যেসব কোম্পানি অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা দেয়নি, তাদের জরিমানা করা হবে।
Published : 30 Jul 2023, 07:39 PM
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত মুনাফা নিয়ে গঠিত সিএমএসএফ সময়ের দাবি ছিল মন্তব্য করে তহবিলটির চেয়রম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেছেন, তহবিলের আইনি কাঠামো এখন পর্যন্ত যেভাবে চলছে, তাতে কোনো অংশীজন বাধা দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঘনিষ্ঠভাবে আইনি বিষয় নিয়ে নিয়মিত -আলাপ আলোচনা করছে।
কোথাও কোনো অসংগতি থাকলে তা দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঠিক করে নেবে। আইনের বিভিন্ন দিকগুলো আরও পুনবির্বেচনা করার প্রয়োজন হলে বিএসইসি তা করবে বলেও জানান তিনি।
রোববার পুঁজিবাজার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) কার্যালয়ে আয়োজিত ‘সিএমজেএফ-টক’ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোতে দীর্ঘদিন দাবিহীন পড়ে থাকা লভ্যাংশ নিয়ে ২০২১ সালে গঠন করা হয় ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ)’।
এ তহবিলের অর্থ শুধু পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড রুলস, ২০২১’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তহবিলটি বাংলাদেশে নতুন উল্লেখ করে নজিবুর বলেন, “আমরা অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছি। যত সময় যাবে তহবিল পরিচালনার নীতিমালা তত পরিশিলিত হবে, উন্নয়ন হবে।”
তহবিল পরিচালনায় স্বচ্ছতা রাখতে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও তহবিল পরিচালনায় নিত্য নতুন ধারণা পেতে অংশীজনদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সিএমএসএফ গঠন করার পরপরই তফসিলি ব্যাংকের অদাবিকৃত ডিভিডেন্ড তহবিলটিতে দেওয়ার বিরোধিতা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সিএমএসএফ এর আইনি কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ওই সময়ে।
‘দ্যা নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১’ বা সমঝোতামূলক আইনের আওতায় ব্যাংক কোম্পানি ডিভিডেন্ড বিতরণের ঘোষণা দেওয়ার পর ওই অর্থ বিনিয়োগকারী ছাড়া অন্য কাউকে দেওয়ার সুযোগ নেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ আপত্তি এখনো সুরাহ হয়নি। বিষয়টিতে কোনো অগ্রগতি আছে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে নজিবুর বলেন, “এখন যে আইনি কাঠমো রয়েছে, তা নিয়ে বাধা দিচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঘনিষ্ঠভাবে আইনি বিষয় নিয়ে নিয়মিত বসছে, আলাপ-আলোচনা করছে। কোথাও কোনো অসংগতি থাকলে তা দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ঠিক করে নেবে।”
তিন বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সম্পর্ক আগের চেয়ে বেশি আন্তরিক। আমরা আশা করছি মানি মার্কেট ও ক্যাপিটাল মার্কেটের দুই রেগুলেটর একসাথে কাজ করতে পারবে।।”
তহবিল গঠনের পর বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন বড় বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছিল জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, “আমরা শুরু থেকেই সচেতন ছিলাম। আমরা সকলের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি সময়োচিত এ প্রতিষ্ঠান হওয়ার পর।”
তহবিলের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সিএমএসএফ আয় করছে। এই অর্থের ভাগ বিনিয়োগকারীরা পাবেন কি না- এ নিয়ে জানতে চাইলে নজিবুর বলেন, “এখন পর্যন্ত যে নীতিমালা আছে, সে অনুযায়ী তা পাবে না। অংশীজনরা যদি এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেন বা কোনো সিদ্ধান্ত আসে তখন তা মানা হবে।”
কোম্পানির কাছে থাকা অবণ্টিত মুনাফা সংগ্রহ করছে সিএমএসএফ। অনেক কোম্পানি এখনও তহবিলে শেয়ার ও নগদ মুনাফার অর্থ জমা দেয়নি। গত ৩০ জুন ছিল এ ডিভিডেন্ড জমা দেওয়ার শেষ সময়।
যারা ডিভিডেন্ড জমা দেয়নি তাদের আড়াই শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির নিরীক্ষা কার্যক্রম চালাবে বিএসইসি। নিরীক্ষা শেষে ডিডিভেন্ড জমা না দেওয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে না দেওয়া মোট ডিভিডেন্ডের উপর জরিমানা আরোপ করা হবে।
তিনি বলেন, “কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য যথাযথভাবে দিয়েছে কিনা, সেটা যাছাইয়ে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি কোম্পানিকে আমরা অডিট করব। আগামী ৩০ জুনের পর যদি কেউ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেয় তাদেরকে জরিমানা করা করা হবে।”
তহবিল গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এক হাজার ১৭০ জন বিনিয়োগকারীকে অবণ্টিত মুনাফা বুঝিয়ে দিয়েছে সিএমএসএফ। এ তথ্য জানিয়ে নজিবুর রহমান বলেন, এর মধ্যে নগদ অর্থ পেয়েছেন প্রায় ৮০০ জন এবং শেয়ার পেয়েছেন ৩৭০ জন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক এ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সিএমএসএফ তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, এর মধ্যে নগদ ৫৬০ কোটি টাকা। রাইট শেয়ার ও শেয়ায়ের বাজার মূল্য ৭১০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, “আগামী দিনের সুন্দর পুঁজিবাজারের জন্যই আমরা সবাই কাজ করছি, হয়ত তার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমরা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নয়নে ইটিএফ চালু করতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমাদের কাছে ৩টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। আমরা আলাপ-আলোচনা করে এটি চালু করতে কাজ করছি।”
সাবেক এ মুখ্য সচিব বলেন, “আমরা সিএমজেএফ-সিএমএসএফ বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি। আশা করছি সিএমজেএফর সহযোগিতায় এই কাজ দ্রুত করতে পারব।”
সিএমজেএফ সভাপতি জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে সংলাপটির সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ কী?
কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা তাদের ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীদের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নগদ লভ্যাংশ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। স্টক লভ্যাংশ জমা হয় তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে।
যাদের নামে শেয়ার, তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে, কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।
এমন ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়।
বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে তার মনোনীত উত্তরাধিকারও সেই টাকা বা শেয়ার আর দাবি করেন না।
এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছায় না অনেক সময়। তখন কোম্পানি ওইসব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।
সিডিবিএল হিসাবে থাকা ওইরকম ৩ হাজার ৩১৫টি সাসপেন্ডেড হিসাবে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশের তথ্য মিলেছিল।