জীবন বীমার দাপট, ফের হাজার কোটির ঘরে লেনদেন

৩১০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে জীবন বীমা খাতে। ১৫টি কোম্পানিরই শেয়ারদর বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2023, 10:12 AM
Updated : 8 June 2023, 10:12 AM

একদিন পরেই পুঁজিবাজারের লেনদেন আবার হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়াল। আর সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে দেখা গেল জীবন বীমা খাতের দাপট।

মূলধনী আয়ে করারোপ নিয়ে বিভ্রান্তির জেরে মঙ্গলবার বড় দরপতনের পরদিন সূচক ঘুরে দাঁড়ালেও লেনদেন নেমে আসে সাতশ কোটির ঘরে। তবে বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে আবার তা এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এদিন সাধারণ সূচক বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট। এ নিয়ে মঙ্গলবার ৪০ পয়েন্ট হারানোর পর দুই দিনে বাড়ল ৩৫ পয়েন্ট।

পুঁজিবাজারে এদিন যে লেনদেন হয়েছে, তার ৩১ শতাংশেরও বেশি হয়েছে জীবন বীমা খাতের ১৫ কোম্পানিতে।

৩১০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে এ খাতে। প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের দরই বেড়েছে।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এমন ১২টি কোম্পানির মধ্যে নয়টিই এ খাতের। এর মধ্যে ৫টি কোম্পানির দর বেড়েছে যতটা বাড়া সম্ভব ততটাই। আরও একটির দর বেড়েছে সার্কিট ব্রেকারের কাছাকাছি, ৯.৮৮ শতাংশ।

আরও একটির দর ৮ শতাংশের বেশি, একটির দর ৭ শতাংশের বেশি, দুটির দর ৬ শতাংশের, একটির দর ৫ শতাংশের বেশি, তিনটির দর তিন শতাংশের বেশি এবং একটির দর বেড়েছে দুই শতাংশের বেশি।

গত এক মাস ধরে লেনদেনে বীমা খাতের দাপট দেখা যাচ্ছে পুঁজিবাজারে। শুরুতে সাধারণ বীমার লেনদেন বেশি হলেও ইদানিং জীবন বীমায় হচ্ছে সিংহভাগ। তবে এত বেশি লেনদেন এর আগে দেখা যায়নি।

এদিন সাধারণ বীমা খাতের ৪২টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ শতাংশের কিছু বেশি।

এই খাতে যত কোম্পানির দর বেড়েছে, কমেছে তার চেয়ে বেশি সংখ্যায়। আটটির দর বৃদ্ধি, তিনটির অপরিবর্তিত থাকা আর ৩০টির দরপতনের মধ্যে একটির লেনদেন হয়নি।

বীমা খাতে সব মিলিয়ে মোট লেনদেনের হয়েছে ৩৮ শতাংশ।

এর বাইরে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ১১ শতাংশের বেশি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে সাড়ে ৮ শতাংশ, তথ্য প্রযুক্তি খাতে সোয়া আট শতাংশ, জ্বালানি খাতে পৌনে সাত শতাংশ, প্রকৌশল খাতে পৌনে ৬ শতাংশ, বস্ত্র খাতে প্রায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ লেনদেন হয়েছে।

সব মিলিয়ে বেড়েছে ৮২টি কোম্পানির দর, কমেছে ৯৭টির আর ১৬৬টি কোম্পানি আগের দিনের দরে হাতবদল হয়েছে।

লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, যা আগের দিন ছিল ৭৮২ কোটি ৮০ লাখ।

কারসাজির আশঙ্কা বিশ্লেষকের

জীবন বীমা খাতে এমন আগ্রহ আর শেয়ারদর তরতর করে বেড়ে যাওয়ার পেছনে কোনো কারসাজি থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আল আমিন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাকে একটি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এমডি বলেছিলেন, তাদের বেশ কয়েক বছরের একটি দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। কোনো একটা সার্কুলার হয়েছে, যে কারণে ব্যবসা বাড়বে।”

২০২০ সালে সাধারণ বীমা খাতে এভাবে দল বেঁধে শেয়ারদর ও লেনদেন বেড়ে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। দেড় বছরেরও কম সময়ে সে সময় কোনো কোনো কোম্পানির দর ১০ গুণ বা তার চেয়ে বেশি বেড়ে গিয়েছিল। গত দেড় বছরে আবার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে বহু কোম্পানি।

এই বিষয়টি স্মরণ করিয়ে এই পুঁজিবাজার বিশ্লেষক বলেন, “সার্কুলার কী একটা হয়েছে, সেটা হয়ত অনেকে জানত। তারপর তারা পজিশন নিয়েছে। দুটি বীমা জীবন কোম্পানির দর কয়েক দিনে দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে ফেলেছে। এখন অন্যগুলো বাড়াচ্ছে। এমনকি বীমা দাবি পূরণ করতে পারছে না বলে প্রশাসক বসানো হচ্ছে, এমন কোম্পানির শেয়ার দরও হল্টেড প্রাইসে বিক্রি হচ্ছে।”

বচেয় বেশি বাড়ল যেসব কোম্পানির দর

এই তালিকার শীর্ষে ছিল নাভানা ফার্মা। আগের দিন দর ছিল ৯৯ টাকা ২০ পয়সা। ৯ টাকা ৯০ পয়সা বাড়ার সুযোগ ছিল। ততটাই বেড়ে দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১০৯ টাকা ১০ পয়সা।

জীবন বীমা খাতের প্রগ্রেসিভ লাইফ, সোনালী লাইফ, চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ছিল এই তালিকায়।

জীবন বীমা ছাড়া আরও দুটি কোম্পানির শেয়ারদর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে লেনদেন হয়েছে। এগুলো হল ইয়াকিন পলিমার, জিকিউ বলপেন ও আরএস আরএম স্টিলস।

ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর সার্কিট ব্রেকার ছুঁয়ে ১০ পয়সা কমে লেনদেন শেষ করেছে।

আরও বাড়ল এমারেল্ডের দর

মার্চের শেষে ৩০ টাকায় লেনদেন হওয়া এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর দেড় মাস যেতে না যেতেই বেড়ে গেছে আরও একশ টাকা।

এর মাধে কোম্পানিটি পাঁচ বছর পর মুনাফায় ফেরার ঘোষণা দিয়ে ২০২২ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি ২০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। চলতি অর্থবছরে মার্চ পর্যন্ত সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৬২ পয়সা আয় করে ৫০ পয়সা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে বুধবার।

বৃহস্পতিবার সেই সংবাদ ডিএসই ও সিএসইর ওয়েবসাইটে আসে। এরপর কোম্পানিটির দর আরেক দফা লাফ দিয়ে উঠে যায় ১৩৬ টাকা ১০ পয়সায়।

২০১৪ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার তিন বছর পর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগেও কোম্পানিটির শেয়ারদর কখনও এতটা উঠেনি।

পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি কোম্পানি ধানের কুঁড়ার তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরায়। আর তিন বছরে শেয়ারদর ৮ টাকা থেকে বেড়ে উঠল ১৩০ টাকার ঘরে।

পতনের শীর্ষে সাধারণ বীমার প্রাধান্য

এই তালিকার শীর্ষ দশের ছয়টিই সাধারণ বীমা কোম্পানি।

তবে সবচেয়ে বেশি ৬.১৪ শতাংশ দর হারিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল মেট্রো স্পিনিং মিলস, যেটি দর হারিয়েছে ৫.৮১ শতাংশ।

তৃতীয় থেকে সপ্তম স্থানে থাকা পাঁচটি কোম্পানিই সাধারণ বীমার। এগুলো হলো ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স এবং এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স।

এগুলো ৫.২৬ শতাংশ থেকে ৪.২৩ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি দর হারানোর তালিকায় অন্য তিনটি কোম্পানি হলো ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স এবং সাইথউস্ট ব্যাংক।