লেনদেন টানা তিন দিন ছিল হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহের পর এই চিত্র আর দেখা যায়নি।
Published : 24 Jan 2024, 04:52 PM
দুই দিন পর ফের বড় দরপতন হলো পুঁজিবাজারে।
৩৫টি কোম্পানিকে হাতে রেখে বাকিগুলোর শেয়ারের সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পর রোববার বড় দরপতনের পর দুই দিন বাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখি।
মঙ্গলবার থেকে আরো ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পরও সূচকের উত্থানে আশা সঞ্চার হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে বুধবার ফের দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আর্থিক লোকসান বেড়েছে।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক পড়েছিল ৯৬ পয়েন্ট, যদিও লেনদেন শুরু হয়েছিল ২১৬ পয়েন্ট পতনের মধ্য দিয়ে। সেখান থেকে ১২০ পয়েন্ট পুনরুদ্ধারের পর সোমবার ১৪ পয়েন্ট এবং মঙ্গলবার ২১ পয়েন্ট উত্থানের পাশাপাশি টানা দুই দিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছিল।
বুধবারও লেনদেন হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গত বছরের জুনের প্রথম সপ্তাহের পর এই প্রথম টানা তিন দিন এই চিত্র দেখা গেল। তবে ৪৯ পয়েন্ট সূচকের পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বস্তিতে নেই।
একজন বাজার বিশ্লেষক অবশ্য একে ‘স্বাভাবিক’ সংশোধন হিসেবে দেখছেন। তার মতে অনেক দিন পর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা-বেচা করতে পারছেন। তারা একটি স্ক্রিপ্ট বাদ দিয়ে অন্যটিতে ঢুকছেন। এভাবেই বাজার আগাবে।
সকালে উত্থান বিকালে পতন
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পর পর সূচক বাড়তে থাকে আগের দিনের মতোই। এক পর্যায়ে ১০ টা ১৩ মিনিটে ১৮ পয়েন্ট বেড়েই লেনদেন হচ্ছিল। তবে এরপর থেকে তা কমতে থাকে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে পতনের গতি।
শেষ পর্যন্ত প্রায় ৫০ পয়েন্ট হারিয়ে ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স এর অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ২২৬ পয়েন্টে। অথচ আগের দুই দিনে সূচক বেড়েছিল ৩৬ পয়েন্ট।
এদিন দিনের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে ৬৭ পয়েন্ট কমায় লেনদেনের প্রথম ভাগে যারা শেয়ার কিনেছেন, দিন শেষে তারাও বড় লোকসানে পড়েছেন।
এমন কোনো খাত ছিল না যা দরপতনের মধ্য দিয়ে যায়নি। কেবল ৬১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে, বিপরীতে কমেছে ৩০৫টি। ৩০টি কোম্পানি হাতবদল হয় আগের দিনের দরে।
সূচকের পতনে ওয়ালটনের ভূমিকাই ছিল সবচেয়ে বেশি। কোম্পানিটির ৭ শতাংশ দরপতনে সূচক কমেছে ১১.৫১ পয়েন্ট। ইউনাইটেড পাওয়ারের দর ৮.৭১ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ৬.৯৫ পয়েন্ট, সাবমেরিন কেবল কোম্পানি ২.১১ পয়েন্ট, সামিট পাওয়ার ২ পয়েন্ট, বিকন ফার্মা ১.৮১ পয়েন্ট, তিতাস গ্যাস ১.১৫ পয়েন্ট. আইপিডিসি ১ পয়েন্ট সূচক ফেলেছে।
ডিএসইর পরিচালক ও শহীদুল্লাহ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আজ কয়েকভাগে কেনা-বেচা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। কেউ দাম ভালো দেখে বিক্রি করেছেন, আবার কেউ মনে করছেন দাম পড়ে যেতে পারে তাই আজকেই বিক্রি করে সতর্ক হয়েছেন।’’
আরেক শ্রেণি আরো কম দামে শেয়ার কিনতে পড়তি দরে বিক্রি করেছেন বলে মনে করছেন তিনি।
সর্বনিম্ন দর উঠে যাওয়ার পরে বাজারে শেয়ারের লেনদেন চালু হওয়ায় সময়ে সময়ে একটু সংশোধন হওয়া শুরু করেছে মনে করেন এমার্জিং গ্লোবাল এসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, ‘‘বাজার তো কেবল শুরু হল। এতদিন তো বলা যায় অলস অবস্থায় পড়েছিল বাজার। বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্ত বদলাতে শুরু করেছেন। লেনদেনে ফিরছেন অনেকেই। তাই এই সংশোধন বেশি কিছু না। কোনো কোনোটির তো ২০ পয়সা কমেছে মাত্র।’’
সূচক অনেকটা কমলেও লেনদেনে পতন হয়নি। সারা দিনে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি টাকার শেয়ার। আগের দিনের চেয়ে তা ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কম।
সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে পড়ল ১৪ কোম্পানির দর
দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করেছে ১৪টি কোম্পানি। এগুলো হল: এইচ আর টেক্সটাইলস, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি, কেডিএস অ্যাকসেসোরিজ, আইপিডিসি, জিএসপি ফাইন্যান্স, বিডি ফাইন্যান্স, বারাকা পাওয়ার, এমএল ডায়িং, মতিন স্পিনিং মিলস, নিউলাইন ক্লথিং, ডরিন পাওয়ার, কাট্টালি টেক্সটাইলস, বে লিজিং ও রিং সাইন টেক্সটাইলস।
আরো তিনটি কোম্পানির দর ৯ শতাংশের বেশি, আটটির দর ৮ শতাংশের বেশি, ছয়টির দর ৭ শতাংশের বেশি, পাঁচটির দর ৬ শতাংশের বেশি, ১৮টির দর ৫ শতাংশের বেশি, ২৫টির দর ৪ শতাংশের বেশি, ৪১টির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৬৫টির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
বিপরীতে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ছুঁতে পেরেছে একটি মাত্র কোম্পানি। সেটি হলো নতুন তালিকাভুক্ত সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮.৩৩ শতাংশ দর বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের। আফতাব অটো, খান ব্রাদার্স ও আইএসএনের দর ৭ শতাংশের বেশি, খুলনা পেপার মিলস, লিবরা ইনফিউশন, মালেক স্পিনিং, আলহাজ্ব টেক্সটাইলসের দর ৬ শতাংশের বেশি এবং মিথুন নিটিং, ফুওয়াং ফুডসের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।