“তাদের টিজার ভিডিও দেখুন- সবখানেই একজন ব্যক্তি একা এই হেডসেট নিয়ে সোফায় বসা। আমার কথা হচ্ছে, এটা হয়তো কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ, কিন্তু সেটা আমি চাই না।”
Published : 11 Jun 2023, 05:55 PM
অ্যাপলের নতুন হেডসেট ব্যয়বহুল, ‘যাদুকরী নয়’ ও মেটার ভবিষ্যত পরিকল্পনার সঙ্গে একেবারেই যায় না- এমনই মূল্যায়ন মেটা সিইও মার্ক জাকারবার্গের।
এই সপ্তাহে অ্যাপ নির্মাতাদের জন্য বিশেষ আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্স (ডব্লিউডব্লিউডিসি)’-এ অগমেন্টেড রিয়ালিটির সুবিধা থাকা ‘ভিশন ওয়ান’ হেডসেটটি উন্মোচন করে অ্যাপল।
আয়োজনে ডিভাইসের হার্ডওয়্যার ও ‘স্পাশিয়াল কম্পিউটিংয়ের’ নতুন ধারণা, দুটোই দেখিয়েছে অ্যাপল। আর আগামী বছর থেকেই এটি বাজারে পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
হেডসেটটির দাম সাড়ে তিন হাজার ডলার। পাশাপাশি, এতে ‘ডিটেইলড ডিসপ্লে’ ও ক্যামেরার মতো বেশ কিছু ফিচার রয়েছে, যা ব্যবহারের সময় ‘বাস্তব জগত দেখার’ মতো অভিজ্ঞতা ব্যবহারকারী পাবেন বলে দাবি অ্যাপলের।
হেডসেটটির উন্মোচন অ্যাপলকে মেটার সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় ঠেলে দিয়েছে, কারণ, বেশ কয়েক বছর ধরেই কোয়েস্ট সিরিজের হেডসেট উৎপাদন করে এই বাজার আধিপত্য করছে কোম্পানিটি।
পাশাপাশি, মেটার হেডসেট দামেও তুলনামূলক সাশ্রয়ী। আসন্ন মেটা কোয়েস্ট ৩ হেডসেটের দাম কেবল চারশ ৯৯ ডলার। তবে, এর মধ্যে অ্যাপলের কয়েকটি ফিচার নেই বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
অ্যাপলের হেডসেট উন্মোচনের প্রতিক্রিয়ায় মেটার প্রধান নির্বাহী জাকারবার্গ বলছেন, এটি ‘কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা’ প্রদর্শন করলেও ‘সেটি তার কল্পনার সঙ্গে যায়নি’।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে অ্যাপল হেডসেটের সকল প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণ করেছে মেটা। তবে, কোম্পানিটি নিজেদের পণ্যে এর কিছু সংখ্যক প্রযুক্তির ব্যবহার এড়িয়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি কোম্পানির কর্মীদের ‘বাড়তি খরচের’ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ভার্জ।
জাকারবার্গ বলেন, এই খরচের বিষয়টি হেডসেট উৎপাদনে মেটা ও অ্যাপলের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য। পাশাপাশি, হেডসেটের মূল মনোযোগ বিভিন্ন সামাজিক ও ফিটনেসবিষয়ক ফিচারে থাকবে, মেটার এমন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
“শুরুতেই আমি বলতে চাই, সুসংবাদ হল, পদার্থবিদ্যার নানা সূত্রের প্রয়োগের বেলায় তাদের কাছে এমন কোনও জাদুকরী সমাধান নেই, যা আমাদের দল এরইমধ্যে খুঁজে পায়নি বা ভেবে দেখেনি।” --বলেন তিনি।
“তারা উচ্চ রেজুলিউশনের ডিসপ্লে নিয়ে কাজ করেছে। পাশাপাশি, তারা এটি চালাতে যে সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, তাতে সাতগুণ বেশি খরচ হয়। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এতো বেশি বিদ্যুৎ লাগে যে, শুধু ব্যাটারি দিয়ে হবে না– তারের সংযোগও লাগবে। তারা এমন নকশার পক্ষে বাজি ধরেছে, যা তাদের হিসাব অনুসারেই কেবল যুক্তিযুক্ত মনে হবে।”
“তবে দেখুন, তাদের ঘোষণা আসলে তাদের সঙ্গে আমাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তুলে ধরে, এবং আমি যা ‘সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মনে করি, আমাদের কোম্পানি সেটিই অনুসরণ করছে। আমরা এমনভাবে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি, যা সাশ্রয়ী হয় এবং সবার হাতের নাগালে থাকে। আমাদের কার্যক্রমের মূল বিষয়ই এটা। এরইমধ্যে কোয়েস্ট সিরিজের কোটি কোটি হেডফোন বিক্রি করেছি আমরা।”
“এর চেয়েও গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমাদের মেটাভার্সের গোড়ার বিষয় এবং লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ। এর মাধ্যমে আমরা নিত্যনতুনভাবে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরির উপায় নিয়ে কাজ করি। আমাদের ডিভাইসও সে দৃষ্টিকোন থেকেই সক্রিয় ও কাজ করে। আর তাদের টিজার ভিডিও দেখুন- সবখানেই দেখবেন একজন ব্যক্তি একা এই হেডসেট নিয়ে সোফায় বসা। আমার কথা হচ্ছে, এটা কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ হলেও, সেটা আমি চাই না।”
“তাদের আর আমাদের পথ চলায় সত্যিকারের দর্শনগত পার্থক্য আছে। আর তাদের পণ্য দেখার পর এবং তারা কোন পথে এগুচ্ছে সেটি বোঝার পর আমি আগের চেয়েও বেশি রোমাঞ্চ অনুভব করছি। অনেক দিক থেকেই আমি এখন আগের চেয়েও আশাবাদী যে, আমরা যেভাবে এগোচ্ছি সেটাই অর্থবহ এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে, এই প্রতিযোগিতা অনেক আনন্দের হবে।”
এর আগে মেটা ও অ্যাপল একসঙ্গে কাজ করলেও কোম্পানিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্যও দেখা গেছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অ্যাপল বিভিন্ন প্রাইভেসি ফিচার চালু করে ফেইসবুকের বিজ্ঞাপন ব্যবসায় প্রয়োজনীয় ট্র্যাকিং ব্যবস্থার পথ সংকুচিত করে দেয়। এর ফলে, কোম্পানি দুটোর মধ্যে ঝামেলাও হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট।