চাঁদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বস্তু দিয়েই যদি নির্মাণকাজ সম্ভব হয়, তবে তা চাঁদে মানব বসতি নির্মাণে ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে।
Published : 30 Jun 2024, 05:52 PM
নানা ধরনের লেগো সেটই এর আগে বাজারে এসেছে। এর মধ্যে অনেকগুলোতেই থিম হিসাবে এসেছে নভোচারীরা। তবে, এবার এমন এক বস্তু দিয়ে লেগোর টুকরা তৈরি হল, যা সাধারণত নভোচারীরা মহাশূন্যে খোঁজেন।
বস্তুটি হল সত্যিকারের উল্কার ধূলা, যা থেকে লেগোর টুকরা বানাতে ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইএসএ’র সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করেছে ড্যানিশ কোম্পানি ‘লেগো’। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই লেগো ব্রিক বা পিসগুলো দেখা যাবে বাছাই করা বিভিন্ন লেগো স্টোরের প্রদর্শনীতে। এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটন এলাকার ফিফথ এভিনিউ’তে অবস্থিত একটি বড় শাখাও আছে।
প্রকল্পটি স্রেফ মজা করার জন্য তৈরি, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। প্রযুক্তি সাইট এনগ্যাজেট বলছে, চাঁদের ধূলা দিয়েই যে বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব, এটি সেই আইডিয়াকেই তুলে ধরছে। আর এক্ষেত্রে বিবেচনায় এসেছে পৃথিবী থেকে চাঁদে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী বা অবকাঠামো পাঠাতে যে বিশাল পরিমাণ শক্তি ও আর্থিক খরচ হতে পারে, সে বিষয়টিও। এর পরিবর্তে, চাঁদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন বস্তু দিয়েই যদি নির্মাণকাজ সম্ভব হয়, তবে তা চাঁদে মানব বসতি নির্মাণে ‘গেইম চেঞ্জার’ হিসেবে কাজ করবে।
চাঁদের পৃষ্ঠে নুড়ি পাথর ও খনিজের একটি স্তর আছে, যা ‘লুনার রেগোলিথ’ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই প্রচলিত ধারণা ছিল, চাঁদে প্রথম মানব বসতি নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ধরনের রেগোলিথের প্রয়োজন পড়বে। কারণ, এরা আগে থেকেই তৈরি করা, যেখানে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করে এদেরকে নির্মাণযোগ্য বস্তুতে রূপান্তর করা সম্ভব। সর্বোপরি, ধূলা, মাটি ও বালি থেকে অবকাঠামো নির্মাণে হাজার হাজার বছরের ইতিহাস তো মানুষের আছেই।
তবে, পরীক্ষা করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ ‘লুনার রেগোলিথ’ নেই পৃথিবীতে। সে কারণে ইএসএ’র বিজ্ঞানীরা নিজেরাই একটি রেগোলিথ বানিয়েছেন, যেখানে তারা অনেক পুরোনো উল্কার ধূলা ব্যবহার করেছেন।
তারা এইসব ধূলাকে একটি মিশ্রণে যোগ করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ব্যবহার হয়েছিল লেগোর টুকরা ৩ডি প্রিন্ট করতে। এগুলো প্রচলিত লেগোর টুকরার মতোই একত্রে লেগে যায়, যদিও এর রং একটিই, যা নিশ্চিতভাবেই ‘স্পেস গ্রে’ অর্থাৎ মহাকাশে দেখতে পাওয়া ধুসর রং।
“চাঁদে এখনও কেউ অবকাঠামো দাঁড় করাতে পারেনি। তাই আমাদের এ ‘স্পেস ব্রিক’ বানাতে যত ধরনের পদ্ধতি পরখ করে দেখা সম্ভব, তা করতে পারার বিষয়টিও অসাধারণ। এমনকি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এইসব পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা বোঝার বিষয়টিও একইসঙ্গে মজাদার ও গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ছিল,” বলেন ইএসএ’র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এইডান কাউলি।
মানব সভ্যতা আসলে চাঁদে সত্যিকারের ঘাঁটি নির্মাণের অনেক কাছাকাছি পর্যায়ে। এদিকে, ২০৩০ সাল নাগাদ চাঁদে প্রথম স্থায়ী মানব ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে ‘ইটালিয়ান স্পেস এজেন্সি’ ও ‘থেলস এলেনিয়া স্পেস কর্পোরেশন’র সঙ্গে জোট বেঁধেছে নাসা। এর সম্ভাব্য সাম্প্রতিক নকশাগুলোর মধ্যে রয়েছে আকারে ছোট বাড়ি থেকে শুরু করে পুরোদস্তুর গ্রামও।