এআইয়ের তৈরি ছবিতে ‘অদৃশ্য জলছাপে’র পরীক্ষা করছে গুগল

ফিচারটি তৈরি করেছে গুগলের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড। আর এতে কোনো ছবি এআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি কি না, তা শনাক্ত করবে ‘সিনথআইডি’ নামের নতুন টুল।

| ছবি: ডিপমাইন্ড

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে তৈরি ছবি শনাক্তে ‘ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক’ সুবিধা পরীক্ষা করে দেখছে সার্চ জায়ান্ট গুগল। অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে এটি সহায়ক হবে বলে বিবেচনা করছে কোম্পানিটি।

ফিচারটি তৈরি করেছে গুগলের এআইভিত্তিক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ডিপমাইন্ড। আর এতে কোনো ছবি এআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে তৈরি কি না, তা শনাক্ত করবে ‘সিনথআইডি’ নামের নতুন টুল।

এটি ছবির পিক্সেলপ্রতি আনা পরিবর্তন এমবেড করে যাতে ছবির জলছাপ খালি চোখে দেখা না গেলেও কম্পিউটারের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

তবে ডিপমাইন্ড বলেছে, ছবিতে ‘ব্যপক কারসাজি করলে’ তা সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে।

বিবিসি বলছে, প্রযুক্তির বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই কোন ছবি আসল ও কোনটি এআই’র মাধ্যমে তৈরি, তা শনাক্ত করা দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।

এআই জেনারেটর প্রযুক্তি এখন মূলধারার প্রেক্ষাপটে চলে এসেছে। এরইমধ্যে এক কোটি ৪৫ লাখের বেশি ব্যবহারকারী যোগ দিয়েছেন জনপ্রিয় এআই টুল মিডজার্নিতে।

এই ইমেজ টুলের সহায়তায় কেবল টেক্সটের মাধ্যমেই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ছবি তৈরি করার সুযোগ পান ব্যবহারকারী। ফলে, ছবির কপিরাইট ও মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গোটা বিশ্বে।

গুগলের নিজস্ব ইমেজ জেনারেটর সফটওয়্যারের নাম ‘ইমাজেন’। তবে, এটি এমনভাবে নকশা করা যাতে ছবি তৈরি ও জলছাপ যাচাইকরণ কেবল এই টুল ব্যবহার করে তৈরি করা ছবির বেলাতেই প্রযোজ্য।

অদৃশ্য

জলছাপ বলতে সাধারণত এমন কোনো লোগো বা লেখা বোঝায়, যা ছবিতে দেখা যায় ও এর মালিকানা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এতে ছবি চুরি করার প্রবণতা কমে আসার পাশাপাশি মালিকের অনুমতি ছাড়া ছবি ব্যবহার করা জটিল হয়ে ওঠে।

সেজন্যই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও এজেন্সির ওয়েবসাইটে ছবিতে কপিরাইটযুক্ত জলছাপ থাকে। 

তবে, এসব জলছাপের সীমাবদ্ধতাও আছে।

এআই’র তৈরি ছবি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে প্রচলিত জলছাপ যথেষ্ট নয় কারণ এগুলো সহজেই ‘এডিট’ বা ‘ক্রপ আউট’ করা যায়।

বিভিন্ন জনপ্রিয় ভিডিও’র অপব্যবহার ঠেকাতে ‘হ্যাশিং’ নামের কৌশল ব্যবহার করে ‘ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ তৈরি করে থাকে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানি। এর ফলে, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া চুরি করা ভিডিও সহজেই শনাক্ত করা যায় ও দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায়। তবে, কেউ ভিডিও ‘ক্রপ বা এডিট’ করলে কৌশলটি আর কাজে লাগে না।

গুগলের নতুন সফটওয়্যারে এমন কার্যকরী ‘অদৃশ্য জলছাপ’ তৈরি করা যায়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই বুঝতে পারেন যে কোনো ছবি আসল বা মেশিনের মাধ্যমে তৈরি কি না।

ডিপমাইন্ডের গবেষণা বিভাগের প্রধান পুশমিত কোহলি বিবিসিকে বলেন, এর সিস্টেম ছবিকে এমনভাবে পরিবর্তন করে, ‘যা মানুষের চোখে পড়বে না’।

তিনি আরও বলেন, এমনকি ছবি পরবর্তীতে ক্রপ বা এডিট করলেও কোম্পানির সফটওয়্যার জলছাপের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পারবে, যা হ্যাশিংয়ের বেলায় ঘটে না।

“আপনি ছবির রঙ বদলাতে পারেন, ছবির কনট্রাস্ট বদলাতে পারেন, এমনকি এর আকারও বদলাতে পারেন…এর পরও (ডিপমাইন্ড) দেখতে পারবে যে এটি এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি।” --বলেন তিনি।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, নতুন সিস্টেমটি ‘চালু হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে’। আর এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে কোম্পানি চায়, লোকজন এটি ব্যবহার করুক।

মান নির্ধারণ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ও ব্যবহার নিরাপদ করা সম্ভব হয়, তা নিশ্চিত করতে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রে এক ঐচ্ছিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে গুগল’সহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা সাত শীর্ষ কোম্পানি। এর অন্যতম লক্ষ্য ছিল, লোকজন যেন জলছাপের মাধ্যমে কম্পিউটার থেকে তৈরি ছবি শনাক্ত করতে পারেন, সে বিষয়টিও।

কোহলি বলেন, ওই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন হিসেবে এই পদক্ষেপ এল। তবে, অলাভজনক প্রচারণা দল ‘পার্টনারশিপ অন এআই’র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রকল্প প্রধান ক্লেয়ার লেইবউইসজ বলেন, বিভিন্ন ব্যবসার পারস্পরিক যোগাযোগ আরও বাড়ানো দরকার।

“আমি মনে করি, ‘স্ট্যান্ডারডাইজেশন’ বা মান নির্ধারণ এই খাতের জন্য সহায়ক হবে।” --বলেন তিনি।

“এতে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে। তবে, এগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, এর মধ্যে কোন ব্যবস্থা কতটুকু কার্যকর উপায়ে কাজ করছে সেসব তথ্য শেয়ার করা।”

“অনেক প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি পরীক্ষা করছে। এতে জটিলতার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আর আমাদের তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থাকে এআইয়ের তৈরি কনটেন্ট ব্যাখ্যা বা নাকচ করার ক্ষেত্রে এইসব পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হয়।” --বলেন তিনি।

গুগলের মতোই এআইয়ের তৈরি কনটেন্টে জলছাপ যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা।

অন্যদিকে, ‘মেইক-এ-ভিডিও’ নামের অপ্রকাশিত ভিডিও জেনারেটর টুল নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে মেটা। কোম্পানি বলছে, এর মাধ্যমে এআই’র তৈরি ভিডিও’তে জলছাপ যুক্ত করা যাবে, যা তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়ক হবে।

বছরের শুরুতে জলছাপবিহীন এআই’র তৈরি ছবিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন। এর ফলে, আলিবাবা নিজেদের ক্লাউড বিভাগের টেক্সট-টু-ইমেইজ টুল ‘টংগিই ওয়ানজিয়ান’-এ এই সুবিধা চালু করতে বাধ্য হয়েছে।