সোমবার থেকে সীমিত ও বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর লকডাউনের সরকারি সিদ্ধান্ত এলেও পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু থাকা নিয়ে ‘সংশয়’ থেকেই মূলত বিনিয়োগকারীরা রোববার শেয়ার বিক্রি করতে ছিলেন যেন মরিয়া।
এ কারণেই একদিনে সূচক কমেছে ১০০ পয়েন্টের বেশি, যা শতাংশের হিসাবে তিন মাসের সর্বোচ্চ পতন।
মার্চেন্ট ব্যাংকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকমকে বলেন, “জুন ক্লোজিংয়ের এই সময়ে কোম্পানিগুলো শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে। সেটার একটা ছোট প্রভাব আছে।
“এছাড়া একটা আতংক আজকে (রোববার) কাজ করেছে যে মার্কেট খোলা থাকবে কিনা। অনেকে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন আজকে বিক্রি করবেন, তারা বিক্রি করে দিয়েছেন।”
তবে বাজারে অনেক ক্রেতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজার এখনও শক্ত অবস্থানে আছে। আজকে বেশি বিক্রির চাপ থাকায় ক্রেতারা এক সময় চুপ করে ছিলেন। কারণ সবাইতো কমে কিনতে চায়। তাই এই ভয় যৌক্তিক নয়।”
রোববার সপ্তাহের প্রথমদিন নির্বিচারে প্রায় সব খাতের প্রায় সব শেয়ারের দাম কমলেও লেনদেন বেড়েছে দেশের দুই পুঁজবাজারে।
এদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিন থেকে ১০০ দশমিক ১১ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৯৯২ দশমিক ৭৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
এর আগে এই সূচক এর চেয়ে বেশি কমেছে গত ৩১ মার্চ। সেদিন সূচক ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছিল।
আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ৫৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট সূচক বেড়েছিল ডিএসইতে। এই উত্থান ছিল শতাংশের হিসাবে গত এক মাসের মধ্যে বেশি।
ডিএসইতে লেনদেন এদিন আগের দিনের তুলনায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বা ১৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকা বেড়েছে।
ঢাকায় এদিন ১ হাজার ৭৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়, যা আগের কর্মদিবসে ছিল ১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
রোববার দেশের প্রধান এই পুঁজিবাজারে ৮২ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
মারুফ হোসেন নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, “সামনে জুন ক্লোজিং। এছাড়া লকডাউনে বাজার খোলা থাকবে কি, থাকবে না সেটা নিয়েও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় আছে। অনেকে ভয় পেয়ে আজকে শেয়ার বিক্রি করে টাকা নগদ করে রেখেছে।
তবে কৃত্রিমভাবে দরপতন উসকে দেওয়া হয়েছে কিনা সেই সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এই সুযোগে কারসাজি করে শেয়ারের দাম কমানো হল কিনা কে জানে।”
রোববার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৪টির এবং কমেছে ৩০৬টির। অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির দর।
এদিন বস্ত্র খাত ছাড়া বাকি প্রায় সব খাতের শেয়ারের দাম কমেছে।
রোববার ব্যাংক, বীমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান,প্রকৌশল এবং ওষুধ খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমেছে।
এদিন ব্যাংক খাতের ৭৭ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে। বীমা খাতে কমেছে ৮৮ শতাংশ শেয়ারের দাম।
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ৮৭ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
বড় পতন থেকে বাদ যায়নি প্রকৌশল খাতও, ৯২ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে।
অন্যদিকে ওষুধ খাতে ৯০ শতাংশ শেয়ারের দাম কমেছে।
তবে ব্যতিক্রম ছিল বস্ত্র খাত। লকডাউন হলেও শিল্প কারখানা খোলা থাকবে- এমন সংবাদের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে এই খাতের শেয়ারগুলোতে।
প্রথম নির্বিচারে এই খাতের শেয়ারের দাম কমলেও দিন শেষে তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৩১টির দাম বেড়েছে; শতকরা হারে যা ৫৩ শতাংশ।
ঢাকার অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ১৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৮৭ দশমিক ৪৩ পয়েন্টে।
ডিএস৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১৬৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
বেক্সিমকো লিঃ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, মালেক স্পিনিং, কাট্টলি টেক্সটাইল, ম্যাকসন্স স্পিনিং, আর্গন ডেনিমস, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, ড্রাগন সোয়েটার, মতিন স্পিনিং ও লংকা-বাংলা ফাইন্যান্স।
দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
মতিন স্পিনিং, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, আর্গন ডেনিমস, জাহিন স্পিনিং, হাওয় ওয়েল টেক্সটাইল, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স, কুইন সাউথ টেক্সটাইল, জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও শাশা ডেনিমস।
দাম কমার শীর্ষ ১০টি কোম্পানি
রিপাবলিক ইন্সুরেন্স, সি পার্ল বিচ, পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্সুরেন্স, অগ্রণী ইন্সুরেন্স, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, প্রগতি ইন্সুরেন্স, এস আলম কোল্ড রোল্ড, গ্লোবাল ইন্সুরেন্স, ও সাফকো স্পিনিং।
অন্যদিকে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৯৭ দশমিক ৩৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭ হাজার ৩৫৯ দশমিক ৮৭ পয়েন্টে।
ডিএসইর মত এই বাজারেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ১৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ বা ১২৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বেড়েছে।
মোট ২১৪ কোটি ৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের দিন ছিল ৮৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
সিএসইতে ৩১১টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৫৮টির, কমেছে ২৪১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১২টির দর।
আরও পড়ুন