আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না। এখন সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা ছুঁই ছুঁই দরেও ক্রেতার অভাব নেই।
Published : 22 Sep 2024, 07:39 PM
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণে জর্জর ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা উদ্যোগ পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে ব্যাংকের শেয়ার আগ্রহী করে তুলছে। মাসের পর মাস আগ্রহের তলানিতে থাকা এ খাতের বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনছেন বিনিয়োগকারীরা।
ব্যাংক খাতে আবার দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংক। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকার সময় ফ্লোর প্রাইস ৩২ টাকা ৬০ পয়সায় ক্রেতা ছিল না। এখন সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা ছুঁই ছুঁই দরেও ক্রেতার অভাব নেই।
রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতটিতে। ৬৭৫ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে প্রায় ৯৫ কোটি টাকাই ছিল ব্যাংকের শেয়ার, যা শতকরা হিসাবে ১৫ শতাংশেরও বেশি।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে লেনদেন। লেনদেনের শুরুতে উত্থান হলেও শেষ বেলায় সূচক কিছুটা কমে শেষ করে লেনদেন। দিনে সূচকের সর্বোচ্চ অবস্থান থেকে দিন শেষের অবস্থানে পার্থক্য ৫৮ পয়েন্ট।
শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে সূচক শূন্য দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৩৪ পয়েন্ট, যদিও এক পর্যায়ে ৫ হাজার ৭৯১ পয়েন্টে উঠে গিয়েছিল।
ডিএসইর শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত শরিয়া সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে এবং ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ করে।
বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমলেও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। সারাদিনে হাতবদল হয়েছে ৬৭৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বেশি।
হাতবদল হওয়া চারশটি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ২৩৩টি কোম্পানি। বিপরীতে বেড়েছে ১০৯টির। আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে ৫৮টি কোম্পানি।
দর বৃদ্ধির তুলনায় দর হারানো কোম্পানির সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার পরেও সূচকে প্রভাব না পড়ার কারণ হল বড় মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানি, বিশেষ করে ব্যাংক খাতের বেশ কিছু কোম্পানির দর বৃদ্ধি।
এই খাতের ৩৬টি কোম্পানির মধ্যে ১৮টির দর বেড়ে, ১১টির কমে এবং আগের দরে লেনদেন হাতবদল হয় সাতটি কোম্পানির দর।
এদিন সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে হাতবদল ইসলামী ব্যাংক সূচকের পতন ঠেকাতে প্রধান ভূমিকায় ছিল। ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংকও ছিল এই তালিকায়।
বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত, যে খাতটি মোট লেনদেনে অবদান রেখেছে ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত।
সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ দর বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের। দর স্থির হয়েছে ৫৪ টাকা ৩০ পয়সায়। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রুপের মালিকানায় যাওয়ার পর সাত বছরে এটিই ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বোচ্চ দর।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ থেকে এস আলম গ্রুপকে সরিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকেই শেয়ারদর বাড়ছে।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল কাট্টলি টেক্সটাইলস, যে কোম্পানিটি তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন একসঙ্গে প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। এটিও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন শেষ করে।
তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ারদরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়েছে।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল লাভেলো আইসক্রিম, মেঘনা কনডেনসড মিল্ক, জেনেক্স ইনফোসিস, এফবিএফআইএফ মিউচুয়াল ফান্ড, রহিম টেক্সটাইলস, রিংশাইন টেক্সটাইলস ও সায়হাম কটন মিলস।
এসব কোম্পানির শেয়ারদর ৪.৫২ শতাংশ থেকে ৬.৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
অন্যদিকে দর হারানোর শীর্ষে উঠে এসেছে কারসাজির ঘটনায় ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এক কোটি টাকার জরিমানার আদেশ আসা হামি ইন্ডাস্ট্রিজ। আগের দিনেও শেয়ার দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
দর হারানোর শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হল ফার্স্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, শাইনপুকুর সিরামিকস, ডমিনেজ স্টিলস, কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ, সোনালী পেপার, লিবরা ইনফিউশন, সোনালী লাইফ, ইবিএলএনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, ন্যাশনাল টি কোম্পানি ও পদ্মা লাইফ।