এখন টুইটার চালাচ্ছেন কারা?

ছোট এই দলে আছেন মাস্কের ব্যক্তিগত আইনজীবী, তার চিফ অফ স্টাফ, একাধিক বিনিয়োগকারী বন্ধু এবং টুইটারের এক সাবেক নির্বাহী যিনি দীর্ঘদিন আগেই কোম্পানিটি ছেড়েছেন।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2022, 05:01 PM
Updated : 8 Nov 2022, 05:01 PM

গত মাসের শেষ সপ্তাহে টুইটার অধিগ্রহণ সম্পন্ন করেই কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীদের চারজনকে বরখাস্ত করেন ইলন মাস্ক। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন তবে টুইটার চালাচ্ছেন কারা?

পুরোনোদের বাদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইলন মাস্ক টুইটারের পরিস্থিতি বোঝা এবং তার দৃষ্টিভঙ্গির বাস্তবায়ন শুরু করার জন্য একটি ছোট কাউন্সিল তৈরি করেছেন বলে উল্লেখ করেছে মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্ট। ছোট এই দলে আছেন মাস্কের ব্যক্তিগত আইনজীবী, তার চিফ অফ স্টাফ, একাধিক বিনিয়োগকারী বন্ধু এবং টুইটারের এক সাবেক নির্বাহী যিনি দীর্ঘদিন আগেই কোম্পানিটি ছেড়েছেন।

নতুন এই দলটি এরইমধ্যে গণছাঁটাই সম্পন্ন করেছে, কোম্পানির কনটেন্ট মডারেশন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে এবং অর্থের বিনিময়ে ইউজার ভেরিফিকেশন প্যাকেজ তৈরি করেছে। এর পাশাপাশি দলটি বসেছে বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গেও, যারা এখন খানিকটা দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন টুইটারের চলতি কার্যকলাপ এবং যাদের কাছ থেকে প্ল্যাটফর্মটির আয়ের সিংহভাগ এতোদিন এসেছে।

এখনও ঠিক বোঝা যাচ্ছে না এই দলটি কতদিন এভাবে টুইটার চালাবে, তবে আপাতত, তারা কোম্পানিটিকে চালিয়ে নেওয়া এবং এর আয় বাড়ানোর দায়িত্ব পালন করছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কারা আছেন এই সভাসদ তালিকায়-

ইলন মাস্ক

বিশ্বের শীর্ষ ধনী, মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি টুইটারের শীর্ষ ব্যবহারকারীদের একজন। আর এখন প্ল্যাটফর্মটির মালিক হিসাবে তিনি নিজের পরিচয় দিচ্ছেন "চিফ টুইট" হিসাবে। কোম্পানির সাম্প্রতিক একটি আর্থিক নথি থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে তিনি টুইটারের প্রধান নির্বাহীও।

মাস্ক এরইমধ্যে টেসলা এবং স্পেসএক্সসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানির নেতৃত্বে রয়েছেন। টুইটারের নতুন মালিক হিসাবে তার হাতে বিশাল ক্ষমতা এসেছে। এর ফলে তিনি কনটেন্ট মডারেশনের জন্য নীতিমালা বদলানো থেকে শুরু করে টুইটারে কর্মীসংখ্যা এক ধাক্কায় কমিয়ে ফেলা, সাইটটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ফি আদায়ের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

হাতে-কলমে ব্যবস্থাপনায় মাস্কের নিজস্ব পদ্ধতি আছে। ডেডলাইন নিশ্চিত করার জন্য এর আগে তার টেসলা কারখানার ভেতরেই ঘুমানোর রেকর্ড আছে। টুইটারের বেলাতেও তিনি প্রায় একই পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। সেখানকার এক কর্মী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, মাস্ক প্রত্যেকের কাজ ‘মাইক্রোম্যানেজ’ করছেন। টুইটারে দরকারি পরিবর্তন কীভাবে আনা সম্ভব সে বিষয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি অন্যায়ভাবে লক করা অ্যাকাউন্ট নিয়ে প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছেন।

জেসন ক্যালাকানিস

মাস্ককে টুইটার কেনায় বাধ্য করতে যে মামলা হয়েছিল, তাতে প্রমাণ হিসেবে জেসন ক্যালাকানিসের সঙ্গে তার মেসেজ চালাচালির বিষয় প্রকাশ্যে আসে। প্রযুক্তি বিনিয়োগকারী, পডকাস্ট হোস্ট এবং মাস্কের দীর্ঘদিনের এই সহযোগী টুইটারে দরকারি পরিবর্তন নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ইলন মাস্ককে। মাস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে মালিকানা হাতে পাওয়ার পর ক্যালাকানিস টুইটারে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে জানতে চাইছেন তারা কী ধরনের ফিচার দেখতে চান প্ল্যাটফর্মটিতে।

এই ক্যালাকানিসেরই পরামর্শ হচ্ছে টুইটার কর্মীদের সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিনের জন্য অফিসে আসা বাধ্যতামূলক করা। এতে করে কর্মীরা স্বেচ্ছায় চলে যাওয়ার মাধ্যমে ২০ শতাংশ কর্মীহ্রাস করা সম্ভব হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। টুইটারের প্রিমিয়াম ফিচারের সমালোচনা করে তিনিই বলেছেন ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট আরও বেশি গ্রাহকের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।

এর পাশাপাশি তিনি ছোট এক আব্দার করেছেন ইলন মাস্কের কাছে। ওই এসএমএস বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, টুইটারের সিইও হতে পারা তার স্বপ্ন।

মাস্ক তাকে সিইও করেননি, তবে হাতবদল আর এই ক্রান্তিকালে পাশে রেখেছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের পদ দিয়ে। সোমবার ক্যালাকানিস এক টুইট বার্তায় জানান, টুইটারের পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতাদের সঙ্গে দেখা করতে তিনি নিউইয়র্কে গিয়েছেন।

জ্যারেড ব্রিশাল

ব্রিশাল মাস্কের সবচেয়ে কাছের উপদেষ্টাদের একজন এবং ২০১৬ সাল থেকে তার পারিবারিক কার্যালয়ের প্রধান হিসাবে এই শতকোটিপতির ব্যক্তিগত সম্পদের দেখভাল করেন। মর্গান স্ট্যানলি’র সাবেক এই সম্পদ ব্যবস্থাপক মাস্কের টুইটার কেনায় অর্থায়নে সহায়তা করেছেন।

নিউরালিঙ্কের প্রধান নির্বাহীও ছিলেন ব্রিশাল। মস্তিষ্কে ইন্টারফেস প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা এই স্টার্ট-আপের পাশাপাশি তিনি মাস্কের সুরঙ্গখনন কোম্পানি বোরিংয়ের পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছেন। এটি এখনও স্পষ্ট নয় যে টুইটারে তিনি আসলেও ক্ষমতা প্রয়োগ করেন, না কি কেবল কাগুজে দায়িত্বে আছেন। ব্লুমবার্গ বলছে, ব্রিশাল হচ্ছেন মাস্কের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দাতা। এর মধ্যে বাড়ি কেনাবেচা এবং নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগের কাজগুলো রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে টুইটারে ভেতরে তারকা হয়ে ওঠা লোকদের একজন ব্রিশাল।

অ্যালেক্স স্পিরো

নিউ ইয়র্কের ওকালতি কোম্পানি কুইন ইমানুয়েলের আইনজীবী স্পিরো গত কয়েক বছর ধরে মাস্কের কাছাকাছি থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পরা কিশোর ফুটবল দলের উদ্ধারে নিয়োজিত এক ডুবুরীকে মাস্কের অপমানসূচক টুইটের মামলা থেকে উদ্ধারে সহায়তা করেছিলেন স্পিরো।

স্পিরো বিখ্যাত খেলোয়াড় এবং সঙ্গীত শিল্পীদের প্রতিনিধিও। এর মধ্যে রয়েছে অ্যারন হার্নান্দেজের ২০১৬ সালের হত্যা মামলা এবং র‌্যাপার জেজি’র সঙ্গে এক সুগন্ধী ব্র্যান্ডের মামলায় সহায়তা দেওয়া। এ বছরের শুরুতে মাস্ক টু্ইটার কেনা থেকে পিছিয়ে যেতে চাইলে তার বিরুদ্ধে যখন মামলা করে বসে প্ল্যাটফর্মটি, স্পিরো তখন মাস্কের আইনজীবী দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মাস্ক টুইটার না কেনার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন, তবে ধরে রেখেছেন স্পিরোকে।

স্পিরো এখন টুইটারে আইন, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক, নীতিমালা এবং বিপণন দল পরিচালনা করছেন বলে জানিয়েছেন এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল চার সূত্র। সম্প্রতি কার্যকর হওয়া ছাঁটাই পরিকল্পনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।

ডেভিড স্যাকস

স্যাকস এই শতকের গোড়ার দিকে পেপ্যাল টিমে মাস্কের সঙ্গে ছিলেন। পেপ্যাল বিক্রি হয়ে গেলে তিনি এবং মাস্ক দুজনের হাতেই অনেক অর্থ আসে। তখন থেকেই স্যাকস সফল বেশ কয়েকটি স্টার্ট-আপে বিনিয়োগ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারবিএনবি, ফেইসবুক এবং উবার। রক্ষণশীল এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মার্কিন রিপাবলিকান দলে একজন অর্থদাতা। বছরের শুরুতেই সান ফ্রান্সিসকোর ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি চেসা বৌডিনের নির্বাচনী প্রচারণায়ও অর্থ ঢেলেছেন তিনি।

সেপ্টেম্বরেই তিনি রাশিয়ার দখলে থাকা পূর্ব ইউক্রেইনে এক গণভোটের পক্ষে এক নিবন্ধ লেখেন যেখানে প্রশ্ন ছিল তারা ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ায় যোগ দিতে চান কিনা। ওই ধারণা মাস্ক পরে নিজেই টুইট করেছিলেন।

শ্রীরাম কৃষ্ণান

কৃষ্ণান সিলিকন ভ্যালির অন্যতম শীর্ষ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ‘আন্দ্রেসেন হরোউইটস’-এ ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ’ বিভাগের প্রধান। এই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণে ৪০ কোটি ডলার বিনিয়োগও করেছে। তিনি এর আগে ফেইসবুক, স্ন্যাপচ্যাট এবং ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টুইটারের পণ্য উন্নয়ন বিভাগে কাজ করেছেন।

সোমবার এক টুইটে তিনি বলেন, তিনি কেবল ‘সাময়িকভাবে’ টুইটারে মাস্ককে সাহায্য করছেন। কৃষ্ণান ঠিক কী করছেন তা স্পষ্ট নয়, তবে মাস্কের দলের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি এর আগে টুইটারে কাজ করেছেন।