বাংলাদেশ ব্যাংক যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে ‘মার্জার অথবা পার্টনারশিপ’– এই দুই সুযোগই খোলা রাখা হয়েছে।
Published : 14 Feb 2024, 11:15 PM
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে প্রাইম ব্যাংক পিএলসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এ বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এখন দুই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ বসে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান তানজিল চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সঙ্গে আমাদের (প্রাইম ব্যাংক) ব্যবসায়িক সম্পর্কটা কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের দুটো অপশনই (সুযোগ) দিয়েছে। ব্যাংকের পর্ষদ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে, কোন অপশনে আমরা যাব।”
বাংলাদেশ ব্যাংক যে চিঠি দিয়েছে, সেখানে ‘মার্জার অথবা পার্টনারশিপ’– এই দুই বিকল্পের কথা বলা হয়েছে। প্রাইম ব্যাংক কোনটি বেছে নেবে তা ঠিক করবে পরিচালানা পর্ষদ। তবে যাই ঘটুক, তাতে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের ওপর প্রাইম ব্যাংকের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএনএম গোলাম সাব্বিরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বাংলাদেশ ব্যাংক এমন এক সময়ে এই অনুমোদন দিল, যখন দেশের ব্যাংকিং খাতে একীভূতকরণ বা মার্জারের আলোচনা তুঙ্গে।
দুই অঙ্কের ঘরে খেলাপি ঋণ নিয়ে লোকসানের বোঝা টানছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল। গত পাঁচ বছর ধরে লোকসান দেওয়ায় ২০১৮ সালের পর থেকে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি।
খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুজ এ কোম্পানি বাঁচাতে ২০২১ সালে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ঋণ বিতরণে লাগাম টানে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক কোটি টাকার উপরে ঋণ বিতরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়।
কোম্পানির অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৯ মাসে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে সাত টাকা ৩৯ পয়সা। মোট শেয়ারের বিবেচনায় কোম্পানি এ সময় লোকাসন গুনেছে ১২৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
লোকসান থেকে বের হতে না পেরে ইউনিয়ন ক্যাপিটালই এক বছর আগে প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছিল।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ইউনিয়ন ক্যাপিটাল মূল্য সংবেদনশীল তথ্য (পিএসআই) দিয়েছিল ২০২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
বিনিয়োগকারীদের জানাতে ওই পিএসআইতে বলা হয়েছিল, “প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের। যৌথ উদ্যোগে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার দুয়ারগুলো উন্মুক্ত করার চেষ্টা করা হবে এই সমঝোতার আলোকে।’’
সমঝোতা বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অনুমোদন নিয়েই এগোনোর কথা সে সময় ইউনিয়ন ক্যাপিটালের তরফ থেকে বলা হয়েছিল।
দেশের ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
ইউনিয়ন ক্যাপিটাল ও প্রাইম ব্যাংক– দুই কোম্পানিই পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত। ফলে ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বিএসইসির অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক।
নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র নিরীক্ষক দিয়ে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের সম্পদ ও দায় নিরীক্ষা করে প্রাইম ব্যাংক ব্যবসায়িক পরিকল্পনা জমা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।
আবেদন পেয়ে গত এক বছর দুই কোম্পানির আগ্রহ ও ব্যবসায়িক পরিকল্পনা মূল্যায়ণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি অনুমোদন করে।
সেই পরিকল্পনায় তিন ধরনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যার মধ্যে একটি হল, নামের স্বকীয়তা ধরে রেখে নিজ নিজ গ্রাহকদের একই ধরনের সুবিধা দেয়ার চুক্তি। এতে এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির গ্রাহক, সম্পদ ও জনবলের ব্যবহার করবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের শেয়ার কিনে পর্ষদে পরিবর্তন এনে কোম্পানি ঢেলে সাজানোর মত উদ্যোগ নিতে পারে প্রাইম ব্যাংক। তখন প্রাইম ব্যাংকের প্রযুক্তি ও ভৌত কাঠামোর মত খাত নির্দিষ্ট মাশুলের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
আর তৃতীয় প্রস্তাবে অর্থায়ন করে ইউনিয়ন ক্যাপিটালের নিয়ন্ত্রণ সাবসিডিয়ারি হিসেবে প্রাইম ব্যাংকের হাতে নেওয়ার কথা বলা হয়।