গল্পটি শুরু হয়েছিল ‘অরডভিসিয়ান ইম্প্যাক্ট স্পাইক’ নামে পরিচিত এক যুগে, যখন পৃথিবীতে উল্কাপাতের আঘাত হানার মতো অভিজ্ঞতা অহরহই ঘটত।
Published : 27 Sep 2024, 12:32 PM
অস্ট্রেলিয়ার মনাশ ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক অ্যান্ডি টমকিনস গবেষণা করছেন পৃথিবীপৃষ্ঠে উল্কাপাতের ঘটনা নিয়ে। উল্কাপাতের ফলে তৈরি ২১টি গর্ত নিয়ে কাজ করছেন তিনি। দ্যুম করে তার মাথায় প্রশ্ন এলো- প্রায় সাড়ে ৪৬ কোটি বছর আগে এতোগুলো উল্কাপাত কেন পৃথিবীর পেট বরাবর, মানে বিষুব রেখা অঞ্চলেই ঘটবে?
এ রোমাঞ্চকর ধারণাটি উঠে এসেছে ‘আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্স’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে, যা পৃথিবীর আদি ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে।
নতুন তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বলছেন, একসময় পৃথিবীতে হয়ত শনির মতোই এক ধরনের বলয় ছিল।
আর এ বলয় যতি সত্যিই থেকে থাকে, তবে সেটি সম্ভবত ৪৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের ঘটনা।
গল্পটি শুরু হয়েছিল ‘অরডভিসিয়ান ইম্প্যাক্ট স্পাইক’ নামে পরিচিত এক যুগে, যখন পৃথিবীতে উল্কাপাতের মতো ঘটনা অহরহই ঘটত।
উল্কাপাতের আঘাতে তৈরি ওই ২১টি গর্তের অবস্থান বিষুবরেখার কাছাকাছি হলেও, সে সময়ে পৃথিবীর সিংহভাগ স্থলের অবস্থান ছিল অন্য কোথাও। গবেষকরা বলছেন, এই অস্বাভাবিক নমুনাকে প্রচলিত বিভিন্ন তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
অধ্যাপক টমকিনস ও তার দলের গবেষণায় একটি সম্ভাব্য সমাধান উঠে এসেছে। এইসব প্যাটার্ন তৈরির পেছনে সম্ভবত হাত ছিল বড় কোনো গ্রহাণুর, যেটি পৃথিবীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিল।
তথ্যনির্ভর অনুমান আরও এগিয়ে নিয়ে গবেষকরা বলছেন, গ্রহাণুটি কাছে আসতে আসতে এক সময় সম্ভবত পৃথিবীর ‘রোশে’ সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলে। এটি এমন এক জায়গা, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ জোয়ারের প্রভাবে গ্রহাণুটি ভাঙতে শুরু করে। আর এর ভাঙা টুকরোগুলো থেকে পৃথিবীর চারপাশে একটি বলয় তৈরি হয়েছিল, অনেকটা গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ শনির বলয়ের মতোই।
ঘটনাটি অরডভিসিয়ান যুগের প্রায় শেষ নাগাদ ঘটেছিল, যা গত ৫০ কোটি বছরের অন্যতম শীতল যুগ হিসেবে পরিচিত।
গবেষণাটি শুধু অরডভিসিয়ান ইম্প্যাক্ট স্পাইক নিয়ে নতুন ব্যাখ্যাই দিচ্ছে না, বরং কীভাবে এমন বলয় ব্যবস্থার মতো মহাজাগতিক ঘটনা পৃথিবীর জলবায়ু ও জীবন বিকাশকে আকার দিয়েছিলে, তা নিয়েও বিভিন্ন রোমাঞ্চকর প্রশ্ন তুলছে।