সকালে বেড়েও বিকালে কমায় আলোচিত ফুয়াং ফুডসে একদিনেই ১৩ শতাংশের বেশি টাকা হারিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
Published : 10 Jul 2023, 03:39 PM
ঈদের পর থেকে প্রতিদিনই লেনদেন বাড়তে বাড়তে এবার হাজার কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করেছে।
তবে এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এই লেনদেনের দিন হাসিমুখে ছিলেন না বিনিয়োগাকারীরা। ঢালাও দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার সকালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারদর বেড়ে গিয়েও শেষ বেলায় বিক্রয়চাপে দরপতন হয়। সূচকে প্রভাব ফেলে বড় মূলধনী এমন শতাধিক কোম্পানি ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার মধ্যেও ১৩ পয়েন্ট পতনে আর্থিক ক্ষতিই হয়েছে বিনিয়োগকারীদের।
এমন কোনো খাত ছিল না যেখানে দরপতন হয়নি। সকালে বেড়ে গিয়ে দিন শেষে পতনে এক দিনেই ক্ষতির শিকার হয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
এক দিনে শেয়ারের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ দরপতন বা উত্থান সম্ভব। তবে সকালে বেড়ে গিয়ে পরে দরপতনের কারণে এক দিনেই ১০ শতাংশের বেশি টাকা হারিয়েছেন বহু বিনিয়োগকারী।
দরপতনের দিনটিতে লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে খাদ্য খাত। আগের কয়েক দিন শীর্ষে থাকা বস্ত্রকে তৃতীয় স্থানে নামিয়ে এনেছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে মাসের পর মার তলানিতে পড়ে থাকা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত।
ঈদুল ফিতরের পর বাজারের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থানা বীমা খাতের আরও পতন হয়েছে। লেনদেনের হিসাবে চতুর্থ অবস্থানে থাকা এই খাতটি আরও তলানিতে নেমেছে।
সকালে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়লেও শেষ পর্যন্ত ৩৭টির দর বেড়ে ১৬০টির কমে এবং ১৭৯টি কোম্পানি আগের দিনের দরে থেকে লেনদেন শেষ করেছে।
সব মিলিয়ে ৩৭৬টি কোম্পানির কিছু না কিছু শেয়ার হাতবদল হয়েছে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত বছরের ৩১ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস দেওয়ার পর কোনো দিন ৫০টির বেশি, কোনেদিন একশটির বেশি শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। এদিন ক্রেতা না থাকা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৩।
দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৪ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার। গত ১১ জুনের পর এই প্রথম হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। তবে এটি গত ৬ জুনের পর সর্বোচ্চ লেনদেন।
ঈদুল আজহার ছুটি শেষে এ নিয়ে টানা সাত কর্মদিবস লেনদেন বাড়ল।
সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া খাদ্যের শেয়ারে ‘বড় ক্ষতি’
এ খাতের ২১টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ১৭৫ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৮ শতাংশ।
তবে বিপুল আগ্রহ থাকলেও দুটি কোম্পানির দর বৃদ্ধি এবং ১৮টির দরপতন দেখেছে পুঁজিবাজার। ফ্লোর প্রাইসে পড়ে আছে বাকি কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো।
এই খাতটির কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছিল।
এর মধ্যে মাসের পর মাস ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা না পাওয়া ফুওয়াং ফুডসের দর চার কর্মদিবসে ৪৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। সকালে এক পর্যায়ে আরও প্রায় ১০ শতাংশ বেড়ে যায় কোম্পানিটির দর। তবে দিন শেষে ৩.৩১ শতাংশ দর হারিয়েছে। ফলে সকালে যারা শেয়ারটি কিনেছিলেন, তারা ১৩ শতাংশের বেশি টাকা খুইয়েছেন এক দিনেই।
শ্যামপুর সুগার, জেমিনি সি ফুট, বিচ হ্যাচারিসহ আরও অনেকগুলো কোম্পানির বিনিয়োগকারীরাও এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এর ভিড়েও তিন মাসের মধ্যে প্রায় ছয় গুণ দরে বিক্রি হওয়া এমারেল্ড অয়েল দর ধরে রেখেছে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৭ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। ফ্লোর ছাড়ানো ১০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিরই দরপতন হয়েছে। বেড়েছে দুটির। আগের দিনের দরে ছিল বাকি ১৩টি।
তৃতীয় স্থানে নামা বস্ত্র খাতে হাতবদল হয়েছে ১২৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কেবল একটি কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে ২৬টি আর ফ্লোর প্রাইসে হাতবদল হয়েছে ২৯টি। দুটির লেনদেন হয়নি।
চতুর্থ স্থানে থাকা বীমা খাতে লেনদেন হয়েছে ১০৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১১ শতাংশ। পতন শুরু হওয়ার আগে লেনদেনে এই খাতের হিস্যা ছিল ৩০ শতাংশের বেশি।
এই লেনদেনের ৮১ কোটি ৬২ লাখ টাকা হয়েছে জীবন বীমায়। ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে একটির, দুটি ছিল ফ্লোর প্রাইসে, দর হারিয়েছে ১১টি, লেনদেন হয়নি একটির।
সাধারণ বীমার ৪২ কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। দর বেড়েছে চারটির, কমেছে ২৬টির, ১০টি ছিল আগের দিনের দরে, দুটির লেনদেন হয়নি।
প্রকৌশল খাতে লেনদেন হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। তিনটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১৯টির দর। ২০টি ছিল আগের দিনের দরে।
ওষুধ ও রসায়ন খাতে ৮২ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। অন্য কোনো খাত ৫০ কোটি টাকার ঘর অতিক্রম করতে পারেনি।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে ওষুধ রসায়নের প্রাধান্য
কেবল একটি কোম্পানি দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁতে পেরেছে। কোম্পানিটি হল ওষুধ খাতের সেন্ট্রাল ফার্মা। এই কোম্পানিটি লোকসানি।
১০টি কোম্পানির মধ্যে পাঁচটিই এ খাতের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.০৬ শতাংশ দর বেড়েছে ওষুধ একই খাতের কেয়া কসমেটিকস। কয়েক মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা ছিল না লোকসানি কোম্পানিটির।
অষ্টম থেকে দশম স্থানে ছিল সিলকো ফার্মা, ইন্দোবাংলা ফার্মা ও ফার কেমিক্যালস। সবগুলোর দর বেড়েছে ২ শতাংশ।
এছাড়া সি পার্ল ও লিগাসি ফুটওয়্যারের দর ৫ শতাংশের বেশি, হাইডেলবার্গ সিমেন্টের দর ৪ শতাংশের বেশি, ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের দর বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে যারা
শীর্ষ দশের মধ্যে তিনটি কোম্পানি ছিল বস্ত্র খাতের। সমান সংখ্যক কোম্পানি ছিল জীবন বীমার, দুটি ব্যাংক খাতের।
এই তালিকার শীর্ষে থাকা অলিম্পিক অ্যাকসেসোরিজ দর হারিয়েছে ৯.১৯ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল বস্ত্র খাতের ঢাকা ডায়িং, যেটি দর হারিয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ। একই খাতের তশরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় ৭ শতাংশ এবং সোনারগাঁও টেক্সটাইলস ৬ শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে।
জীবন বীমার তিন কোম্পানি সোনালী লাইফ ৭ শতাংশের বেশি, মেঘনা লাইফ ৬.৬৮ শতাংশ এবং রূপালী লাইফ ৬.৬৫ শতাংশ দর হারিয়েছে।
ব্যাংক খাতের দুই কোম্পানির মধ্যে মিডল্যান্ড প্রায় ৭ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংক দর হারিয়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
শীর্ষ দশের নবম স্থানে থাকা খুলনা পেপারের দর কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ।