ডান ও রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কালিন জর্জস্কু টিকটকে তার প্রচারণায় অ্যাপটির রেকমেনডেশন অ্যালগরিদম, বিজ্ঞাপন ফিচার ব্যবহার করেছেন।
Published : 08 Dec 2024, 05:14 PM
রোমানিয়ার প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
২৪ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর শুক্রবার ফলাফল বাতিলের এ ঘোষণা আসে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ডয়চে ভেলে।
“রোমানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া পুরোপুরি নতুন করে চালু করা হবে।” – ঘোষণা করেছে দেশটির শীর্ষ আদালত। নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বৈধতা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স মালিকানাধীন অ্যাপ টিকটক নির্বাচনি ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কালিন জর্জস্কু, ডানপন্থী ও রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, টিকটকের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছেন। এতে অ্যাপটির রেকমেনডেশন অ্যালগরিদম, বিজ্ঞাপন ফিচারও তিনি ব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
আগে কিছুটা পেছনের সারির প্রার্থী হিসেবেই ছিলেন জর্জস্কু। কোনো রাজনৈতিক দলের অংশ নন, নির্বাচনের আগে সব সমীক্ষায় অন্তত কম ভোট পেয়েছেন। অংশ নেননি কোনো টেলিভিশন বিতর্কেও। এতকিছু সত্ত্বেও প্রথম রাউন্ডের ভোটে জিতেছেন জর্জস্কু।
টিকটক কী সত্যিই অগ্রাধিকার দিয়েছে জর্জস্কুকে?
প্রশ্নটি উঠছে মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে টিকটকে তার উপস্থিতির কারণে।
জর্জস্কুর টিকটক চ্যানেলে ৫২ লাখেরও বেশি অনুসারী রয়েছে। পাশাপাশি, অ্যাকাউন্টটি ৫৭ লাখ লাইক অর্জন করেছে ও তার প্রচারের ভিডিওগুলো লাখ লাখবার দেখা হয়েছে টিকটকে। এসব ভিডিওতে তিনি কেবল রোমানিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সমালোচনাই করেন না, রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে মিথ্যা দাবিও করেন। অনেক ভিডিওতে তাকে জুডো খেলতে বা ঘোড়ায় চড়তেও দেখা যায়, ঠিক তার শ্রদ্ধার পাত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতন।
জর্জস্কু নির্বাচনে প্রথম রাউন্ডে জিতলে অনেক পর্যবেক্ষক অবিশ্বাস্যভাবে বিস্মিত হন এবং হতাশ হয়ে পড়েন বলে লিখেছে ডয়চে ভেলে। নির্বাচনটি তাকে দ্বিতীয় রাউন্ডেও জয়ী হওয়ার কাছাকাছি এনেছে, যা মূলত রোববারের জন্য নির্ধারিত ছিল।
রোমানিয়ার নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের মতে, জর্জস্কুর সাফল্যে টিকটক অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
প্ল্যাটফর্মটি রোমানিয়াতে ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশের এক কোটি ৯০ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে অন্তত ৯০ লাখ মানুষ, বিশেষ করে তরুণরা পরিষেবাটি ব্যবহার করেন।
রোমানিয়ার অন্যান্য শীর্ষ রাজনীতিবিদরা টিকটকে উপস্থিত থাকলেও কেউই জর্জস্কুর মতো এত মানুষের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। তবে, ফলাফলে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের এক তৃতীয়াংশেরও নিচে জর্জস্কুর পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ টিকটককে জর্জস্কুকে সুবিধা দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। ভোটের আগে, তারা প্ল্যাটফর্মটিকে নির্দেশ দিয়েছিল, প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীদের অবশ্যই প্ল্যাটফর্মে চিহ্নিত করতে হবে ও তাদের আর্থিক উৎস প্রকাশ করতে হবে।
কতৃপক্ষ বলছে জর্জস্কুর বেলায় এ নিয়ম প্রয়োগ করেনি টিকটক। ফলে, অন্যান্য প্রার্থীদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছেন তিনি। রোমানিয়ার মিডিয়া ওয়াচডগ ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটির বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য ইইউকে আহ্বান জানিয়েছে।
টিকটক বলছে ‘কোনো সম্পর্ক নেই’
টিকটক সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এর জবাবে তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, নির্বাচনের আগে কয়েক হাজার জাল অ্যাকাউন্ট ও লাখ লাখ জাল লাইক ও ফলোয়ার সরিয়ে ফেলেছে প্ল্যাটফর্মটি।
সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি আরও দাবি করেছে, রোমানিয়ার অভ্যন্তরে বা বিদেশ থেকে গোপন হস্তক্ষেপের কোনো ইঙ্গিত খুঁজে পায়নি।
এদিকে, একজন জার্মান যোগাযোগ বিজ্ঞানী ও টিকটোক বিশেষজ্ঞ মার্কাস বোশ, ডিডব্লিউ-কে বলেছেন তিনি এখানে একটি স্পষ্ট দ্বিমুখী আচরণ দেখছেন।
“এটি কীভাবে হতে পারে যে হস্তক্ষেপের কোনোও ইঙ্গিত না থাকা সত্ত্বেও অগণিত অ্যাকাউন্ট ও লাইক সরানো হয়েছে?”
বোশের মতে প্রধান সমস্যা হল টিকটক অনেক লোক ব্যবহার করছে, আর অন্যদিকে শক্তিশালী ও স্বাধীন মিডিয়া ব্র্যান্ডগুলো বাজার থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
তবে, এটি কেবল টিকটকের ক্ষেত্রে না, সব সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের বেলাতেই সত্যি, যোগ করেন তিনি।
“টিকটক হল ‘অ্যাপ অফ দ্য মোমেন্ট’, এর মানে হল পরবর্তীতে অন্যান্য প্ল্যাটফর্মেও একইধরনের থিম এবং ট্রেন্ডস পাওয়া যায়।” – বলেছেন বোশ।
“আমাদের সমাজ, রাজনীতিবিদ ও প্ল্যাটফর্ম অপারেটরদের অবশ্যই বুঝতে হবে এমন হুমকি ও মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে, সামনেও থাকবে এবং আরও দৃঢ় হবে। এর বিপক্ষে আরও প্রস্তুত হতে হবে এবং কৌশলগত যোগাযোগের প্রেক্ষাপটে পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছে থাকতে হবে।”