তিনশ কোটি ডলারের চোরাই বিটকয়েন মিলল পপকর্নের বাক্সে

“আমরা তদন্ত থামাবো না, সেটি যতো দক্ষতার সঙ্গেই লুকানো থাকুক না কেন, এমনকি একটি পপকর্ন টিনের নীচের অংশে থাকা সার্কিট বোর্ডে হলেও।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2022, 01:26 PM
Updated : 8 Nov 2022, 01:26 PM

২০২১ সালে কুখ্যাত ডার্কনেট ওয়েবসাইট থেকে চুরি করা তিনশ ৩৬ কোটি ডলার সমমূল্যের বিটকয়েন জব্দের কথা জানিয়েছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

এক হ্যাকারের বাসার মাটির নীচ তলায় একটি পপকর্নের টিনের ভেতরে থাকা বিভিন্ন ডিভাইসে লুকানো অবস্থায় ছিল ৫০ হাজার ছয়শ ৭৬টি বিটকয়েন। ওই হ্যাকারের নাম জেমস ঝং।

২০১২ সালে অবৈধ ‘সিল্ক রোড’ মার্কেটপ্লেস থেকে অর্থ চুরির এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি।

মার্কিন প্রশাসন বলছে, ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম জব্দের ঘটনা এটি।

বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝংয়ের জর্জিয়ার বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে বছরখানেক আগে, তবে এখন সেটি প্রকাশ পেয়েছে।

বিটকয়েনের দাম আকাশচুম্বি হওয়ার মধ্যেই এই খবর এলো। জব্দ হওয়া সম্পদের বর্তমান মূল্যমান প্রায় একশ ১০ কোটি ডলার।

কর্মকর্তারা বলছেন, ঝংয়ের বাসার মাটির নীচ তলার বাথরুমের তাকে থাকা পপকর্নের টিনের ভেতর একটি ছোট কম্পিউটারের বিভিন্ন হার্ডড্রাইভ ও অন্যান্য স্টোরেজ ডিভাইসে লুকানো অবস্থায় তারা এইসব বিটকয়েন খুঁজে পেয়েছেন।

পুলিশ বলছে, সিল্ক রোড ওয়েবসাইটের পরিশোধ ব্যবস্থায় থাকা ত্রুটির সুযোগ নিয়ে সেখান থেকে অর্থ চুরি করতে পেরেছিলেন ঝং।

২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে, ডার্কনেট মার্কেটপ্লেসে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট খোলেন ঝং। এর পর, তিনি নিজের বিভিন্ন ডিজিটাল ওয়ালেটে অল্প পরিমাণে বিটকয়েন জমা রাখেন। পরবর্তীতে, সন্দেহ এড়াতে তুলনামূলক দ্রুতগতিতে বেশি পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের একটি উপায় খুঁজে পান তিনি।

ডার্কনেটের প্রথম মার্কেটপ্লেস ছিল সিল্ক রোড, যা পরিচালিত হয়েছে আনুমানিক ২০১১ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত।

বিবিসি বলছে, বিশাল পরিমাণ অবৈধ ড্রাগ ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রির জন্য এটি ব্যবহার করে ক্রেতাদের ‘সেবা দিতেন’ বিভিন্ন ড্রাগ ব্যবসায়ী ও অবৈধ বিক্রেতা।

ডার্কনেট ইন্টারনেটের এমন একটি অংশ, যেটিতে প্রবেশের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়।

২০১৫ সালে সিল্ক রোডের প্রতিষ্ঠাতা রস উলব্রিচকে এটি চালানোর দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় মার্কিন আদালত।

এই ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের দায়ে ঝং দোষী সাব্যস্ত হন শুক্রবার, ৪ নভেম্বর। এ ছাড়া, তার সকল বিটকয়েনও জব্দ করেছে পুলিশ।

বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার কারাদণ্ড হতে পারে ২০ বছর পর্যন্ত।

আইনজীবী ডেমিয়েন উইলিয়ামস বলেছেন, এই বিটকয়েন শনাক্তে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেসিং’ নামে পরিচিত একটি কৌশল অবলম্বণ করেছে পুলিশ।

“প্রায় ১০ বছর ধরে, হারিয়ে যাওয়া এইসব বিটকয়েনের বিশাল অংশ ফুলে ফেপে একটি তিনশ ৩০ কোটি ডলারের রহস্যে পরিণত হয়েছে।” --বলেন তিনি।

“আমরা তদন্ত থামাবো না, সেটি যতো দক্ষতার সঙ্গেই লুকানো থাকুক না কেন, এমনকি একটি পপকর্ন টিনের নীচের অংশে থাকা সার্কিট বোর্ডে হলেও।”

সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিপ্টোমুদ্রা ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো জব্দের ঘটনা ছিল এটি। পরবর্তীতে, এই ঘটনাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে ফেব্রুয়ারির আরেকটি ঘটনা, যেখানে ২০১৬ সালে হ্যাক করা লেনদেন প্ল্যাটফর্ম বিটফিনেক্সের চারশ কোটি ডলারেরও বেশি সমমূল্যের বিটকয়েন জব্দ হয়েছিল।