“এখনও বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোতে আগ্রহ নেই। ৩০ থেকে ৪০টা কোম্পানিতেই লেনদেন হচ্ছে। মার্কেট লিড দিচ্ছে না কোনো খাত। বলা চলে নেটিং হচ্ছে”, বলেন ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রথান দেবব্রত কুমার সরকার।
Published : 09 Mar 2023, 03:43 PM
টানা দরপতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারে মোটামুটি স্বস্তির একটি সপ্তাহ পার করলেন বিনিয়োগকারীরা; লেনদেন বাড়ল। দর হারাতে থাকা কোম্পানিগুলো ঘুরে দাঁড়াল।
ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা বড় মূলধনী কোম্পানিতে সেভাবে আগ্রহ ফেরেনি এখনও। তবে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক খাতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
সপ্তাহের শুরুটা ছিল ঝলমলে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সাধারণ সূচক ৩৬ পয়েন্ট বাড়ে রোববার। সোমবারও ৯ এবং মঙ্গলবার বাড়ে প্রায় ৩ পয়েন্ট।
টানা তিন দিন ছয় শ কোটি টাকা ছাড়ানো লেনদেন হয় ডিএসইতে। এর মধ্যে সোমবার ৭২৭ কোটি ছিল গত এক মাসের সর্বোচ্চ।
বুধবার শবেবরাতের ছুটিতে বন্ধ থাকে লেনদেন। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বাজারে কিছুটা ‘বিভ্রান্তি’ দেখা যায়। দিনভর উঠানামা করতে করতে শেষ পর্যন্ত ২ পয়েন্ট পতন আর লেনদেন কিছুটা কমার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেনদেন।
৪৭টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে এদিন দর হারিয়েছে ১১৩টি। ১৬৮টি কোম্পানি আগের দিনের দরে লেনদেন হয়েছে। এগুলো ফ্লোর প্রাইসে আছে।
সব মিলিয়ে হাতবদল হয়েছ ৩২৮টি কোম্পানির শেয়ার। ৬৩টি কোম্পানির একটি শেয়ারও হাতবদল হয়নি।
লেনদেন হয়েছে ৫৪৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা, যা মঙ্গলবার ছিল ৬৪৯ কোটি ৫৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
লেনদেন কিছুটা কমলেও এ সপ্তাহ বিনিয়োগকারীদের অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও লেনদেন ছিল দুই শ কোটি টাকার ঘরে। সেখানে চলতি সপ্তাহের চার দিনে গড় লেনদেন দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় শ কোটি টাকা, যা আগের সপ্তাহে ছিল সাড়ে তিন শ কোটি টাকার কিছুটা বেশি।
‘ভালো সপ্তাহ, তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এখনও দূরে’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণা প্রধান দেবব্রত কুমার সরকার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবে বলেন, “এক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলতে পারি, এই সপ্তাহটা অনেক ভালো গেছে। গড়ে ছয় শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে দিনে।
“শেষ দিনে কমার কিছু কারণ আছে। বুধবার ছুটি, এর একদিন পর আবার দু্ই দিনের ছুটি। এ কারণে অনেকে লেনদেন থেকে দূরে ছিল। আবার এই সপ্তাহে কোনো কোনো কোম্পানির শেয়ার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। সেগুলো বিক্রি করে অনেকে ফান্ড ফ্রি রেখেছে।
“তবে যদি মোমেনটামের কথা বলি, সেটা অনেক পজিটিভ। এই সপ্তাহে কয়েকটি আইটেম ফ্লোর থেকে বের হয়েছে। এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলে আত্মবিশ্বাস ফিরবে।”
সবই কি ইতিবাচক?- এমন প্রশ্নে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, “সেটা না, এখনও বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোতে আগ্রহ নেই। ৩০ থেকে ৪০টা কোম্পানিতেই লেনদেন হচ্ছে। মার্কেট লিড দিচ্ছে না কোনো খাত। বলা চলে নেটিং হচ্ছে।”
দেবব্রত মনে করেন প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীরা এখনও সক্রিয় হয়নি। তারা সক্রিয় হলে মৌলভিত্তির কোম্পানিতে লেনদেন বাড়ত। আর তারা সক্রিয় না হওয়াটা পুঁজিবাজার আরও ভালো হতে দিচ্ছে না।
সেটি কেন হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চায় না। তারা গৎবাঁধা কয়েকটি কোম্পানি নিয়ে কাজ করে। কোনো এক সময় গবেষণা করেছিল। কিন্তু এখন অনেক ভালো কোম্পানি আছে। তারা ভালো করছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সেদিকে ঝোঁকেনি।
“আবার এরা তখনই শেয়ার কেনে, যখন শুনতে পায় অন্যরা কিনছে। সবাই অন্যের অপেক্ষায়। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
লোকসানি কোম্পানির জয়জয়কার
ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে একদিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা এক শতাংশ করার পর গত ২২ ডিসেম্বর থেকে টানা দর হারাতে থাকা কোম্পানিগুলো চলতি সপ্তাহে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এসব কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস ফিরিয়ে এনে নতুন করে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়।
এরপর টানা ৪৯ দিন দর হারানো লোকসানি কোম্পানি শ্যামপুর সুগারের দর ৬৩ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা ৬০ পয়সা, যেটি এদিন ছিল দরবৃদ্ধির তালিকার শীর্ষে।
তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জিলবাংলা সুগার মিলসের পর বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ। বর্তমান দর ১৪০ টাকা ৫০ পয়সা। গত সপ্তাহে নেমে যায় ১১৯ টাকায়।
৯.৯০ শতাংশ দর বেড়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে আরেক লোকসানি কোম্পানি ইমাম বাটন। ফ্লোর তুলে দেওয়ার পর ১২৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে কমতে কমতে শেয়ারদর দাঁড়িয়েছিল ৮১ টাকা ৬০ পয়সায়।
মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, উসমানিয়া গ্লাস, জুট স্পিনার্স, এমারেল্ড অয়েলের মতো লোকসানি কোম্পানিগুলো চলতি সপ্তাহে দাপট দেখিয়েছে।