পুঁজিবাজারে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ক্ষেত্রে অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুত দেন।
Published : 02 Sep 2024, 11:52 PM
পুঁজিবাজারে আগের বিভিন্ন অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি খুঁজে বের করতে নবগঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশন ভবনে সাংবাদিক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
অন্যদিকে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা বলছেন, স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ক্ষেত্রেও তারা স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন।
তদন্ত কমিটিতে পুঁজিবাজারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ঊর্ধ্বতনদের সদস্য করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘সেরকম পরিস্থিতিতে তদন্ত কমিটির সদস্যদের মধ্যে যার বা যাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা ছিল বা দেখা যায়, তিনি ওই কোম্পানির অনুসন্ধানের সময়ে নিজেকে বিরত রাখবেন।’’
আন্তর্জাতিকভাবেও সেই চর্চা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অনুসন্ধান কমিটির কাজের ধরন (টিওআর-টার্মস অব রেফারেন্স) ঠিক করা হয়নি। সেখানে তদন্ত কমিটির কাজের ধরন, কাজের উদ্দেশ্য, সদস্যদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা ঠিক করা হবে।’’
প্রতি কোম্পানির জন্য সদস্যদের মধ্যে থেকে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হবে, না কি সবাই একসঙ্গে প্রতিবেদন দেবেন জানতে চাইলে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আমরা শুধু কমিটি গঠন করলাম। এখন কাজের ব্যপ্তি ও কমিটি কীভাবে কাজগুলো করবে তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। একজন করবেন, না কি কোম্পানি ভেদে পৃথক কমিটি কাজ করবে তা ঠিক করা হবে।’’
আগের দিন রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জিয়া উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়।
কমিটিতে বিএসইসির বাইরে থেকে রয়েছেন সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এইমস বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের সাবেক সদস্য শফিকুর রহমান ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জিশান হায়দার।
কমিশন থেকে নেওয়া একমাত্র সদস্য সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম।
কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে প্রথম ধাপে তালিকাভুক্ত ১১টি কোম্পানি ও বন্ডের অনুমোদন সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়ম ও শেয়ার কারসাজির বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে সবশেষ ২০১০ সালে পুঁজিবাজারের ধসের পেছনে দায়িদের বের করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, সুপারিশও কার্যকর করা হয়নি।
এবারের অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে কি না, প্রশ্নে রাশেদ মাকসুদ বলেন, ‘‘চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরে কমিশন তা প্রকাশ করবে।’’
কমিটির প্রধান জিয়া উদ্দিন আহমেদ পুঁজিবাজারের সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ভিআইপিবির চেয়ারম্যান ও পরিচালক। এ কোম্পানির বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ থাকা নিয়ে প্রশ্নে জিয়া উদ্দিন বলেন, ‘‘মালিকানার দিক দিয়ে আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা নেই, এটাই আমাদের চাওয়া। অনিয়ম হয় ব্যবস্থাপনাগত দিক দিয়ে। আমি প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ ও সম্পর্ক ছিন্ন করব। এটা করতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
‘‘আমরা সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপর আস্থা রাখতে পারেন, প্রতিবেদন পক্ষপাত দুষ্ট হবে না।’’
প্রথম ধাপে ১২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের তালিকা বাছাই প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সবচেয়ে বেশি আলোচিত কেলেঙ্কাররির ঘটনাগুলো প্রথমে অনুসন্ধান করা হবে। এরপর কমিশনের চাহিদা মত আমরা তদন্ত করব।’’
১৯৯৬ ও ২০১০ সালের পুঁজিবাজার ধসের পরে গঠিত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সাইদ এবারের অনুসন্ধন ও তদন্ত কমিটিতেও রয়েছেন। দেশের প্রথম বেসরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এইমস বাংলাদেশের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
পুঁজিবাজারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার কথা তুলে ধরে ইয়াওয়ার সাইদ বলেন, ‘‘১৯৯৯ সালের ২৯ অগাস্ট তারিখে মিউচুয়াল ফান্ড চালু করা হয় পুঁজিবাজারে। গত ২৫ বছরে ২৫ কদমও আগায়নি মিউচুয়াল ফান্ড। কেনো এটি হল, আমরা তাও বের করব।’’
২০১০ সালের ধস তদন্তে গঠিত কমিটির সুপারিশের পরও পুঁজিবাজারে কোনো উন্নয়ন হয়নি। এবারও তেমন হবে কিনা সেই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সেই প্রতিবেদনে দুইজন ব্যক্তিকে পুঁজিবাজার থেকে বের করতে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ ছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।’’
পুঁজিবাজারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কাজ করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন, তার নিশ্চয়তা কি প্রশ্নে ইয়াওয়ার সাইদ বলেন, ‘‘তখন পুঁজিবাজারে পীর-দরবেশ ছিলেন। তারাই পুঁজিবাজার চালিয়েছেন। এখন তারা না থাকলেও তাদের মুরিদ আছেন। এজন্য সৎ ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করব।’’
রাজনৈতিক সরকার না থাকায় কাউকে বাঁচানোর তাগাদা থাকবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক প্রেশার (চাপ) না থাকায় কাকে বাঁচাতে হবে, তা আসছে না। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করব। দোষীদের কীভাবে শাস্তির আওতায় আনা যায়, তার আইনি দিকটিও দেখা হবে।’’
কমিটির আরেক সদস্য শফিকুর রহমান বলেন, ‘‘এটা একটা সময় কিছু করার। ছাত্র-জনতার উত্থানের পরের সরকার গঠিত হয়েছে। এখানে কোনো চাপ থাকবে না।’’
অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য জিশান হায়দার বলেন, ‘‘কমিটির প্রতিবেদনে ফৌজদারি অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনি দিকগুলো আমি দেখব, যাতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রমাণ করা যায়।’’
কমিটিতে থাকা বিএসইসির নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টাটি করব নিরপেক্ষ তদন্ত প্রতিবেদন দিতে।’’