মথ, মাকড়সা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের কাছ থেকে পাওয়া রেশম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এক শক্তিশালী ফাইবার তৈরির চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
Published : 13 Oct 2024, 05:36 PM
এমন এক তরল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, যা সিরিঞ্জের মতো সরু গ্যাজেট থেকে ছুড়লে তা পরিণত হয় শক্তিশালী এক স্টিকি বা আঠালো ফাইবারে। নিজের চেয়েও কয়েকগুণ বেশি ওজনের বস্তু এটি তুলে নিতে পারে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
কমিক বইয়ের সুপারহিরো স্পাইডার-ম্যান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানীরা এই যুগান্তকারী আবিষ্কারটি করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
মথ, মাকড়সা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের কাছ থেকে পাওয়া রেশম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে এক শক্তিশালী ফাইবার তৈরির চেষ্টা করে আসছেন গবেষকরা, যা ব্যবহার করা যেতে পারে ‘টিথার’ হিসাবে।
তবে মাকড়সা রেশমের দৃঢ়তা, স্থিতিস্থাপকতা ও আঠালো বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ধরনের ফাইবার তৈরির বিষয়টি এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল চ্যালেঞ্জিং, বলেছেন ‘টাফটস ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা।
এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাডভান্সড ফাংশনাল ম্যাটিরিয়ালস’-এ। এ নিবন্ধে গবেষকরা এতে বর্ণনা করেছেন ‘দুর্ঘটনাবশত’ পাওয়া নতুন উদ্ভাবন হিসেবে।
গবেষণা অনুসারে, সঠিক মানের আঠা ব্যবহৃত হয়েছে এক বিশেষ ধরনের রেশম মথ প্রোটিন তৈরিতে, যাকে ডাকা হচ্ছে ‘ফাইব্রোইন’ নামে। কোনও সরু সুই দিয়ে উপাদানটিকে ছুড়লে, শক্ত এক আঠালো ফাইবার তৈরি করতে পারে এটি।
“রেশম ফাইব্রোইন ব্যবহার করে অত্যন্ত শক্তিশালী এক আঠালো উপাদান তৈরির প্রকল্পে কাজ করেছি আমি। আমার কাচের জিনিসপত্র অ্যাসিটোন নামের জৈব যৌগ দিয়ে পরিষ্কার করার সময় তখন আমি লক্ষ্য করি, কাচের জিনিসপত্রের নীচে তৈরি হয়েছে একটি জালের মতো উপাদান,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক মার্কো লো প্রেস্টি।
প্রাথমিকভাবে মাকড়সার বিভিন্ন ফাইবারের প্রতিলিপি তৈরির চেষ্টা করেন গবেষকরা। এ সময় তারা লক্ষ্য করেন, বিভিন্ন ‘ফাইব্রোইন’ দ্রবণ বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে ইথানল বা অ্যাসিটোনের মতো রাসায়নিক যৌগের সংস্পর্শে এলে একটি আধা-শক্ত জেল তৈরি করে। তবে ডোপামিনের মতো রাসায়নিক উপাদানের সঙ্গে আঠালো ফাইবার তৈরির প্রক্রিয়াটি ঘটে ‘প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই’।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, রেশম প্রোটিন থেকে পানি কেড়ে নিয়ে এর তরল থেকে কঠিনে রূপান্তর প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে দিতে পারে ডোপামিনের এই মিশ্রণ।
রেশম দ্রবণের একটি পাতলা প্রবাহও খুঁজে পান গবেষকরা, যার আশপাশে রয়েছে অ্যাসিটোনের একটি স্তর। এক বিশেষ ধরনের সিরিঞ্জ দিয়ে ছোড়ার সময় চটচটে ও শক্ত হয়ে যায় এটি। অ্যাসিটোন বাতাসে বাষ্পীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনও বস্তুর সংস্পর্শে আসলে এর সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে পারে ফাইবারটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব ফাইবারকে ২০০ গুণ বেশি প্রসারিত করা যেতে পারে পোকামাকড়ের শক্ত খোসায় পাওয়া প্রোটিন ‘চিটোসান’ যোগ করার মাধ্যমে। অন্যদিকে ফাইবারের আঠালো বৈশিষ্ট্যকে প্রায় ১৮ গুণ বাড়িয়ে দেয় ‘বোরেট বাফার’-এর মতো রাসায়নিক পদার্থ।
সিরিঞ্জের ছিদ্রের উপর নির্ভর করে এসব ফাইবারের ব্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে মানুষের চুলের প্রস্থ থেকে শুরু করে প্রায় আধা মিলিমিটার পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে সিরিঞ্জ দিয়ে ছোড়া এসব ফাইবার বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজেদের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি ওজনের বস্তু তুলে নিতে পারে। মাকড়সার রেশম এখনও প্রায় এক হাজার গুণ শক্তিশালী হলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন উপায়ে প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও উন্নত করা যেতে পারে নতুন এসব ফাইবারকে।