“স্টেম খাতে কাজ করা সকল নারীই অর্থের জন্য সংগ্রাম করছেন। এমনটি সবসময় ঘটে থাকলেও দিনদিন এই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।”
Published : 17 Sep 2024, 06:03 PM
বিভিন্ন কর্পোরেশনের বাজেট কমে যাওয়া এবং সংস্কৃতিগত পরিবর্তনের কারণে টিকে থাকতে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলী ও গণিত বা ‘স্টেম’ খাতের নারীদেরকে।
প্রতি বছরের অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার স্টেম খাতে কাজ করা নারীদের জন্য পালিত হয়ে থাকে ‘অ্যাডা লাভলেস ডে’। তবে তা কতদিন চালানো যাবে, সেটা দিনদিন অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
২০০৯ সালে ১৯ শতকের নারী গণিতবিদ অ্যাডা লাভলেসের নামে এই দিনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুক্তরাজ্যের নারী সংবাদকর্মী সু চারম্যান-অ্যান্ডারসন।
তিনি বিজ্ঞানে স্নাতক পাশ করলেও নিজের ক্লাসে থাকা তিন নারীর একজন হওয়ায় তিনি এ বিষয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ বোধ করেছিলেন বলে উঠে এসেছে বিবিসি’র প্রতিবেদনে। আর পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্মেলনে গিয়ে মঞ্চে নারীদের অনুপস্থিতিও তাকে হতাশ করেছিল।
চারম্যান-অ্যান্ডারসন বলছেন, তার এ উদ্যোগে আর্থিক অনুদানের মাত্রা ফুরিয়ে আসছে। আর প্রায় দুই বছর আগেও এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন তিনি।
“আমরা এর পর থেকেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি,” বলেন তিনি।
“নিজ গাটের পয়সা খরচ করে আমি এটা চালিয়ে যেতে পারব না।”
এটা কোনো বড় বাজেটের কাজ নয়। এর সর্বোচ্চ সাফল্যে চারম্যান-অ্যান্ডারসন এক বছরের জন্য প্রায় সাড়ে ৭২ হাজার ডলারের স্পনসরশিপ নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন। তিনি বলছেন, অন্যান্য বছরে এ বাজেট অর্ধেকেরও কম হলেও এর বিভিন্ন আয়োজনে উপস্থিতির মাত্রা অনেক বেশি ছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি মহলে অ্যাডা লাভলেস ডে প্রায়শই অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে আখ্যা পেলেও এর পেছনে পয়সা খরচ নিয়ে তেমন সাড়া মেলে না।
“কোনো সংগঠন কেবল অনুপ্রেরণা দিয়ে চলতে পারে না,” বলেন তিনি।
“স্টেম খাতে কাজ করা সকল নারীই অর্থের জন্য সংগ্রাম করছেন। এমনটি সবসময় ঘটে থাকলেও দিনদিন এই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে।”
অনলাইনভিত্তিক এক জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, স্টেম খাতে কাজ করা নারীরা নিজেদের বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েক মাস ধরেই কোনো কনটেন্ট পোস্ট করেননি।
এ বছর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ‘উইমেন হু কোড’, যার সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৪৫ হাজার। জুন মাসে সংস্থাটি ঘোষণা দেয়, তাদের ‘অর্থায়নের বিভিন্ন উৎসে প্রভাব পড়ায়’ তারা নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে।
এদিকে, প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর বন্ধ হয়ে গেছে মার্কিন অলাভজনক সংগঠন ‘গার্লস ইন টেক’। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও মার্কিন অধিকারকর্মী আড্রিয়ানা গ্যাসকোইন সংবাদ সাইট ভেঞ্চারবিট’কে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তের পেছনে ‘মূল কারণ’ ছিল পর্যাপ্ত আর্থিক অনুদান না পাওয়া।
এর পাশাপাশি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক উদ্যোগ ‘টেক ট্যালেন্ট চার্টার’ও জুন মাসে বন্ধ হয়ে গেছে, যা প্রযুক্তি খাতে আরও বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে নকশা করা হয়েছিল। এর দায় চেপেছে বিভিন্ন প্রযুক্তির ওপর। কারণ তারা সমতা, বৈচিত্র্য ও নারীদের অন্তর্ভূক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিশ্রুতি অর্থাৎ ‘ইডিআই’ থেকে ‘নীরবেই সরে গেছে’।
ইডিআই’র পূর্ণরূপ হল ‘ইকুয়ালিটি, ডাইভার্সিটি অ্যান্ড ইনক্লুশন’।
এ বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি অসংখ্য বিতর্ক হচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন ছোট ও বড় কর্পোরেশনে ইডিআই সংশ্লিষ্ট দল ছাঁটাই বা বাজেট কমিয়ে আনার কাড়ি কাড়ি উদাহরণ দেখা গেছে।
ইডিআই’র তীব্র সমালোচকদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্কও, যিনি জানুয়ারিতে কোনো রাখঢাক না রেখেই পোস্ট করেছিলেন, ‘এটা স্রেফ বর্ণবাদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত আরেকটি শব্দ’।
তবে, মাস্কের মন্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেছেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক।
“প্রযুক্তি খাত থেকে অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব। তবে, এজন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈচিত্র্য থাকাটাও জরুরি যাতে আপনি শুধু ভালো সমাধানের মধ্যেই আকড়ে না থাকেন,” ২০২২ সালে বিবিসি’কে বলেছিলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি খাতে নারীদের ঘাটতি থাকার বিষয়টি ‘ভালো কোনো অজুহাত’ হতে পারে না।