জ্ঞান ফিরে আসার পর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসা পর্যন্ত রোগীদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটে, সেই পরিবর্তনকে মসৃণ করতে সাহায্য করে গান।
Published : 20 Oct 2024, 02:30 PM
গান এক সার্বজনীন ভাষা, যা ছাপিয়ে যেতে পারে কোনও দেশের সীমানা, সংস্কৃতি ও সময়কে। মানুষের আবেগ ও মেজাজকে প্রভাবিত করার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মুহূর্তের কথাও মনে করিয়ে দেয় গান।
রোগীদের অস্ত্রোপচার বা সার্জারি থেকে সেরে উঠতে সহায়তা করে গান — এমনই উঠে এসেছে মেটার সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে।
এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমেরিকান কলেজ অফ সার্জনস ২০২৪ ক্লিনিকাল কংগ্রেস’-এ। যেখানে দেখা গেছে, স্পিকার বা হেডফোনের মাধ্যমে গান শোনার কারণে সার্জারির পর রোগীরা দ্রুত সেরে ওঠেন।
গান ও সার্জারির পর সেরে ওঠা নিয়ে এর আগের প্রকাশিত ৩৫টি গবেষণা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্যালিফোর্নিয়া নর্থস্টেট ইউনিভার্সিটি’র একদল গবেষক।
গবেষকরা বলছেন, যেসব রোগীরা সার্জারির পর গান শোনেন তাদের মধ্যে ব্যথা, উদ্বেগ, ওপিওয়েড ব্যবহার ও হার্ট রেটের মতো প্রধান ৪টি শারীরিক সমস্যা কম দেখা গেছে।
গবেষকদের অনুমান, গান মূলত মানবদেহের কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা সার্জারির পর সেরে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
দেহের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন কর্টিসল বা কর্টিসোল, যা স্ট্রেস হরমোন বা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার হরমোন নামে পরিচিত।
“সার্জারির পর রোগীদের জ্ঞান ফিরলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ভয় পান। এমনকি স্থান-কাল বুঝতেও তাদের সমস্যা হয়,” বলেছেন এ গবেষণার জেষ্ঠ্য লেখক ও ‘ক্যালিফোর্নিয়া নর্থস্টেট ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক এলডো ফ্রেজা।
“জ্ঞান ফিরে আসার পর থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসা পর্যন্ত রোগীদের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটে, সেই পরিবর্তনকে মসৃণ করতে সাহায্য করে গান। পরিবর্তনের ফলে রোগীদের মধ্যে যে চাপ তৈরি হয়, তা কমাতেও সহায়ক গান।”
ধ্যান বা মেডিটেশনের মতো অন্যান্য দরকারি থেরাপির তুলনায় কম প্রচেষ্টা ও মনোযোগ লাগে গান শোনায়। তাই সার্জারির পর রোগীদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে গান শোনার বিষয়টি থেরাপিতে যোগ করা বেশ সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ, বলেছেন গবেষকরা।
“নিশ্চিতভাবে আমরা বলতে পারি না, গান শোনার কারণে রোগীদের ব্যথা একেবারে কমে যাবে। তবে গবেষণায় উঠে এসেছে, গান শোনার ফলে রোগীরা অন্তত এটুকু বুঝতে পারবেন যে, তারা ব্যথা কম বোধ করছেন। ব্যথা কমার বিষয়টিও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেছেন ‘ক্যালিফোর্নিয়া নর্থস্টেট ইউনিভার্সিটি’র মেডিক্যাল শিক্ষার্থী শেহজাইব রেইস।
“সার্জারির পর মানুষকে বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করতে পারে সংগীত। কারণ ব্যথা উপশম করার পাশাপাশি আপনাকে সান্ত্বনা দিতে পারে গান এবং মনে করিয়ে দিতে পারে, আপনি পরিচিত কোনও জায়গায় আছেন।”