লেনদেন নিষ্পত্তির তথ্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে কারিগরি ক্রুটির কথা বলেছে কর্তৃপক্ষ।
Published : 07 Aug 2023, 08:07 PM
দুপুরে লেনদেন শেষ হওয়ার পর শেয়ার কেনাবেচার নিষ্পত্তি হতে মাঝ রাত পেরিয়ে ভোর হয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইতে; যে কারণে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ৬৩টি ব্রোকারেজ হাউসকে।
তবে সোমবার লেনদেনের পর যথারীতি লেনদেন নিষ্পত্তি (ট্রেড সেটেলমেন্ট) হয়েছে। আগের দিন রোববার লেনদেন নিষ্পত্তির তথ্য ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে দিতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে কারিগরি ক্রুটির কথা বলেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
লেনদেনে ব্যবহৃত সফটওয়্যার ‘ফ্লেক্সট্রেড’ এ ক্রুটির কারণে যথাসময়ে তা করা যায়নি বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ডিএসই।
এক মাস আগে গত জুলাইয়ে একই সফটওয়্যারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয়েছিল দুই দিন।
বিলম্বের ব্যাখ্যায় সোমবার বেলা দেড়টার পরে ডিএসই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘‘রোববার লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পর কারিগরি ত্রুটির কারণে ৬৩ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ফ্লেক্সট্রেড সফটওয়্যার থেকে লেনদেন সংক্রান্ত ডেটা ডাউনলোড করতে না পারায় ট্রেড সেটেলমেন্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
‘‘রোববার দিবাগত রাত থেকে সোমবার ট্রেড শুরুর পূর্বেই সমস্ত ব্রোকার প্রতিষ্ঠানের সমস্যার সমাধান হয়েছে।’’
ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা জানান, লেনদেন নিষ্পত্তির তথ্য পেতে তারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন। এ তথ্য পাওয়া না লেগে গ্রাহকদের শেয়ার বিক্রির অর্থ এবং কেনার পর সংশ্লিষ্ট শেয়ার বিও অ্যাকাউন্টে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে তিনটার পর তা পাওয়া গেলে বিষয়টির সুরাহা হয়।
পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হওয়ার পরে মোট লেনদেনের তথ্য ‘ওএমএস (অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার)’ সফটওয়্যার ফ্লেক্সট্রেড থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পেয়ে যায় ব্রোকারেজ হাউজ। এ তথ্যের ভিত্তিতে হাউজগুলো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মাধ্যমে ‘ক্লিয়ারিং ও সেটেলমেন্টের’ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর কেনাবেচা হওয়া শেয়ার ও নগদ টাকার তথ্য পুনরায় ফ্লেক্সট্রেডে হালনাগাদ করতে পারে ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান, যাতে পরের দিনের লেনদেন সম্ভব হয়।
এর আগেও ডিএসইর লেনদেনে বিভ্রাট ও কারিগরি ত্রুটির ঘটনা ঘটেছে। গত ৪ জুলাই পরপর দুই দিন সার্ভার ত্রুটিতে লেনদেন ‘বিভ্রাটের’ মধ্যে পড়েছিল। শেয়ার বেচাকেনা করতে গিয়ে সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের।
২০২২ সালের অক্টোবরের শেষ দিকেও এক সপ্তাহে পরপর দু’বার কারিগরি ত্রুটি হয়েছিল। এসব ত্রুটির পর বরাবর ডিএসই তা কাটিয়ে ওঠার কথা বললেও তা হয়ে ওঠেনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ নিয়ে একাধিকবার সতর্ক করে দিয়েছে ডিএসইকে।
সোমবার কমিশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম রোববারের ঘটনার বিষয়ে ডিএসইর চিঠি পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘এর আগেও প্রযুক্তিগত ত্রুটি হয়েছিল। এমন ত্রুটি যেন ফের না হয়-সেজন্য আগেরবারের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো একে একে বাস্তবায়নে চলমান উদ্যোগ ত্বরান্বিত করবে বিএসইসি।’’
এদিকে অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি বা আপদকালীন সময়ে দ্রুত তথ্য পেতে ‘হেল্প ডেক্স’ চালু করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ‘‘এটি ডিএসই এর দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। অংশীজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ডিএসই চাইলেই হেল্প ডেক্স খুলতে পারে। এক্ষেত্রে নীতিগত কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন দেখা দিলে বিএসইসি তা অবশ্যই দেবে।’’
এদিকে কারিগরি সমস্যার তদন্তের জন্য ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিমকে ‘বাধ্যতামূলক ছুটিতে’ পাঠিয়েছিল বিএসইসি। ওই ঘটনার তদন্ত শেষে আট মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনও কাজে ফিরতে পারেননি। সিটিও ছাড়াই চলছে প্রধান পুঁজিবাজারের প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম।
গত ২৪ অক্টোবর সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ ছিল ডিএসইর লেনদেন। এরপর গঠন করা হয়েছিল ওই কমিটি।