হাই কোর্টের রায় আপিলে স্থগিত হওয়ার পর এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধে বিএসইসির নেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিতের আপিলে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
Published : 01 Mar 2016, 04:28 PM
দুই ফান্ড বন্ধে ১৪ দিন সময় বেঁধে দিয়ে ১৭ ফেব্রুয়ারি নেওয়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে এক ইউনিট হোল্ডারের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাচ সদস্যের বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
এর ফলে এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড অবসায়নে আইনগত কোনো বাধা নেই বলে আদেশের ব্যাখ্যায় বলেছেন বিএসইসির কৌসুঁলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
তবে তার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ানের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএসসিইর আপিল শুনানির জন্য ২৯ মার্চ দিন ধার্য রয়েছে। এ অবস্থায় অবসায়নের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সমীচীন হবে না।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ক্লোজড-এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বিষয়ে ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) নির্বাহী আদেশে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বলা হয়, ক্লোজ এন্ড মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর এবং যেসব ফান্ডের মেয়াদ এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে তা অবিলম্বে অবসায়ন করতে হবে।
এই আদেশের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ২৯ জুন বিএসইসি এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওই নির্বাহী আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের অন্যতম ইউনিটহোল্ডার আলী জামান গত বছরের সেপ্টেম্বরে রিট আবেদন করে। আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১৫ ডিসেম্বর হাই কোর্ট রায় দেয়।
রায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এতে স্থগিতাদেশ চেয়ে বিএসইসি চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন নিয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ ডিসেম্বর অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি এ বিষয়ে উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়ে আবেদন নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়।
বিএসইসি, ব্র্যাক ব্যাংক ও বাংলাদেশ জেনারেল ইনসুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিজিআইসি) করা তিনটি আবেদন ১৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে।
ওইদিন আপিল বিভাগ পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) দায়ের করতে বলে।
এর মধ্যে এইমস ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বিএসইসির করা লিভ টু আপিলে বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করে দুটি ফান্ডের ইউনিটধারী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এসব আবেদন ১১ ফেব্রুয়ারি তালিকায় ওঠে।
নির্ধারিত দিনে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ বিএসইসিকে আপিলের অনুমতি দিয়ে হাই কোর্টের ওই রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে ২৯ মার্চ আপিল শুনানির দিন রাখে।
এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি বিএসইসি এক সিদ্ধান্তে ১৪ দিন সময় বেঁধে দিয়ে ওই দুই মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করতে বলে।
এই সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে রিট আবেদনকারী আলী জামান ২৯ ফেব্রুয়ারি চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন নিয়ে যায়। চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি মঙ্গলবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠালে তাতে এই আদেশ আসে।
এদিন আদালতে বিএসইসির পক্ষে ছিলেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল একরামুল হক টুটুল। হাই কোর্টে রিট আবেদনকারী আলী জামানের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
ব্র্যাক ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন। এইমস ওয়ানের ও গ্রামীণের পক্ষে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।