গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের এসব টুইট।
Published : 24 Dec 2024, 06:39 PM
দুদিন পরপরই সর্বকালের সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড ভাঙছে বিটকয়েন। ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েনের দাম এক লাখ পাঁচ হাজার ডলারে নেমে আসার আগে অল্প সময়ের জন্য এক লাখ ছয় হাজার ডলারের ওপরে উঠেছিল, যা এ যাবতকালে এর সর্বোচ্চ দাম।
ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সাররাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ডিজিটাল মুদ্রায় কীভাবে বিনিয়োগ করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
কিন্তু তাদের এসব পরামর্শ কী আসলেই সহায়ক?
বিটকয়েন নিয়ে ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের এসব পরামর্শ ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি করতে পারে বলে উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়।
গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বাড়িয়ে তুলতে পারে ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের এসব টুইট।
“আমাদের গবেষণার বিভিন্ন ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে, ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের বিভিন্ন টুইট প্রায়ই ক্রিপ্টোমুদ্রায় অল্প সময়ে লাভের মুখ দেখায়। কারণ, বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে এরা,” বলেছেন ‘ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক কেন মের্কলে।
ডিজিটাল মুদ্রার লাভ কম সময়ে হারিয়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদী লোকসানের দিকে নিয়ে যেতে পারে বিনিয়োগকারীদের। এর থেকে বোঝা যায়, ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের পরামর্শে প্রায়ই সঠিক মূল্যায়নের অভাব থাকে। বিষয়টি অনেকটা ‘জমানত জালিয়াতি’র মতো হতে পারে।
দুই বছরে ১৮০টি সুপরিচিত ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারের প্রায় ৩৬ হাজার টুইট বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা, যেখানে এক হাজার ছয়শরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর নজর দিয়েছেন তারা। এসব টুইট পোস্ট করার দিন থেকে এর ৩০ দিন পরে ডিজিটাল মুদ্রার দাম কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল তা ট্র্যাক করেছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বেড়েছে। প্রথম দিনে বেড়েছে গড়ে ১.৮৩ শতাংশ এবং দুই দিনের মধ্যে বেড়েছে ১.৫৭ শতাংশ।
কিন্তু এই মূল্য বৃদ্ধি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। পঞ্চম দিনের প্রথম দিকে দাম কমতে শুরু করে, দ্বিতীয় দিন থেকে পঞ্চম দিনের গড় রিটার্ন নেমে আসে ১.০২ শতাংশ লোকসানে। ৩০ তম দিনে রিটার্ন আরও নেমে আসে মাইনাস ৬.৫৩ শতাংশে।
এ গবেষণার সহ-লেখক মার্ক পিওরকোভস্কি বলেছেন, “কেউ যদি টুইটের দিন কম পরিচিত বিভিন্ন ক্রিপ্টো টোকেন কিনে ৩০ দিনের জন্য নিজের কাছে রাখেন তবে আপনি প্রায় ৭.৯ শতাংশ মূল্য হারাবেন। ফলে আপনার বার্ষিক ক্ষতি দাঁড়াবে ৬২.৮ শতাংশ।”
গবেষণায় দেখা গেছে, নিজেদের ক্রিপ্টো বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করা বিশেষ করে যাদের ফলোয়ার সংখ্যা বেশি রয়েছে এমন ইনফ্লুয়েন্সারের বিভিন্ন টুইট বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও খারাপ ফলফল বয়ে এনেছে।
ইনফ্লুয়েন্সারদের টুইটের পর তাদের পরামর্শ মেনে ডিজিটাল মুদ্রা শিগগিরই বিক্রি করে দিলে সেক্ষেত্রে লাভ করা সম্ভব। তবে এ কৌশলটি বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও অবাস্তব।
ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম বাড়তে থাকায় এ নিয়ে গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ। এফবিআই বলেছে, ২০২৩ সালে ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারিতে ৫৬০ কোটি ডলার হারিয়েছে আমেরিকানরা, যা ২০২২ সাল থেকে বেড়েছে ৪৫ শতাংশ।
গবেষণায় উঠে এসেছে, ক্রিপ্টো ইনফ্লুয়েন্সারদের পরামর্শ অল্প সময়ের জন্য লাভজনক হলেও তা দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই “বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হওয়া উচিত”, বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক উইলিয়ামস।