মুদ্রানীতি ঘোষণার আগের সপ্তাহে ডিএসইর সূচক ৭২ পয়েন্ট কমেছিল। ঘোষণার দিন থেকে পুনরুদ্ধার হয়েছে ৪৫ পয়েন্ট।
Published : 25 Jun 2023, 04:37 PM
ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ল আরেকটু। তবে লেনদেন কমে গেল অনেকটাই।
সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার কয়েক ঘণ্টা পুঁজিবাজার একটি বৃত্তে থাকলেও শেষ ঘণ্টার ক্রয়চাপে সাধারণ সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন।
এ নিয়ে টানা তিন কর্মদিবস এবং নতুন অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণার পর সাত দিনের মধ্যে ছয় দিনই বাড়ল সূচক।
তবে লেনদেনে ভাটা পড়েছে। গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন থেকে টানা পাঁচ কর্মদিবস বেড়ে বৃহস্পতিবার লেনদেন আটশ কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হয়ে যায়। সেটি নেমে এসেছে ৬৩৯ কোটি ১৬ লাখ ৯৮ হাজার টাকায়।
দুই মাস আগে ঈদুল ফিতরের পর থেকে পুঁজিবাজারে একটু একটু করে গতি ফিরতে শুরু করলেও এই মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে আগে বাজারে ঘটে ছন্দ পতন। এক সপ্তাহেই সূচক কমে ৭২ পয়েন্ট।
তবে মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারের জন্য ‘ক্ষতিকর’ কিছু না থাকার পর পুনরুদ্ধার হয়েছে ৪৫ পয়েন্ট।
দরপতনের আগে যেসব কোম্পানি বা খাতের চাঙ্গাভাব দেখা গিয়েছিল, দরপতন শেষে সূচক বাড়তে থাকলেও সেসব কোম্পানির রমরমা আর দেখা যাচ্ছে না।
দুই মাস দাপট দেখানোর পর বীমা খাতের শেয়ারে নেই আগ্রহ। জীবন বীমার কিছু কোম্পানি বাড়তি দর ধরে রাখলেও সাধারণ বীমার কোম্পানিগুলো বেড়ে যাওয়া দর অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।
মোট লেনদেনে এই খাতের হিস্যা ৩০ শতাংশের ঘর থেমে নেমে এসেছে ১৫ শতাংশে। অন্য খাত একটুর জন্য ছাড়িয়ে যেতে পারেনি এই খাতটিকে।
বীমা দর হারানোর পর বাজারে লোকসানি এমনকি বন্ধ কোম্পানির দাপট দেখা যাচ্ছে। পুঁজিবাজারে যখন মন্দাভাব থাকে, তখন এই বিষয়টি বারবার দেখা গেছে।
রোববারও দর বৃদ্ধির শীর্ষে দুর্বল কোম্পানির প্রাধান্য দেখা গেছে।
সব মিলিয়ে এদিন দর বেড়েছে ৮৭টি কোম্পানির, দর হারিয়েছে ৮৮টি। ১৮০টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছে ৩৫৫টি কোম্পানির শেয়ার, বৃহস্পতিবার যে সংখ্যাটি ছিল ৩৬৭।
দুই ধরনের বীমা কোম্পানি মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৭৫ কোটি ৪৪ লাখ, যা আগের দিন ছিল ১২৩ কোটি টাকারও বেশি।
ওষুধ ও রসায়নে ৭১ কোটি ৭০ লাখ, খাদ্যে ৫৫ কোটি ২০ লাখ, তথ্য প্রযুক্তিতে ৪৪ কোটি ৮ লাখ, প্রকৌশলে ৪৩ কোটি এবং বস্ত্রে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
বীমার সেই রমরমা নেই
বেশ কয়েক সপ্তাহ পর এমন একটি দিন গেল, যেদিন বীমা খাতের কোনো কোম্পানিতে শীর্ষ দশের তালিকায় দেখা যায়নি। শীর্ষ ২০ তালিকায় ছিল জীবন বীমার কেবল দুটি কোম্পানি।
সাধারণ বীমার ১৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে চারটির, কমেছে ৯টির, আগের দিনের দরে ছিল দুটি কোম্পানি।
এই খাতে হাতবদল হয়েছে ৫৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে দুইশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন দেখা গেছে খাতটিতে।
সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ২০টি। ১৩টির বেড়েছে সামান্য। আটটি হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে। একটির লেনদেন হয়নি।
সপ্তাহ তিনেক আগে দেড়শ কোটি বা তার চেয়েও বেশি লেনদেন হওয়া খাতটিতে হাতবদল হয়েছে কেবল ১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার চলে এসেছে ফ্লোর প্রাইসে, কিছু কোম্পানি ফ্লোরের আশেপাশে আছে।
যেগুলোর দর বেড়েছে, সেগুলো খুব একটা লাফ দিয়েছে এমন নয়। সবচেয়ে বেশি ২.৯৪ শতাংশ দর বেড়েছে প্রাইম লাইফের, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২.৮৫ শতাংশ বেড়েছে রূপালী লাইফের। তৃতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের, বেড়েছে ১.২০ শতাংশ।
অথচ গত সপ্তাহেই এমন দিনও দেখা গেছে যেদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশের সবগুলোই ছিল বীমা খাতের। ৩০টি কোম্পানির ২৮টি ছিল একটি খাতের।
সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে পারেনি একটি কোম্পানিও
বেশ কিছু দিন পর পুঁজিবাজারে এই চিত্র দেখা গেল। সবচেয়ে বেশি ৮.৩৪ শতাংশ দর বেড়েছে ফাইন ফুডসের।
‘দুর্বল’ কোম্পানি খান ব্রাদার্স ও স্বল্প মূলধনী সোনালী আঁশের দর ৮ শতাংশের বেশি, লোকসানি অলিম্পিক অ্যাসসেসোরিজ ও সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
লোকসানি ইউনিয়ন ক্যাপিটালের দর ৬ শতাংশের বেশি, বস্ত্র খাতের মেট্রো স্পিনিং মিলস, ঢাকা ডায়িং ও লোকসানি আজিজ পাইপসের দর ৫ শতাংশের বেশি এবং নাভানা ফার্মার দর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষে জেডে ফেরা কোম্পানি
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ, আর্থিক হিসাব দেয় না, এমন বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছিল অস্বাভাবিক হারে।
এমন কিছু কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠিয়ে রোববার বিজ্ঞপ্তি দেয় ডিএসই। এরপর সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, আরএসআরএম স্টিল ও নর্দার্ন জুটের লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ দর হারিয়ে। সার্কিট ব্রেকারের নিম্নসীমায় নেমে দুটি কোম্পানির দর প্রায় ১০ শতাংশ, একটির কমেছে পৌনে ৯ শতাংশ।
এছাড়া লভ্যাংশ ঘোষণা করেও বিতরণ না করা অ্যাভডেন্ট ফার্মার দর ৬ শতাংশের বেশি, অ্যাপোলো ইস্পাতের দর ৫ শতাংশের বেশি, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, এসকে ট্রিমসের দর ৪ শতাংশের বেশি, সোনালী লাইফের দর ৩ শতাংশের বেশি এবং খুলনা পেপার মিলস ও জাহিন স্পিনিং দর হারিয়েছে ২ শতাংশের বেশি।