সাধারণ বীমা খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৩৫টি, খাদ্য খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির।
Published : 11 Oct 2023, 04:51 PM
টানা তিন কর্মদিবস সূচকের পতনের পর এবার বাড়ল টানা দুই দিন। কিছুটা বাড়ল লেনদেনও। তবে দুর্বল কোম্পানির ওপর ভর করে পুঁজিবাজারে লেনদেনের যে ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে, সেই বৃত্ত ভাঙার ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে না।
সপ্তাহের তৃতীয় কর্মদিবস মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ঝোঁক লক্ষ্য করা গেছে। বেশ কিছু দিন পর সাধারণ বীমা খাত নেমে গেল দ্বিতীয় অবস্থানে।
টানা দ্বিতীয় দিন দরপতনের তুলনায় দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা দেখা গেছে বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যার কোম্পানি পড়ে আছে বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দর ফ্লোর প্রাইসে। আর এই দরেও তালিকাভুক্ত দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যক কোম্পানির ক্রেতা নেই কার্যত।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে ৭৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে, কমেছে ৬৪টির আর ১৩৮টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দিনের দরে।
এদিন ক্রেতা ছিল না মোট ১০৮টি কোম্পানির, নামমাত্র লেনদেন হয়েছে আরও দেড়শর মতো কোম্পানিতে।
এক লাখের বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কেবল ৮২টি কোম্পানিতে। তবে এসব কোম্পানির আরও লাখ লাখ শেয়ার বিক্রির জন্য বসানো ছিল।
লেনদেন হয়েছে মোট ৪৩০ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৩৭২ কোটি টাকার কিছু বেশি।
বাজারের সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৮ পয়েন্ট। আগের দিন সূচক বেড়েছিল ১৭ পয়েন্ট।
বীমাকে পেছনে ফেলে খাদ্যের উত্থান
আগের দিন সাধারণ বীমা খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বাড়ে ৪১টির, লেনদেনে এই খাতের হিস্যা ছিল ৩০ শতাংশ।
এক দিনের ব্যবধানে শতকরা হিসেবে লেনদেন কমে গেল প্রায় অর্ধেক, সেই সঙ্গে দাম কমল দল বেঁধে।
সাধারণ বীমার ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৩৫টি, একটি আগের দিনের দরে এবং ছয়টির দর কিছুটা বেড়ে লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে খাতটির হিস্যা ছিল ১৬ শতাংশের কিছুটা বেশি।
সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া ১০টি কোম্পানির ছয়টিই ছিল সাধারণ বীমা খাতের। তবে আগের দিন যে হারে দর বেড়েছিল, পতনের হার তার তুলনায় কিছুটা কম।
এই ছয়টি কোম্পানির সগুলোই দর হারিয়েছে ৩ শতাংশের বেশি। আরও সাতটি কোম্পানির দর কমেছে ২ শতাংশের বেশি।
বিপরীত চিত্র খাদ্য খাতে। আগের দিন মোট লেনদেনের ১৫ শতাংশ ছিল এই খাতে। সেটি বেড়ে হয়েছে ২২ শতাংশ।
এই খাতের ২১টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। চারটি দর হারিয়ে এবং চারটি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
যেসব কোম্পানির দর বেড়েছে, তার সবগুলোই বলতে গেলে রুগ্ন কোম্পানি। এগুলো বছরের পর বছর ধরে নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে আসছে, কখনও কখনও লভ্যাংশ নিতেও পারে না।
এই খাতে সবচেয়ে শক্তিশালী কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতা সংকটে ধুঁকছে।
সবচেয়ে বেশি ৯.৯৩ শতাংশ দর বৃদ্ধি পাওয়া ফুওয়াং ফুডস খাদ্য খাতেরই কোম্পানি। রুগ্ন এই কোম্পানিটির শেয়ার গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছিল না।
জুনের শুরুতে ক্রেতার দেখা মিলতেই লাফাতে থাকে শেয়ারদর। ২৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ৪৬ টাকা ৯০ পয়সায় উঠে যেতে সময় নেয়নি খুব একটা। আবার তা কমে ২৫ টাকার ঘরে নামে, কিছুদিন পর আবার বেড়ে ছাড়ায় ৪২ টাকার ঘর।
গত দুই সপ্তাহে সেখান থেকে পড়তে পড়তে আবার ২৮ টাকায় নেমে যায়। টানা তিন কর্মদিবসে সেখান থেকে বেড়ে আবার ছাড়িয়েছে ৩৩ টাকা।
দুর্বল কোম্পানি আরডি ফুড, তুমুল আলোচিত এমারেল্ড অয়েল, জেমিসি সি ফুড, বিচ হ্যাচারিও দর বেড়ে লেনদেন শেষ করেছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
ফু ওয়াং ছাড়াও ৫ শাতংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা দেশবন্ধু পলিমার, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর ৯ শতাংশের বেশি, বিডিকম ও সোনালী আঁশের দর ৭ শতাংশের বেশি, লোকসানি ওয়াইম্যাক্স, ইয়াকিন পলিমারের দর ৫ শতাংশের বেশি, লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো ইনটেক অনলাইন, মেঘনা সিমেন্ট এবং ইন্ট্রাকো রি ফুয়েলিংয়ের শেয়ারদর বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
আরও তিনটি কোম্পানির দর ৩ শতাংশের বেশি, ১৬টির দর বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
পতনের শীর্ষ দশ
সবচেয়ে বেশি ৪.৭০ শতাংশ দর হারিয়েছে লিবরা ইনফিউশন। আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করা কোম্পানিটির শেয়ারদর গত কিছুদিন ধরে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল।
১০ টাকার শেয়ার ৮ টাকার বেশি লোকসান দিয়েও ৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা এপেক্স ট্যানারি দর হারিয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪.৬২ শতাংশ।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স স্ট্যান্ডান্ড ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
দরপতনের শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে দশম স্থানে থাকা হাক্কানি পাল্প দর হারিয়েছে ২.৬৯ শতাংশ।
আরও ৯টি কোম্পানির শেয়ার ২ শতাংশের বেশি, ২১টির শেয়ার দর হারিয়েছে ১ শতাংশের বেশি।