মহামারীতে বড় ধাক্কা খেল বাটা সু

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বড় বিক্রির পরিকল্পনা থেকে জুতা তৈরি করে জমিয়ে রেখেছিলে বাটা সু কোম্পানি।

ফারহান ফেরদৌস নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2020, 12:21 PM
Updated : 28 July 2020, 12:26 PM

কিন্তু হঠাৎ ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ জুতার প্রস্তুতকারক কোম্পানিটিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে।

পুঁজিবাজারে চামড়া খাতে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক এই কোম্পানি মহামারীর মধ্যে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে; ব্যাপক লোকসানের সঙ্গে কোম্পানির নগদ প্রবাহ ঋণাত্মকে নেমেছে।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির আর্থিক বিবরণীর যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি হিসাব বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বাটা সু কোম্পানি শেয়ারপ্রতি ৫৩ টাকা ৭৪ পয়সা লোকসান করেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে কোম্পানির ১৫ টাকা ৮৫ পয়সা মুনাফা হয়েছিল।

বছরের প্রথম ছয় মাসে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫১ টাকা ৬৭ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময় ১৯ টাকা ১১ পয়সা মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি।

দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে বাটা সু কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ কমে ঋণাত্মক ৫ টাকা ৮৫ পয়সায় নেমেছে, যেখানে আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল ৪৩ টাকা ৪৮ পয়সা।

লোকসানের কারণ ব্যাখ্যা করে বাটা সু বলছে, বরাবরের মতো এবারের ঈদুল ফিতর সামনে রেখেও তাদের বড় বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিক্রি হয়নি বললেই চলে। এই কারণে রাজস্ব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আর ঈদে বিক্রির জন্য এবছরের শুরু থেকে প্রচুর পরিমাণে পণ্য তৈরি করে গুদামজাত করে রাখছিল কোম্পানিটি। কিন্তু ব্যাপক পরিমাণ পণ্য অবিক্রিত থাকায় নগদ প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে রোজা শেষে ঈদ হয়েছিল ২৫ মে। সে হিসেবে বাটা সু কোম্পানির দ্বিতীয় প্রান্তিক ছিল ঈদের মৌসুম। সে সময়টাতেই মহামারী আঘাত নেমেছে কোম্পানির উপর।

বাটা সু বলছে, সারা বছরে যে বিক্রি হয় তার ২৫ শতাংশ আসে রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে। ভাল মানের ও বেশি দামের পণ্যগুলো এসময় বিক্রি হয়। ফলে লাভও থাকে অনেক বেশি।

কিন্তু এবার এপ্রিল-জুন সময়ে (দ্বিতীয় প্রান্তিক) যে বিক্রি পরিমাণ বিক্রি হয় তা গত বছরের এই সময়ে বিক্রির মাত্র ১৫ শতাংশ। বিক্রি নগন্য হলেও এসময়ে স্থায়ী খাতগুলোর জন্য যথারীতি ব্যয় হয়েছে; বাড়তি জুতা তৈরির জন্য বাড়তি মজুরি দিতে হয়েছে। কিন্তু বিক্রি কম হওয়ায় খরচের টাকা উঠে আসেনি; ফলে কোম্পানি লোকসানে চলে গিয়েছে।

বাটা সু বলছে, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে নগদ অর্থের ঘাটতির কারণে তাদের শেয়ার প্রতি নগদ প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে গেছে। অর্থাত্ কোম্পানি যে পরিমাণ নগদ টাকা খরচ করেছে, তার তুলনায় অনেক কম নগদ টাকা রোজগার করতে পেরেছে।

মঙ্গলবার বাটা সু কোম্পানির মাত্র ১৩৬টি শেয়ার ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়। কোম্পানিটির সোমবারের সমাপনী দর ছিল ৬৯৩ টাকা ২০ পয়সা। সে হিসেবে শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত আছে।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম ছয় মাস (জানুয়ারি-জুন) শেষে বাটা সু কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩১৩ টাকায়, যা আগের বছর ছিল ৩৬৫ টাকা।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালে মুনাফা করে ১০৪ কোটি টাকা, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় প্রতি শেয়ারে নগদ ৩৩ টাকা।

২০১৭ সালে মুনাফা করে ১১৫ কোটি টাকা, বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় প্রতি শেয়ারে নগদ ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা।

২০১৮ সালে মুনাফা করে ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় প্রতি শেয়ারে নগদ ৩৩ টাকা ৫০ পয়সা।

২০১৯ সালে মুনাফা করে ৪৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয় প্রতি শেয়ারে নগদ ১২ টাকা ৫০ পয়সা।

বাটা সু’র এককোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার শেয়ার তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে ৭০ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ শেয়ার। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ শেয়ার।

কোম্পানির ওয়বসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাটা সু কোম্পানি বাংলাদেশে ১৯৬২ সাল কারখানা স্থাপন করে। এখন টঙ্গী ও ধামরাইয়ে দুটি কারখানা আছে।

দুটি কারখানায় প্রতিদিন ১ লাখ ৬০ হাজার জোড়া জুতা তৈরির সক্ষমতা আছে। বাটা সু কোম্পানি প্রতিবছর বাংলাদেশে ৩ কোটি জোড়া জুতা বিক্রি করে।

বহুজাতিক কোম্পানিটির ২০টি দেশে ২৭টি কারখানা আছে। মোট ৭০টি দেশে ৫ হাজার দোকান আছে।

কোম্পানিতে মোট ৩০ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত আছে। প্রতিদিন তারা ১০ লাখ গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রি করে।