অধিকারকর্মীদের দলগুলোই টুইটারের আয় কমার কারণ: মাস্ক

মাস্কের কনটেন্ট মডারেশন শিথিল করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকারকর্মীদের দল।

প্রযুক্তি ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2022, 04:43 PM
Updated : 5 Nov 2022, 04:43 PM

বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতার ওপর অ্যাক্টিভিস্ট দলগুলোর চাপ প্রয়োগকে টুইটারের ‘আয়ে বড় ধাক্কার’ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন প্ল্যাটফর্মটির নতুন মালিক ইলন মাস্ক।

“অ্যাক্টিভিস্টরা’ টুইটারের মডারেশন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘আমেরিকায় বাকস্বাধীনতা ধ্বংসের চেষ্টা করছে।” --টুইট করেন মাস্ক।

‘খরচ কমানোর চেষ্টায়’ শুক্রবার বিশ্বব্যাপী ব্যপক হারে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরপরই মাস্কের এই মন্তব্য এলো। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে ইঙ্গিত মিলছে, এরইমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন কোম্পানির হাজার হাজার কর্মী।

টুইটারের সামগ্রিক কর্মশক্তির ‘আনুমানিক ৫০ শতাংশ’ কর্মী ছাঁটাইয়ের কথা এক টুইট থ্রেডে নিশ্চিত করেছেন কোম্পানির নিরাপত্তা প্রধান ইয়োয়েল রথ।

তিনি আরও যোগ করেন, সম্মুখসারিতে কাজ করা দুই হাজারের বেশি কনটেন্ট মডারেটরের কাজে এই ছাঁটাইয়ের কোনো প্রভাব পড়েনি।

মাস্ক এক টুইটে বলেছেন, তার কাছে এ ছাড়া আর ‘কোনো উপায়’ ছিল না।

তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তিন মাসের অগ্রিম বেতন প্রদানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ছাঁটাইকৃত কর্মীদের, যা প্রচলিত আইনের দেড়গুণ।

কনটেন্ট মডারেশন বিষয়ে তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে টুইটারের ‘দৃঢ় প্রতিজ্ঞা’ এখনও ‘সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত’ আছে।

মাস্কের কনটেন্ট মডারেশন শিথিল করার পাশাপাশি বিতর্কিত ব্যক্তিদের আজীবন নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন অনলাইন সুরক্ষা বিষয়ক দল। বিতর্কিত এসব ব্যক্তিদের তালিকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পও আছেন।

শুক্রবার কর্মীদের পাঠানো এক অভ্যন্তরীন ইমেইলে এইসব ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে টুইটার বলেছে, “কোম্পানির সাফল্যের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে দুর্ভাগ্যবশত ব্যাপকভাবে চাকরি ছাঁটাই করা প্রয়োজন।”

বিভিন্ন কর্মী টুইটারে নিশ্চিত করেছেন, তাদেরকে কাজের ল্যাপটপ ও মেসেজিং ব্যবস্থা ‘স্ল্যাক’ থেকে লগ আউট করে দেওয়া হয়েছে।

অনেক কর্মী বলেছেন, প্ল্যাটফর্মে তাদের পোস্ট করার ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে।

এর মধ্যে আছে যোগাযোগ, কনটেন্ট মডারেশন ও পণ্য উন্নয়ন বিষয়ক কর্মীরাও।

কোম্পানির এক সাবেক ব্যবস্থাপকের টুইট অনুযায়ী, টুইটারের অ্যালগরিদম ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করা দলও ছাঁটাই তালিকায় রয়েছে। তবে, পরবর্তীতে এটি নাকচ করেছে কোম্পানিটি।

টুইটারের প্রায় পুরো আয়ই আসে বিজ্ঞাপন থেকে। মাস্ক সামাজিক প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর থেকে এতে বিজ্ঞাপন বন্ধ করা ব্রান্ডগুলোর একটি হলো ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি ফোকসভাগেন।

“আমরা গভীরভাবে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি ও এর ওপর নির্ভর করে পরবর্তী পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেব।” --বলেছে ফোকসভাগেন।

বৃহস্পতিবার, একই কাজ করেছে ‘চিরিওস’ ও ‘লাকি চার্মসের’ মতো ব্রান্ডের মালিক কোম্পানি ‘জেনারেল মিলস’।

কোম্পানিটি বলেছে, টুইটারের ‘নতুন নেতৃত্ব’ নিয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি বাজারে নিজেদের খরচের বিষয়টিও মূল্যায়ন করে দেখছে তারা।

প্ল্যাটফর্মটিতে আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ করা অন্যান্য ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে আছে গাড়ি নির্মাতা ‘জেনারেল মোটর্স’, আউডি’ এবং ওষুধ উৎপাদক ‘ফাইজার’।

বৃহস্পতিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন টুইটারের বিভিন্ন কর্মী। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ও ক্যালিফোর্নিয়ার আইন লঙ্ঘন করে ৬০ দিনের অগ্রিম নোটিশ দেওয়ার আগেই কর্মী ছাঁটাই করছে কোম্পানিটি।

স্যান ফ্রান্সিসকো ফেডারেল আদালতে দায়ের করা ওই মামলার আর্জিতে রয়েছে, টুইটার যেন ছাঁটাই করা কর্মীদের আদালতের এই মামলা সম্পর্কে না জানিয়ে তাদের অধিকার মওকুফ সংশ্লিষ্ট কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে না বলে।

“আমরা এই ফেডারেল অভিযোগ দায়ের করেছি যাতে টুইটার আমাদের আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকে ও কর্মীদের নিজস্ব অধিকার বুঝাতে সাহায্য করে।” --বলেছেন মামলাটির আইনজীবী শ্যানন লিস-রিওরডান।

এই প্রসঙ্গে টুইটারের মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করেছিল বিবিসি।