গ্রহাণু দেখে বিস্মিত হওয়া খুবই অস্বাভাবিক এক অনুভূতি। তবে এটা বিস্ময়কর হলেও পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগেই তা শনাক্ত করা গেছে।
Published : 07 Sep 2024, 04:38 PM
মানুষের তৈরি বিভিন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র আকাশের দিকে তাক না করেই খালি চোখে গ্রহাণু দেখা সাধারণত বিরল ও অবাক করার মতো বিষয়।
৬ সেপ্টেম্বর সকালে এমনটাই ঘটেছে ফিলিপিন্সের আকাশে।
গ্রহাণুটি শনাক্ত করার মাত্র এক ঘণ্টা পরই এর থেকে উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি বেরোতে শুরু করে, যা দেখা গেছে দেশটির উত্তরাংশে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে বড় দ্বীপ লুজনের ওপর।
‘২০২৪ আরডব্লিউ১’ নামের ছোট গ্রহাণুটি শনাক্ত হয়েছে নাসার ‘কাতালিনা স্কাই সার্ভে’ জরিপে, তাও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এর প্রবেশের মাত্র এক ঘণ্টা আগে।
এর ব্যাস ছিল মাত্র এক মিটার। আর এটি তেমন হুমকিস্বরূপও ছিল না। যদিও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এটি ‘পৃথিবীতে আঘাত হেনেছে’। তবে, বাস্তবে এটি স্রেফ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত হানে, যেখানে এ ধরনের ছোট বস্তুগুলো ভূমিতে পড়ার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
ফিলিপিন্সের উত্তরাংশে ধারণ করা এক ভিডিওতে এমন এক আলোর ঝলকানি দেখা গেছে, যা আংশিকভাবে মেঘে ঢাকা। আর গ্রহাণুটি খুব অল্প সময়ের জন্য নিজস্ব উপস্থিতির জানান দিয়ে দ্রুতই অদৃশ্য হয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগেই গ্রহাণু শনাক্ত করার কেবল নবম ঘটনা এটি। তবে, ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ বলছে, প্রতি দুই সপ্তাহ পরপরই এই ধরনের এক মিটার ব্যাসের গ্রহাণু পৃথিবীতে আঘাত হানে।
গ্রহাণু দেখে বিস্মিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক এক অনুভূতি। তবে এটা বিস্ময়কর হলেও পৃথিবীতে পৌঁছানোর আগেই তা শনাক্ত করা গেছে।
বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় আকাশ জরিপ ব্যবস্থায় এত ছোট বস্তু শনাক্ত করার বিষয়টিও স্বস্তিদায়ক। তবে এটা ক্ষতি সাধন করার মতো যথেষ্ট বড় হলে এর থেকে আরও উজ্জ্বল আভা বের হতো ও তা আরও আগে শনাক্ত হয়ে যেত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে নোরিজ।
গ্রহাণুটি বিপজ্জনক না হলেও সবসময়ই যে এমন ঘটনাই ঘটবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ২০১৩ সালে রাশিয়ার চেলিয়াবিনস্ক শহরের আকাশে বিস্ফোরণ ঘটেছিল ১৮ টন ওজনের বিশাল এক গ্রহাণুর। পরবর্তীতে এ শহরের নামেই এর নামকরণ হয়।
এ বিস্ফোরণের পর শহরটির ভূখণ্ডে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, যার ফলে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল প্রায় দেড় হাজার মানুষকে। তবে, এতে কেউ নিহত হননি।
ইতিহাসজুড়ে এর চেয়েও বিপর্যয়কর পরিস্থিতি দেখেছে পৃথিবী, যার ছায়া এখনও তাড়া করে বেড়ায় মানব সভ্যতাকে।
উদাহরণ হিসেবে, মেক্সিকো অঞ্চলে আঘাত হানা ক্রেটার ‘চিকসুলুভ’ পৃথিবীর প্রাণীকুলে বড় বিলুপ্তি ঘটায় ও এতে করে ডাইনোসর যুগেরও সমাপ্তি ঘটে। এ ছাড়া, দুইশ কোটি বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসের একটি ইম্প্যাক্টর, যার ফলে ‘ভ্রেডফোর্ট’ নামের ক্রেটারটি তৈরি হয়।
সে তুলনায় বরং ২০২৪ আরডব্লিউ১ কোনো হুমকি ছিল না। বরং এটি একটি আকস্মিক তৈরি হওয়া সুন্দর ও প্রাকৃতিক দৃশ্য হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
তবে, পৃথিবীকে মহাবিশ্বের অনিশ্চয়তা থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যে ঠিক হবে না, সে সতর্কবার্তা মিলেছে এতে। যদিও মানুষের নিত্যদিনের জীবনে সচরাচর এমনটি ঘটে না।