গৃহ নিপীড়ন: অর্ধেকের কান্নাই ‘শোনে না’ সামাজিক মাধ্যম

“ফেইসবুকের সঙ্গে ছয়বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমি কোনো সাড়া পাইনি। আমার জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।”

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2022, 02:17 PM
Updated : 23 Nov 2022, 02:17 PM

সাবেক বা বর্তমান সঙ্গী নিপীড়ক হলে অনেকভাবেই তা করতে পারেন। হাতিয়ারের তালিকা থেকে বাদ যায় না সামাজিক মাধ্যমও। গবেষণা বলছে, নিপীড়নে সামাজিক মাধ্যমের অপব্যাবহার নিয়ে অভিযোগ করলেও অর্ধেকের বেশিই ‘উপেক্ষিত থেকে যায়’ প্ল্যাটফর্মগুলোয়।

এ বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছে যুক্তরাজ্যে গৃহ নিপীড়নে আক্রান্তদের সবচেয়ে বড় আশ্রয় দাতা সংস্থা ‘রেফিউজ’।

সংস্থাটির গবেষণায় উঠে এসেছে, বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে নিপীড়ন ও হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগীদের ৫৩ শতাংশই অভিযোগ তোলার পর ওই প্ল্যাটফর্ম থেকে কোনো সাড়া পাননি।

প্রতি পাঁচজনের দুইজন ভুক্তভোগী বলেছেন, অভিযোগের কোনো সাড়া না পাওয়ায় তারা এরপর আর অপব্যবহার সম্পর্কে প্ল্যাটফর্মকে জানাননি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যপক হারে বেড়েছে এই ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার’। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২২ সালে দুইশ ৫৮ শতাংশ বেশী নারীকে সহায়তা দিয়েছে রেফিউজে’র কর্মীরা।

বর্তমান বা প্রাক্তন সঙ্গী দ্বারা কোনো নারীর অবস্থান ট্র্যাক করতে স্মার্টফোন, সন্তানের আইপ্যাড ও কনসোল ব্যবহার, ইন্টারনেটে ‘রিভেঞ্জ পর্ন’ নামে পরিচিত ভিডিও শেয়ার, ক্রমাগত ফোন কল,বার্তা ও সামাজিক মাধ্যমে হয়রানিকে প্রযুক্তির অপব্যবহার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে রেফিউজ।

এর আগে সংস্থাটির সতর্কবার্তায় উল্লেখ ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এর মধ্যে ভুক্তভোগীর ওপর ‘নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণে’ স্মার্ট লক, ওয়েব ক্যাম ও স্মার্ট হিটিং সিস্টেম কাজে লাগাচ্ছে অপব্যবহারকারী।

“সামাজিক মাধ্যমে প্রাক্তন সঙ্গীর হুমকি, ধাওয়া ও হয়রানি আমাকে জীবন নাশের ভয় দেখিয়েছে। আমার ঠিকানা ফাঁস করে দেওয়া ও প্রতিদিন ক্ষতির হুমকি দেওয়ায় আমি ওই বাড়ি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।” – বলেছেন এক ভুক্তভোগী।

“ফেইসবুকের সঙ্গে ছয়বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমি কোনো সাড়া পাইনি। আমার জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছিল।”

“এমনকি ফেইসবুক যখন স্বীকার করেছে, পোস্টগুলো তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড লঙ্ঘন করেছে, তখনও সেগুলো সরাতে চার মাস সময় নিয়েছে তারা - আমার জন্য এটা হতাশাজনক ছিল।”

প্রযুক্তির অপব্যবহারের শিকার ১৭ জন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি গৃহ নিপীড়ন থেকে উদ্ধার পাওয়া ৮৯ জন ভুক্তভোগীর ওপর অনলাইনে একটি আলাদা সমীক্ষা চালিয়েছেন রেফিউজের গবেষকরা।

“অনলাইন মাধ্যম অপব্যবহারের প্রশ্ন উঠলেও সামাজিক কোম্পানিগুলো দীর্ঘ দিন ধরে এ নিয়ে করণীয় বিষয়াদি নিজেদের আওতায় রাখছে।” -- বলেন রেফিউজের জনসংযোগ প্রধান জেস ইগেলটন।

“ফলে, এটি ভুক্তভোগীদের ঠেলে দিয়েছে ভয়ানক পরিণতির দিকে। অনেক নারীই তাদের কাছে পাঠানো বা তাদের সম্পর্কে বানানো আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ে অভিযোগ তোলার পরও কোনো ফল পাননি।”

এর আগে রেফিউজের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রতি তিন জনের একজন (সর্বমোট এক কোটি দশ লাখ) নারী সামাজিক মাধ্যম বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিপীড়ন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন।