চাঁদে নির্মিত ভৌত অবকাঠামোর মধ্যে অন্যতম প্রয়োজনীয় অংশ এসব টাওয়ার, যার গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, এসব টাওয়ার কোন উপাদান নিয়ে গঠিত।
Published : 06 Oct 2024, 02:18 PM
চাঁদে মানুষের দীর্ঘমেয়াদী উপস্থিতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ভৌত অবকাঠামো। আর, চাঁদে টেকসই মানবঘাঁটি নির্মাণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে আমেরিকা ও চীন উভয় দেশই।
সেই ধারাবাহিকতায় চাঁদে এমন টাওয়ার দরকার যেটি নিজে থেকেই নিজেকে দাঁড় করাবে। এ ধরনের টাওয়াকে সেখানে ভৌত অবকাঠামো তৈরির জন্য অন্যতম দরকারি অংশ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
সৌর প্যানেল থেকে শুরু করে চাঁদে যোগাযোগের অ্যারে পর্যন্ত অসংখ্য টুল থাকবে এসব টাওয়ার। একইসঙ্গে চাঁদের মাধ্যাকর্ষণে এরা ওজন যত বেশি ধরে রাখতে পারবে, ততই এরা কাজের হয়ে উঠবে।
তাই, কাঠামোর দৃষ্টিকোণ থেকে এসব টাওয়ারের ‘সেট-আপ’ বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আর, এজন্য কাজ করছেন ‘নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটি’ ও নাসার ‘ল্যাংলি রিসার্চ সেন্টার’-এর গবেষকরা।
এরইমধ্যে নাসার ‘সেলফ-ইরেক্টএবল লুনার টাওয়ার ফর ইনস্ট্রুমেন্টস বা এসইএলটিআই’ প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে বেশ কিছু প্রযুক্তি। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এসব টাওয়ারের উপাদান।
এ গবেষণায় ‘করোগেটেড রোলএবল টিউবুলার বুম বা করোটব’ ও ‘কলাপসএবল টিউবুলার মাস্ট বা সিটিএম’ নামের দুই ধরনের উপাদান খতিয়ে দেখেন গবেষকরা। এখানে ‘করোটব’ একটি পেটেন্ট করা প্রযুক্তি, যেটি মূলত ছোট উপগ্রহে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা।
একটি কিউবস্যাট বা ছোট উপগ্রহের ছোট, আঁটসাট প্যাকেজে ভাঁজ করে রাথা যাবে অথচ ভাঁজ খুললে স্যাটেলাইটের চেয়ে অনেক বড় আকারের অ্যান্টেনা হবে, এমন কাঠামো বসানোয় সুবিধা দেবে এটি। এ প্রযুক্তিটিকেই গবেষকরা চাইছেন চাঁদে যে ‘বুম মাস্ট’ বসাতে চাইছেন, সেখানে ব্যবহার করতে। পুরোপুরি বসানোর পর এটি দেখতে হবে অনেকটা নৌকার পালের মতো।
অন্যদিকে নির্মাণ কোম্পানি ‘অপ্টেরাস’ বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করে ‘সিটিএম’। এর নকশার ফলে এটি টেপের রোলের মতো আকৃতিতে থাকে এবং খোলার পর সমতল পৃষ্ঠে বিছানো যায়।
এসব টাওয়ারের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বুম-এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর ভার ধরে রাখার জন্য যেটি দরকার- একটি তার।
টাওয়ারের দুই পাশে দুই বাহু থেকে নিচে ঝুলে থাকবে ভাঁজ খোলা সিটিএম আর টাওয়ার থেকে বাহুর দুই প্রান্তের ভার বহন করবে টাওয়ারের শীর্ষ থেকে বাহুর প্রান্তে টেনে দেওয়া তার- অনেকটা সাসপেনশন ব্রিজের মতো।
গবেষকরা যে যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন টাওয়ারের বিভিন্ন বিষয় হিসাব করতে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ‘রেলে-রিটজ’ নামের এক গাণিতিক বিশ্লেষণ পদ্ধতি। কোনো কাঠামো কতটা ভর বহন করতে পারবে সেটি হিসাব করতে ব্যবহার হয় এ পদ্ধতি।
তবে চাঁদের বেলায় এই হিসাব পৃথিবীর চেয়ে আলাদা। মাধ্যাকর্ষণ সেখানে অনেক কম এবং বাতাস নেই। ফলে অতিরিক্ত সাহায্যের প্রয়োজন হবে না।
এর আগে ‘হানিবি রোবোটিক্স’-এর ‘লুনারসাবার’ প্রকল্পে আমরা দেখেছি, ১০০ মিটার লম্বা বিভিন্ন মাস্ট ‘করোটব’ ও ‘সিএমটি’ভিত্তিক বিভিন্ন টাওয়ারের মতো সমস্যার একটি সমাধান করতে পারে।
চাঁদে একটি সম্পূর্ণ প্রোটোটাইপের জন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বিশ্বের একাধিক দল যে এ নিয়ে কাজ করছে, সেটি মানবঘাঁটি নির্মাণের জন্য একটি ভাল লক্ষণ।