পুঁজিবাজারে টানা দুই দিন লেনদেনে সবাইকে ছাড়িয়ে ব্যাংক খাত। সূচক ইতিবাচক থাকার পেছনে প্রধান ভূমিকাতেও এই খাত।
Published : 23 Sep 2024, 07:36 PM
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বাড়লেও দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির দ্বিগুণ সংখ্যক দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে। ফলে সূচকের ইতিবাচক প্রবণতাতেও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী লাভবান হতে পারেননি।
সূচক বৃদ্ধির কারণ ব্যাংক খাতের শেয়ারে দর বৃদ্ধি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ব্যাংক খাতে সংস্কারে যে উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন, তাতে এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার মোট লেনদেনের চার ভাগের এক ভাগের বেশি হয়েছে এই খাতে, আগের দিনের পতন থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সূচক ইতিবাচক রাখার পেছনেও মূল ভূমিকায় ছিল ব্যাংক।
দিন শেষে সূচক বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট, যদিও ১১২টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে হারিয়েছে ২৩৭টি। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৪৯টি কোম্পানির শেয়ার।
সবচেয়ে বেশি আগ্রহের ব্যাংক খাতে দর বেড়েছে ২৪টি কোম্পানির, আটটি আগের দিনের দরে এবং চারটি দর হারিয়ে লেনদেন শেষ করেছে।
লেনদেনেও সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা গেছে এই খাতে। ৬৭৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে দিনভর, এর মধ্যে ১৬৯ কোটি ১১ লাখ টাকাই হয়েছে ব্যাংকের শেয়ারে।
সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করা ১০টি কোম্পানির মধ্যে সাতটিই ব্যাংক। এগুলোই সূচকে যোগ করেছে প্রায় ৩৮ পয়েন্ট।
এর মধ্যে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ইসলামী ব্যাংক একাই যোগ করেছে ২০ পয়েন্টের বেশি। আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এসআইবিএল মিলিয়ে ১০ পয়েন্টের বেশি, সিটি ও ঢাকা ব্যাংক মিলিয়ে প্রায় ৫ পয়েন্ট এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংক যোগ করেছে ১.৭৯ পয়েন্ট।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ১০টি কোম্পানির চারটিই ব্যাংক খাতের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪৪ কোটি টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। ইসলামী ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় এই ব্যাংকটির শেয়ারের ক্রেতা ছিল না। আগের দিন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পর সোমবার বেড়েছে আরও ৮ শতাংশের বেশি। দর স্থির হয়েছে ৫৮ টাকা ৭০ পয়সায়।
লেনদেনের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত, যেটিতে লেনদেন হয়েছে ৯৩ কোটি টাকার কাছাকাছি, যা মোট লেনদেনের প্রায় ১৫ শতাংশ।
এই খাতের ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৭টির, ২৪টি দর হারিয়ে এবং ৩টি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
লেনদেনের ৮ শতাংশের কিছু বেশি ছিল তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতে। তবে দরপতন হয়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির। ১৬টির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৩৮টির দর, চারটি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।
দর বৃদ্ধি ও পতনের শীর্ষে যারা
একক কোম্পানি হিসেবে শেয়ার দর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে রহিম টেক্সটাইলস, যে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১০ শতাংশ।
ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স, ইসলামিক ফাইন্যান্স ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে, ইসলামী ব্যাংক ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলসের দর ৮ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও ফার্সট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের দর ৭ শতাংশের বেশি, দেশ গার্মেন্টস ও ঢাকা ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ৬ শতাংশের বেশি।
অন্যদিকে জালিয়াতির অভিযোগে এমডির কোটি টাকা জরিমানার পর টানা তৃতীয় দিন দরপতনের শীর্ষে ছিল হামি ইন্ডাস্ট্রিজ। আগের দুই দিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে দর হারানোর পর তৃতীয় দিন কমল ৮ শতাংশের বেশি।
অস্বাভাবিক হারে দর বৃদ্ধির ঘটনাটি নিয়ে তদন্তের মধ্যে থাকা খান ব্রাদার্স ও লোকসানি গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালস ৫ শতাংশের বেশি, মীর আখতার হোসেন লিমিটেড, বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ম, জিবিবি পাওয়ার, বিবিএস ক্যাবলস, বিকন ফার্মা, আইসিবি সোনালী মিউচুয়াল ফান্ড ও আমান ফিড ছিল পতনের শীর্ষ দশে। প্রতিটি কোম্পানিই দর হারিয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।