“ব্যাংকিং সুবিধা সচল করতে পারলেই কারখানা খোলা সম্ভব হবে। আমরা চাই এলসি করার সুযোগ দিক সরকার।”
Published : 22 Jan 2025, 06:22 PM
কাঁচামালের সংকটের কারণ দেখিয়ে কারখানা ‘লে-অফ’ করে রাখা বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড (বেক্সিমকো) সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর আল রাজি কমপ্লেক্সে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হবে।
গত ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থ্যানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোতে অস্থিরতা চলছে। শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে বন্ধ রাখা হয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কয়েকটি কারখানা।
বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস-চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা। তিনি গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর থেকে গ্রুপটির উদ্যোক্তারা একরকম আড়ালে থেকেই কোম্পানি চালাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনের কারণ জানতে চাইলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেডের মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাঁচামাল তো নেই। এলসি খুলতে পারছি না কোনো ব্যাংকে। আমরা কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে এলসি সুবিধা চালু করার দাবি জানাব সরকারের কাছে।”
তিনি বলেন, “ব্যাংকিং সুবিধা সচল করতে পারলেই কারখানা খোলা সম্ভব হবে। আমরা চাই এলসি করার সুযোগ দিক সরকার।”
জানুয়ারির ৩০ তারিখ পর্যন্ত লে-অফ ঘোষণা করা আছে বেক্সিমকো লিমিটেড। এর আগেই কারখানা খুলতে এলসি চালুর দাবি করছে তারা।
বেক্সিমকো লিমিটেড ছাড়াও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। এ দুটি কারখানার উৎপাদন সচল রয়েছে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের পুঁজিবাজারের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জেও তালিকাভুক্ত।
বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালকদের বেশিরভাগই আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকগুলো অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ থাকায় এলসি খুলতে পারছে না কোম্পানি। ব্যাংক থেকে টাকা পাওয়া বন্ধ হওয়ায় নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলো।
এ অবস্থায় বেতন না পেয়ে বেক্সিমকোর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করলে সরকার তিন মাসের বেতনের ব্যবস্থা করে দেয়। পরে বেক্সিমকো গ্রুপের প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক, কর্মচারীর কর্মসংস্থান ঠিক রাখা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অর্থনীতির স্বার্থে কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা পর্যায় থেকে একটি কমিটি করা হয়।
সেই কমিটি বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিদ্ধান্ত নেয়। মুনাফায় থাকা কোম্পানিগুলো চালানোর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয় উপদেষ্টা কমিটি। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানিতে ২৫ জন করে স্বতন্ত্র পরিচালক বসায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হন ২০০৯ সালে।
২০১৯ সালে তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত দুটি নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সালমান দেশের ব্যবসায়ী মহলেও ছিলেন প্রতাপশালী একজন।
নিজের ভাই আহমেদ সোহেল এফ রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সালমান ১৯৭২ সালে গঠন করেন বেক্সিমকো (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড), যা পরে গ্রুপ হিসেবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিভিন্ন খাতে।
ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা। কিন্তু সরকার পতনের পর এ গ্রুপের দেড় ডজন কোম্পানির ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
পুরনো খবর
সালমানের সাম্রাজ্য: কৌশলী নিয়ন্ত্রণ, ধোঁয়াশা আর ২৭৫ কোটি টাকার বিচিত্র পোর্টফোলিও