“এখনও মুদ্রানীতি কেউ শোনেনি, এটা দেখে অ্যানালাইসিস করে আগামীকাল বা কদিন পরে বাজারে একটা প্রভাব পড়বে,” বলেন ডিবিএ সভাপতি
Published : 18 Jun 2023, 03:54 PM
এক সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে যে অস্থিরতা মুদ্রানীতি ঘোষণার দিনও তা থেকে বের হতে পারেননি বিনিয়োগকারীরা। লেনদেন আরও কমে ৯ সপ্তাহের সর্বনিম্নে নেমেছে।
তবে গত সপ্তাহের মতো সূচকের পতন দেখা যায়নি। ৭১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির চির ৮৮ টির পতন হলেও সূচক বেড়েছে ১ পয়েন্ট। ১৮৯টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
লেনদেন গত বৃহস্পতিবারই নেমে গিয়েছিল পাঁচশ কোটি টাকার নিচে। সেটি আরও কমে হলো ৪১৮ কোটি ২০ লাখ ৪২ হাজার টাকা।
সবশেষ এরচেয়ে কম লেনদেন ছিল গত ১৩ এপ্রিল। সেদিন হাতবদল হয়েছিল ৪১৪ কোটি টাকার কিছু বেশি।
ঈদুল ফিতরের পর পুঁজিবাজারে একটু একটি করে লেনদেন ও শেয়ারদর বাড়তে থাকলেও মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে আগে গত সপ্তাহে ঘটে ছন্দপতন। দেড় মাস ধরে উত্থানে স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায় বলতে গেলে চার দিনের দরপতনে।
‘ঝড়টা’ বেশি যায় বীমা খাতের ওপর দিয়ে। অথচ এই খাতে ভর করেই পুঁজিবাজারে কিছুটা হলেও ‘স্বপ্ন’ তৈরি হচ্ছিল।
রোববার লেনদেনে ধসের দিন এই বীমা খাতের বিনিয়োগকারীরাই অবশ্য অখুশি থাকেননি। জীবন বীমার ১৫ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। দর হারিয়েছে তিনটি, একটি আগের দিনের দরে এবং একটির লেনদেন হয়নি।
এই কোম্পানিগুলোতে হাতবদল হয়েছে ৬৭ কোটি টাকার বেশি যা মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশের বেশি।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানির মধ্যে মধ্যে ১৮টির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৭টির দর। পাঁচটি আগের দিনের দরে আর দুটির লেনদেন হয়নি।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ১৪ কোটি টাকার কিছু বেশি, যা মোট লেনদেনের চার শতাংশের মতো।
বীমার পরেই অবস্থান ছিল বিবিধ, ওষুধ ও রসায়ন এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের। মোট লেনদেনে তিনটি খাতেই হিস্যাই ছিল ১০ শতাংশের বেশি। তথ্য প্রযুক্তি ও প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ৭ শতাংশের বেশি।
এদিন সকাল থেকেই পুঁজিবাজারে সূচকের উঠানামা দেখা যায়। বেলা পৌনে একটার দিকে ৯ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেখান থেকে কমে যায় আট পয়েন্ট।
ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠন স্টক ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন-ডিবিএর সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিওর বিশ্বাস মুদ্রানীতির কারণে বিনিয়োগকারীরা একটু অপেক্ষা করছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডকটমকে তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক নেই। থাকলে বাজার আজ পড়ে যেত। আবার খুব বেশি আশাবাদও নেই। সেটা হলে বাড়ত।
“এখনও মুদ্রানীতি কেউ শোনেনি, এটা দেখে অ্যানালাইসিস করে আগামীকাল বা কদিন পরে বাজারে একটা প্রভাব পড়বে।”
‘বেশি লাফায়নি’ শেয়ারদর
যেসব কোম্পানির দর সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, তার মধ্যে একটির দরই কেবল সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে পেরেছে। সেটি হলো লোকসানি সেন্ট্রাল ফার্মা। লোকসানের কারণে টানা তিন বছর লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৯.৮২ শতাংশ।
আর কোনো কোম্পানির দরই সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে পারেনি। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের দর বেড়েছে ৭.৬২ শতাংশ।
আর বীমা খাত ‘দুর্বল’ হওয়ার পর লোকসানি কোম্পানির যে আধিপত্য ফিরে এসেছিল, সেটিও দেখা গেছে আবার।
শীর্ষ দশের পাঁচটি কোম্পানিই লোকসানি। এর মধ্যে সৃহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, মাইডাস ফাইনান্স, খান ব্রাদার্স ও ইউনিয়ন ক্যাপিটালের দর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
পাঁচ বছর পর উৎপাদন শুরু করে মুনাফার মুখ দেখা এমারেল্ড অয়েলের দরও বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
বীমা খাতের মেঘনা লাইফের পর ৫.৯৩ শতাংশ এবং অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৫ শতাংশ।
শীর্ষ দশে ছিল মেঘনা সিমেন্টও, যার দর বেড়েছে ৫.৭৬ শতাংশ।
আরও তিনটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশ, চারটির দর ৩ শতাংশ, ছয়টির দর ২ শতাংশ, ১৬টির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি
পতনের শীর্ষেও লোকসানি কোম্পানিই
দর বৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার মতো পতনের শীর্ষ তালিকাতেও ছিল লোকসানি কোম্পানি, যেগুলোর দর গত সপ্তাহে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল।
এই ১০টি কোম্পানির মধ্যে ৯টিই চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত লোকসানের তথ্য দিয়েছে। বেশ কয়েকটি কোম্পানি এক যুগেও লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
৬.২৭ শতাংশ দর হারিয়ে শীর্ষে ছিল মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ। জিলবাংলা সুগার, আজিজ পাইপস, সমতা লেদারের দর ৫ শতাংশের বেশি; ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোড, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শ্যামপুর সুগার, নর্দার্ন জুট ও ইমাম বাটনের দর ৪ শতাংশের বেশি এবং ইয়াকিন পলিমার দর হারিয়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
এসব কোম্পানির মধ্যে কেবল আলিফ মুনাফায় আছে।
আরও ছয়টি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৪টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং ১৯টির দর কমেছে এক শতাংশের বেশি।