এবং ক্ষেত্র বিশেষে ভালো গ্রাফিক্সের গেইম ও খেলা যাবে।
বাজেট ফোনের বেলায়, মেমরি ও স্টোরেজে অনেক বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন কোম্পানির ডিভাইসে কয়েক সংস্করণে, কয়েক ধরনের র্যাম ও রম পাওয়া যায়।
র্যামের সঙ্গে ফোনের ইন্টারনার স্টোরেজ বা রম-এর বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। এখানে অ্যাপ,ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য ফাইল স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়। অ্যান্ড্রয়েড বাজেট ফোনের ভালো দিক হল এতে মাইক্রোএসডির মাধ্যমে স্টোরেজ বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
বেশিরভাগ বাজেট ফোনে সাধারণত ১২৮জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ থাকে। তবে কেউ, প্রচুর সংখ্যক ফাইল রাখতে চাইলে বা অনেক অ্যাপ ডাউনলোড করার পরিকল্পনা থাকলে ২৫৬জিবি বেশি উপযুক্ত।
অপারেটিং সিস্টেম যাচাই করুন
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম অনেক বেশি কাস্টমাইজ করা যায়। ফলে, নির্মাতা কোম্পানিগুলো স্টক অ্যন্ড্রয়েডের ওপর নিজেদের তৈরি ইউজার ইন্টারফেইস ও ফিচার বসাতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, শাওমি কোম্পানির বাজেট অ্যান্ড্রয়েড ফোন কোম্পানির তৈরি এমআইইউআই ওএস ব্যবহার করে। একইভাবে, নাথিং কোম্পানির ফোনে ব্যবহার হয় ‘নাথিং ওএস’। এই কাস্টম ইউআইগুলো ইউজার ইন্টারফেসকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ ছাড়া , সর্বশেষ অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণে ফোন চালালে বিভিন্ন নতুন ফিচার, সমস্যার সমাধান, নিরাপত্তা ফিচার, এমনকি ডিভাইসের পারফরমেন্সেও বাড়াতে পারে। আর কোন ফোনে অ্যান্ড্রয়েডের সর্বশেষ কোন সংস্করণ চালানো যাবে তার কিছুটা নির্ভর করে অপারেটিং সিস্টেমের ওপর।
পাশাপাশি, একটি ফোন নির্মাতা কোম্পানি নিজেদের ওএস-এ কতোগুলো আপডেট আনবে সেদিকেও নজর রাখুন। কারণ, দীর্ঘদিন ব্যবহার করার পর এটিও ফোনের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলতে পারে।