“কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।”
Published : 09 Mar 2025, 04:15 PM
ডিএসই চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেছে, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব ‘বাজার সংশ্লিষ্ট সবার’।
তার ভাষায়, “কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে সরকারের কাছে আবেদন করতে পারেন। চাইলে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু যেভাবে বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে দাবি দাওয়া আদায়ে আন্দোলন করা হচ্ছিল, তা কোনোভাবেই কাম্য না।”
বিএসইসি গত মঙ্গলবার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলে পরদিন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বুধবার চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। পরে সেনা নিরাপত্তায় কমিশন সদস্যরা কার্যালয় ছাড়েন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে কর্মবিরতির মধ্যেই বৃহস্পতিবার কমিশনে গিয়ে ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক চুল ছাড় না দেওয়ার’ ঘোষণা দেন চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
পরে বিএসইসির একাধিক নির্বাহী পরিচালকসহ ১৬ জনের নামে মামলা করা হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কোনোরকম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই কর্মবিরতি বাদ দিয়ে রোববার কাজে ফেরেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন বেলা ১১টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, সিসিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল, বিএমবিএ এর প্রতিনিধিরাও তার সঙ্গে ছিলেন।
মমিনুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে আমরা মনে করি, বিগত বছরগুলোতে যে অনিয়ম হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে তার বিশদ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান তদন্ত কার্যক্রমের সঙ্গে আমরা বাজার সংশ্লিষ্টরা একাত্মতা ঘোষণা করছি।”
পরে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ সেনা প্রহরায় সাংবাদিকদের সামনে আসেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাইকে আহ্বান করেছি, চলে আসতে কাজে যোগদান করতে। সব ধরনের সার্পোট দিয়ে যাব।”
মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চাইলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান বিএসইসি চেয়ারম্যন। তিনি বলেন, “আমরা আরেকদিন এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলব।”
মামলায় নাম থাকা বর্তমান কয়েকজন নির্বাহী পরিচালক ও কর্মচারীরা রোববার অফিসে আসেননি। অন্যরা নির্ধারিত সময়ে আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে যোগ দিয়ে নিজ নিজ বিভাগে কাজ শুরু করেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, এটা সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। বেশিরভাগ কর্মচারীই কাজে ফিরেছেন। আমরা বলেছি, অহেতুক যেন আতঙ্কিত না করা হয়।”
বিএসইসিতে যা ঘটেছে, তা ‘অনভিপ্রেত’ মন্তব্য করে মমিনুল ইসলাম বলেন, “কিন্তু এও সত্য, বিএসইসিতে অনেকে আছেন, যারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করছেন। আমরা কমিশনের কাছে অনুরোধ করেছি, এই সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা যারা আছেন, তারা যেন এই মুহূর্তে আতঙ্কিত না হয়ে তাদের দৈনন্দিন কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা দেওয়া। কমিশন বলেছেন, তারা তা (কাজের পরিবেশ দেওয়া) শুরু করেছেন।”
বিএসইসিতে চলমান সংকটকে কাজে লাগিয়ে কেউ যেন অন্যায় কাজ করতে না পারে, সেজন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সতর্ক রয়েছে বলে মন্তব্য করেন মমিনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “চলমান সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে সম্পাদন ও পুঁজিবাজারের প্রণোদনা সম্প্রসারণের মাধ্যমে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পুঁজিবাজার শীঘ্রই ঘুড়ে দাঁড়াবে।”
কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা সরকারের কাছে জানানোর আহ্বান জানিয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, “যারা অতীতে বিভিন্ন ধরনের অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, এখনো সেই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে দুর্বল করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে এই দেশের আইন অনুযায়ী সেই প্রক্রিয়া চলমান থাকুক।”
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ডিএসই পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন-বিএমবিএ, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিডিবিএল ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড-সিসিবিএল এর প্রতিনিধিরা অংশীজনদের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পুরনো খবর
শান্ত বিএসইসি কার্যালয়, কাজে ফিরেছেন কর্মীরা
কোনো অন্যায় দাবির কাছে মাথা নত করব না: বিএসইসি চেয়ারম্যান
বিএসইসি সংকটের দ্রুত সমাধান চায় ডিবিএ
বিএসইসি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময়
বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি, সেনা পাহারায় কার্যালয় ত্যাগ