শনিবার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তিনি সামনে আনেন।
তিনি বলেন, “কিছুদিন আগে ওয়লটনকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ওয়ালটনের মাত্র ১ শতাংশ শেয়ার বাজারে ছাড়া হয়েছে। ৯৯ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তাদের হাতে রয়ে গেছে।
“এর ফলে যেটা হয়েছে, ওয়ালটন হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার মূলধনের কোম্পানি হয়ে গেছে। এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে কিনা আমি জানি না। কিন্তু এটা কিন্তু একটা ভুল বার্তা দিচ্ছে।”
প্রযুক্তি খাতের দেশীয় কোম্পানি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলেছে।
২০২০ সালের শুরুর দিকে এ কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেয়েছিল। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ওয়ালটন হাই-টেক এর শেয়ারের দাম ঠিক হয়।
নিলামে অংশগ্রহণকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার পান ৩১৫ টাকায়। আর সাধারণ বিনিয়েগকারীদের জন্য দাম ঠিক হয় ২৫২ টাকা।
ওয়ালটনের শেয়ারের প্রথম লেনদেন হয় ২৩ সেপ্টেম্বর। সেদিন থেকে প্রতিদিনই দামের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করছে এ কোম্পানির শেয়ার।
অর্থাৎ, একটি শেয়ারের দাম একদিনে সর্বোচ্চ যত বাড়লে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়, প্রতিদিন ততটাই বেড়েছে ওয়ালটনের শেয়ারের দাম। রোবরার ওয়ালটনের শেয়ার পুঁজিবাজরে বিক্রি হচ্ছিল ৮৭৪ টাকা ৮০ পয়সায়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এক শতাংশের কম শেয়ার ছেড়েছে পুঁজিবাজারে। চাহিদার তুলনায় শেয়ারের যোগন কম থাকার কারণেই ওয়ালটনের দাম টানা বাড়ছে বলে বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকের ধারণা।
বিএসইসির সংবাদ সম্মেলনে সালমান এফ রহমান বলেন, “আমাকে অনেক কোম্পানি বলেছে, তারা জানত যে ৫০ শাতংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের দিতে হবে, সেজন্য তারা পুঁজিবাজারে যেতে চায়নি। কিন্তু ১ শতাংশ শেয়ার দিয়ে যদি যাওয়া যায়, তাহলে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি আছে, যারা পুঁজিবাজারে চলে আসত।”
এর জবাবে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, “ওয়ালটনের বিডিংসহ সব কিছু শেষ হয়ে গিয়েছিল আমরা যোগদান করার আগেই। আমাদের যতটুকু করণীয় ছিল ততটুকু আমরা করতে পেরেছি, আমরা ২০ শতাংশ কম দামে এই শেয়ার বিনিয়োগকারীদের জন্য দিয়েছি।
“আরেকটু সময় পলে ব্যাপারটা আমরা আরেকটু ভালো করে দেখে করতে পারতাম। তবে আমরা এখন খেয়াল করছি, যাতে এ রকম কিছু আর ভাবিষ্যতে না হয়। এখনো আমরা চিন্তা করছি যেন এটা আমাদের বাজারের জন্য ক্ষতিকর কিছু না হয়।”
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান বলেন, এক থেকে তিন বছর ধরে যেসব আইপিওর আবেদন পড়ে ছিল, সেগুলোর বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত দেওয়ার কাজ শেষ করে এনেছেন।
“আর দুয়েকটি মনে হয় আছে, সেগুলোকে ছেড়ে দিয়ে আমরা আমাদের সময়ে আসা প্রথম আইপিও নিয়ে কাজ করব। আগে যে গুলোছিল সেগুলোর ব্যাপারে যতটুকু সম্ভব আমাদের বিচার বিবেচনা দিয়ে আমরা কাজ করেছি।
“তারপরেও আমাদের কমিশনে যারা আছে তারাওতো মানুষ, তাদের ছোটখাটো দুয়েকটা ভুল-ত্রুটি হতে পারে। কোনোটাই কিন্তু ইচ্ছাকৃত না এবং আমরা আমাদের নিজেদের বিবেকের জবাবদিহিতা রেখে কাজ করছি।”
পুঁজিবাজারে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ৯৯ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে।
এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে দশমিক ৪৬ শতাংশ, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার আছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরান হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের সংখ্যা আগে থেকে নির্ধারণের সুযোগ নেই।
“বাংলাদেশে দুই পদ্ধতিতে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে পারে। একটি হচ্ছে ফিক্সড প্রাইস মেথড। এই ক্ষেত্রে বিএসইসি শেয়ারের দাম ঠিক করে দেয়। কী পরিমাণ শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে তা তখনই ঠিক করা হয়।
“আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে বুক বিল্ডিং মেথড। এক্ষেত্রে যে কোম্পানি টাকা তুলবে তারা কী পরিমাণ টাকা তুলবে সেটা বলে দেয়। এই শেয়ারের দাম ঠিক করেন প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। আর কী পরিমাণ শেয়ার বাজারে ছাড়া হবে সেটা নির্ধারিত হয় শেয়ারর দামের ওপরে।”
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ মোট মুনাফা করেছে ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৩০২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ৬ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা।
ওয়ালটনের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। গ্রামীণ ফোনের বাজার মূলধন সবচেয়ে বেশি, ৪৪ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা।