“আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ আর্থিক জালিয়াতির মূল হোতা স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিড, যিনি এমন শত কোটি ডলারের স্কিম নকশা করেছেন, যা তাকে ক্রিপ্টো কিং বানিয়েছে।”
Published : 04 Nov 2023, 02:13 PM
এফটিএক্স থেকে অর্থ পাচার ও জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ চালানো স্যাম-ব্যাংকম্যান ফ্রিড।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের আদালতে এক মাস দীর্ঘ শুনানির শেষ দিনে কয়েক ঘণ্টা আলোচনা শেষে এ রায় দিয়েছেন মামলার জুরি।
বিবিসি বলছে, এই রায়ে ক্রিপ্টো শিল্পের অন্যতম পরিচিত মুখ হওয়া থেকে একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামী হিসেবে পতন ঘটতে দেখা গেছে ৩১ বছর বয়সী সাবেক ধনকুবের ফ্রিডের।
এখন কয়েক দশক পর্যন্ত কারাভোগের দ্বারপ্রান্তে ফ্রিড। আর এ সাজা নির্ধারিত হবে ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ।
গত বছরের নভেম্বরে এফটিএক্স ধসের পরপরই ফ্রিডকে বাহামা দ্বীপপুঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম আর্থিক জালিয়াতির মূল হোতা হলেন স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রিড, যিনি এমন শত কোটি ডলারের স্কিম নকশা করেছেন, যা তাকে ক্রিপ্টো কিং বানিয়ে দিয়েছে।” --রায়ের পর দেওয়া বিবৃতিতে বলেন মামলার আইনজীবী ডেমিয়েন উইলিয়ামস।
“এ মামলায় মিথ্যা, প্রতারণা ও চুরি, সবই ছিল। তবে, আমরা এতে সায় দেইনি।”
মামলার ফ্রিডের বিরুদ্ধে বিনিয়োগকারী ও পাওনাদারদের কাছ থেকে সত্য লুকিয়ে এফটিএক্স থেকে শত শত কোটি ডলার চুরির অভিযোগ তোলে মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যা ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কোম্পানিটির দেউলিয়া হওয়ার মূল কারণ ছিল। আর ফ্রিডের জালিয়াতি ও অর্থ পাচার নিয়ে সর্বমোট সাতটি অভিযোগ তোলা হয় এ মামলায়।
এইসব অভিযোগের বিপরীতে ফ্রিড নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসলেও তিনি যে ভুল করেছেন, সেটা স্বীকার করেছেন ফ্রিড। তার ভাষ্যমতে, এমন পরিস্থিতি আসুক, তা তিনি চাননি।
রায়ের পর ফ্রিডের আইনজীবি মার্ক কোহেন বলেন, “আমরা জুরির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তবে, এ ফলাফল হতাশাজনক।”
“ফ্রিড এখনও নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। আর এইসব অভিযোগের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে লড়ে যাবেন তিনি।”
এ রায়ের বিপরীতে ফ্রিড আপিল করবেন কি না, সে সম্পর্কে বিবিসি ফ্রিডের এক মুখপাত্রের মন্তব্য জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক সাড়া মেলেনি।
এ ছাড়া, ফ্রিডের সাবেক বন্ধু ও সহকর্মী’সহ তার সাবেক প্রেমিকা ক্যারোলিন এলিসন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছেন। আর নিজেদের সাজা কমানোর আশায় ফ্রিডের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেও রাজী হন তারা।
শুনানির পরবর্তী তারিখে তাদের সাজা ধার্য হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
“ফ্রিডের সহকর্মীদের ক্রমাগত চাপ দিয়ে, তাদের সঙ্গে দ্রুত সমঝোতায় এসে ও অত্যন্ত সুচারুভাবে বিচারকাজ চালিয়ে এ মামলায় জিতেছে সরকার।” --বলেন সাবেক ফেডারেল আইনজীবি রেনাতো মারিওটি।
“মামলার জটিলতা না বাড়িয়ে বরং একে বড় জালিয়াতি হিসেবে বিবেচনা করার চেষ্টা করেছেন তারা।”
এর প্রমাণ হিসেবে এফটিএক্স-এর শুরুর দিনগুলোয় ফ্রিডের আরেক কোম্পানি আলামেডা রিসার্চে গ্রাহকদের অর্থ পাচারের বিষয়টি উত্থাপন করেছে মামলার বাদীপক্ষ, যখন প্রচলিত ব্যাংকগুলো কোম্পানিটির অ্যাকাউন্ট খোলা নিয়ে আগ্রহী ছিল না।
ফ্রিড ক্রমাগত জনসমক্ষে দাবি করে আসছেন, এ অর্থ সুরক্ষিত আছে। তবে, আদতে আলামেডার অর্থ তিনি পাওনাদারদের অর্থ শোধ, জমি কেনা ও রাজনৈতিক অনুদানের জন্য ব্যবহার করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বিবিসি।
গত বছরের নভেম্বরে এফটিএক্স দেউলিয়া হওয়ার সময় আলামেডার কাছে কোম্পানির পাওনা ছিল আটশ কোটি ডলার।
“তিনি এই অর্থ নিয়েছেন। তিনি জানতেন, এটা ভুল ছিল। এর পরও তার এমন কাজ করার কারণ হল, তিনি ভেবেছেন যে তিনি অন্যদের তুলনায় স্মার্ট ও এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে পাবেন।” --শুনানির শেষ পর্যায়ে বলেন মামলার সহকারী অ্যাটর্নি নিকোলাস রুস।
বিবিসি বলছে, ফ্রিড মামলায় নিজের পক্ষে অবস্থান ধরে রাখার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই আশায় যে, মামলার জুরিরা তাকে অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হবেন।
“এটা খুবই কাঁচা সিদ্ধান্ত ছিল” --বলেন ফ্রিডের আইনজীবি মার্ক কোহেন। আর শুনানিতে তিনি ফ্রিডকে এমন এক বোকা গণিতবিদ হিসেবে উপস্থাপন করেন, যিনি কোম্পানির আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সামলাতে পারেননি।
তার মতে এ বিষয়গুলো ভুল হলেও “কোনো অপরাধ নয়।”
ফ্রিড মামলায় নিজের বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে আর্থিক আদান-প্রদানের বিষয়টিকে ‘গ্রহণযোগ্য’ হিসেবে দেখান। আর সাক্ষ্যে বলেন, এই আর্থিক ফাঁকফোকড় নিয়ে তার ধারণা ছিল না।
এফটিএক্স পতনের ফলে অনেক গ্রাহকই নিজেদের অর্থ ফেরত পাননি।