“আমরা নিজেদের পুরো জীবদ্দশায় বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাই, তা খুব স্পষ্ট হলেও দুটি সময় রয়েছে, যখন আমাদের দেহে সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটে।”
Published : 18 Aug 2024, 04:33 PM
৪০ থেকে ৬০ বয়সে মানবদেহ দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, এমনই তথ্য উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
মধ্য ৪০-এ অনেকের দেহেই অপ্রীতিকর বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে রয়েছে শরীর আর আগের মতো কাজ না করা, শারীরিক ক্ষতের ঘটনা বেড়ে যাওয়া এমনকি পেশীতে দুর্বল অনুভূতির মতো বিষয়গুলো।
মানবদেহের এই শারীরিক অবস্থা কী কারণে হতে পারে, তার ইঙ্গিত মিলেছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার এজিং’-এ বুধবার প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায়।
এতে গবেষকরা খুঁজে পান, মানবদেহের ভেতর ও বাইরে থাকা বিভিন্ন অণু ও অণুজীব নানা নাটকীয় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, যার মধ্যে প্রথমবার এমনটি ঘটে ৪৪ বছর বয়সে ও দ্বিতীয়বার ঘটে ৬০-এর কোঠায় পৌঁছানোর পর। আর এইসব পরিবর্তন দেহের ‘কার্ডিওভাসকিউলার’ স্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন ঘটায়।
২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ১০৮ স্বেচ্ছাসেবীর রক্ত ও অন্যান্য জৈবিক নমুনা বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল পেয়েছেন ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা।
“আমরা নিজেদের পুরো জীবদ্দশায় বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যাই, তা খুব স্পষ্ট হলেও দুটি সময় রয়েছে, যখন আমাদের দেহে সত্যিকারের পরিবর্তন ঘটে,” বলেছেন ‘স্ট্যানফোর্ড মেডিসিন’-এর ‘সেন্টার ফর জিনোমিক্স অ্যান্ড পার্সোনালাইজড মেডিসিন’ বিভাগের অধ্যাপক ও এ গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক মাইকেল শ্নাইডার।
“উদাহরণ হিসেবে, মধ্য ৪০-এ মানবদেহের বিভিন্ন লিপিড মেটাবলিজম ও ৬০ পেরোনোর পর দেহে শর্করা হজমে বড় পরিবর্তন ঘটে।”
লিপিড হল মানবদেহের এমন চর্বিযুক্ত উপাদান, যার মধ্যে রয়েছে ‘এলডিএল’, ‘এইচডিএল’ ও ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’। দেহের অনেক ধরনের কাজে এদের ব্যবহার থাকলেও এগুলোর মাধ্যমে দেহে রক্ত তৈরি হলে, তা ক্ষতিকর হতে পারে।
এ গবেষণায় বিভিন্ন ধরনের অণুর নমুনা ট্র্যাক করেছেন বিজ্ঞানীরা, যার মধ্যে রয়েছে ‘আরএনএ’, প্রোটিন এমনকি অংশগ্রহণকারীদের মাইক্রোবায়োমও।
এ গবেষণায় গবেষকরা যেসব বিপাকীয় পরিবর্তন খুঁজে পেয়েছেন, তা থেকে ইঙ্গিত মেলে, বয়স ৪০ হয়ে গেলে মানুষ শুধু ধীরে ধীরে ক্যালরিই পোড়াচ্ছে না, বরং তাদের দেহের খাবার ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়াটিও বদলে যাচ্ছে। তবে এ ধরনের পরিবর্তন স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।
এর আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বিশ্রামের শক্তির ব্যবহার বা বিপাকীয় হারে কোনো পরিবর্তন আসে না। নতুন গবেষণার বেলাতেও এ নিয়ে কোনো বিরোধিতা দেখা যায়নি।
অ্যালকোহল বা ক্যাফেইন নেওয়ার ক্ষেত্রে মানবদেহ কী ধরনের আচরণ করে, তাতে প্রভাব ফেলে বিভিন্ন বিপাকীয় পরিবর্তন। তবে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের সম্ভাব্য পরিণতির বিষয়টি এখনও পরিষ্কার না হলেও ক্যাফেইনের ক্ষেত্রে এটি উচ্চতর সংবেদনশীলতার কারণ হতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।