এসব হ্যাকার দল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে দেশটির পানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থাও।
Published : 14 Oct 2024, 04:34 PM
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে আছে, তাদের মধ্যে চীন-সমর্থিত হ্যাকারদের নাশকতা ঘটানোর ঝুঁকি সম্ভবত সবচেয়ে বেশি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তদন্ত কর্মকর্তারা একে ‘যুগ পাল্টে দেওয়া হুমকি’ বলে বর্ণনা করছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, চীনা সরকার সমর্থিত এসব হ্যাকার দল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণ চালাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে দেশটির পানি, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যবস্থাও।
কর্মকর্তাদের দাবি, হ্যাকারদের লক্ষ্য হল, ভবিষ্যতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সে সময় সাইবার হামলার জন্য প্রস্তুত থাকা। তারা উদাহরণ হিসেবে বলছেন তাইওয়ানে সম্ভাব্য চীনা আগ্রাসনের কথা।
“চীনের হ্যাকাররা মার্কিন বিভিন্ন অবকাঠামো লক্ষ্য করে এমনভাবে অবস্থান নিচ্ছে যাতে করে সাইবার ধ্বংসাযজ্ঞ শুরু করে দেওয়া যায়, এমনকি আমেরিকান নাগরিক ও কমিউনিটির বাস্তব ক্ষতিসাধন করা যায়। এ হামলা করার সময় আদৌ এসেছে কি না, বা তা কখন ঘটবে, সে সিদ্ধান্তও চীনই নেবে,” বছরের শুরুতে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছেন এফবিআই প্রধান ক্রিস্টোফার রে।
মার্কিন সরকার ও এর মিত্র দেশগুলো এর পর থেকেই চীনের ‘টাইফুন’ শ্রেণির হ্যাকার দলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি তাদের সম্ভাব্য হুমকি নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে।
জানুয়ারিতে ‘ভল্ট টাইফুন’ নামে ডাকা এক হ্যাকার দলের কাজে বাধা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, যাদের ধ্বংসাত্মক সাইবার হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল চীনা সরকার। এর পর সেপ্টেম্বরে মার্কিন কর্মকর্তারা ‘ফ্ল্যাক্স টাইফুন’ নামের আরেক চীনা হ্যাকার দলের একটি বটনেট জব্দ করেন, যা বেইজিংয়ের একটি প্রাইভেট কোম্পানির ছদ্মবেশ ধরেছিল। চীনের সরকারি হ্যাকারদের বিভিন্ন কার্যক্রম গোপন করায় কাজ করত এ হ্যাকার দলটি।
এর পর আবির্ভাব ঘটে ‘সল্ট টাইফুন নামে চীন সমর্থিত নতুন হ্যাকার দলের, যাদের কাছে মার্কিন নাগরিক ও মার্কিন নজরদারির সম্ভাব্য শিকার সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করার সক্ষমতা আছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ফোন ও ইন্টারনেট সেবাদাতার ‘ওয়্যারট্যাপ সিস্টেম’-এর নিয়ন্ত্রণ নিতে দেখা গেছে হ্যাকার দলটিকে।
ভল্ট টাইফুন
এফবিআই প্রধানের মতে, ভল্ট টাইফুন চীন সমর্থিত নতুন এক শ্রেণির হ্যাকার দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে, যাদের লক্ষ্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্পর্শকাতর গোপন তথ্য চুরি করা নয়, বরং মার্কিন সামরিক বাহিনীর ‘প্রস্তুতিতে’ ব্যাঘাত ঘটানো।
ভল্ট টাইফুন প্রথম ২০২৩ সালের মে মাসে চিহ্নিত করেছিল মাইক্রোসফট। এতে দেখা যায়, ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে হ্যাকাররা রাউটার, ফায়ারওয়াল এবং ভিপিএন-এর মতো নেটওয়ার্কের বিভিন্ন যন্ত্রপাতিকে শিকার বানিয়েছিল। তবে বাস্তবে হ্যাকাররা সম্ভবত এ কাজ আরও আগে থেকে করে আসছিল, যা সম্ভবত পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি সাইট টেকক্রাঞ্চ।
ফ্ল্যাক্স টাইফুন
২০২৩ সালের অগাস্টে মাইক্রোসফটের প্রতিবেদনে প্রথম ফ্ল্যাক্স টাইফুনের বিষয়টি জনসমক্ষে আসে, যা চীন সমর্থিত আরেকটি হ্যাকার দল।
কর্মকর্তারা বলছেন, এরা বেইজিংয়ের একটি সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানির ছদ্মবেশ ধারণ করে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করত। এমনকি ‘ইন্টিগ্রিটি টেকনোলজি গ্রুপ’ নামের ওই কোম্পানিটিও চীনের সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক থাকার বিষয়টি জনসমক্ষে স্বীকার করেছে বলে দাবি করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
সেপ্টেম্বরে মার্কিন সরকার বলেছে, তারা ফ্ল্যাক্স টাইফুনের ব্যবহার করা আরেকটি বটনেটের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যাদের হাতে ‘মিরাই’ নামের কুখ্যাত ম্যালওয়্যার আছে। আর এর সঙ্গে সংযোগ আছে লাখ লাখ ইন্টারনেট ডিভাইসের।
সল্ট টাইফুন
সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনের সরকার সমর্থিত সাইবার আর্মি’র মধ্যে সর্বশেষ ও সম্ভবত সবচেয়ে বিপজ্জনক হ্যাকার দলটি হচ্ছে সল্ট টাইফুন।
অক্টোবরে আগের চেয়ে পরিশীলিত সাইবার আক্রমণ করে শিরোনামে এসেছে সল্ট টাইফুন, যা নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
ধারণা করা হচ্ছে, চীন সংশ্লিষ্ট এ হ্যাকার দলটি এটিঅ্যান্ডটি, লুমেন ও ভেরাইজন’সহ বেশ কয়েকটি মার্কিন টেলিকম ও ইন্টারনেট সেবাদাতা কোম্পানির ওয়্যারট্যাপ সিস্টেমে আক্রমণ চালিয়েছে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সল্ট টাইফুন সম্ভবত এইসব কোম্পানির সিস্টেমে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে সাইবার আক্রমণের শিকার সিসকো রাউটার দিয়ে। মার্কিন সরকার বলেছে, তারা এখনও এ তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।